করোনা নির্মূলের আরো সহজ প্রতিকার হাতের নাগালে!
করোনা নির্মূলের আরো সহজ প্রতিকার হাতের নাগালে! - ছবি : সংগৃহীত
শুধু ভ্যাকসিন নয়। করোনা নির্মূলে আরো কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে অতিবেগুনি রশ্মিও। মহামারির হাত থেকে বাঁচাতে এমনই বিকল্প রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন একদল মার্কিন গবেষক। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঝক্কি নেই। টিকা প্রয়োগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তার চেয়েও বড় কথা, প্রচুর টাকা খরচের বালাই নেই। শুধু প্রয়োজন আল্ট্রাভায়োলেট আলোর একটু স্পর্শ। আর তাতেই ‘বিষ দাঁত’ ভেঙে কুপোকাত হবে করোনা। ডাক্তারি শাস্ত্রের ভাষায়, এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে, ‘ইউভি রেডিয়েশন’। বিশেষ মাত্রায় প্রয়োগে দুর্দান্ত সাফল্যও মিলছে। জব্দ হচ্ছে কোভিড-১৯। গবেষকদের দাবি এমনটাই।
আমজনতার মনে অতিবেগুনি রশ্মি নিয়ে ভীতি রয়েছে। তবে করোনা চিকিৎসায় তার প্রয়োগে ভয় নেই। সাফ জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, এই আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি পুরোপুরি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। এমনকী মানবদেহের ত্বকে সামান্য প্রভাবটুকুও ফেলবে না। অদৃশ্য শত্রুকে আড়ালে থেকে খতম করতে রীতিমতো পারদর্শী এই রশ্মি। নয়া গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ইনফেকশন কন্ট্রোল’।
ইউভি রেডিয়েশন চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন কোনো ‘টার্ম’ নয়। ভাইরাস নিকেশের কৌশল হিসেবে বহুল ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে ২২২ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির (ফার-ইউভিসি) মাধ্যমে মরশুমি সার্স ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা সম্ভব হয়েছিল। ওই ভাইরাসের সঙ্গে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের গঠনের অনেক মিলও রয়েছে। তবে করোনা চিকিৎসায় প্রথমের দিকে ইউভি রেডিয়েশন প্রয়োগে আগের ফর্মুলায় সাফল্য আসেনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি গবেষকরা। তারা আরো বেশি কার্যকর রশ্মি আবিষ্কারের দিকে মন দেন। তখনই বিস্তর কাটাছেঁড়ার পর হাতে আসে ‘আল্ট্রাভায়োলেট-সি’। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘২২২ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এই নয়া রশ্মিটি মোটেও ক্ষতিকারক নয়। তা চোখ কিংবা ত্বক—কোথাও সামান্য ক্ষত সৃষ্টি না করেই ভাইরাসকে নির্মূল করতে সক্ষম।’
গবেষকরা কেন এতটা নিশ্চিত? তারা জানিয়েছেন, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই অতিবেগুনি রশ্মির বাড়তি কার্যকারিতার বিষয়টি নজরে আসে। গবেষণার কাজে তারা বেছে নেন করোনা ভাইরাসযুক্ত ১০০ মাইক্রোলিটার সলিউশন। সেই সঙ্গে ৯ সেন্টিমিটারের স্টেরিল পলিস্টাইরিন প্লেট। প্রথমে তরল পদার্থটিকে বিশেষ বায়োসেফটি ক্যাবিনেটে রাখা হয়। সেটিকে শুকনো করা হয় ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়। শেষ ধাপে প্লেটের ২৪ সেন্টিমিটার উঁচুতে ইউভি-সি ল্যাম্পের মাধ্যমে রেডিয়েশন চালু করেন গবেষকরা।
পরীক্ষার ফলাফল দেখেই তাজ্জব তারা! দেখা যায়, মাত্র ২২ সেকেন্ডের রশ্মি বিকিরণেই পাত্রের ৯৯.৭ শতাংশ কোভিড ভাইরাস ধ্বংস হয়ে গেছে! গবেষকরা নিশ্চিত, এই অতিবেগুনি রশ্মিটি কোনওভাবেই মানুষের কোষে কু-প্রভাব ফেলতে ফেলতে পারে না। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর আগে তারা আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে চাইছেন।
কারণ, ল্যাবের চার দেয়ালের পরীক্ষাই যথেষ্ট নয়। রেডিয়েশনের কার্যকারিতা মানুষের দেহে কতটা ছাপ ফেলছে, সেটাও হাতেনাতে যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। সেই পরীক্ষায় সফল হলেই কোভিড নিরাময়ের নয়া রাস্তার পথ পুরোপুরি খুলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই আশাতেই যতটা দ্রুত সম্ভব কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন গবেষকরা।
সূত্র : বর্তমান