আফগান দুঃস্বপ্নে ভারত

সালমান রাফি শেখ | Sep 21, 2020 06:31 pm
আফগান দুঃস্বপ্নে ভারত

আফগান দুঃস্বপ্নে ভারত - ছবি সংগৃহীত

 

সম্প্রতি শুরু হওয়া আন্তঃআফগান আলোচনায় ভারত তড়িঘড়ি করে অংশ নিলেও তাতে চূড়ান্ত ফলাফলের কোন হেরফের হবে না। এর একটি কারণ হলো, আফগানিস্তানে ভারতের প্রধান মিত্র কাবুল সরকার ইতোমধ্যে স্বীকার করে নিয়েছে যে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো তালিবান।

এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় ভারত ও কাবুলের শাসকরা ঐক্যবদ্ধভাবে তালিবানদের রাজনীতিতে ফেরার বিরোধিতা করেছে। কাবুল এখন আনুষ্ঠানিক আলোচনা করছে তালিবানের সঙ্গে। এর মানে হলো আফগানিস্তানে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, যাতে ইতিবাচক সাড়া না দিয়ে ভারত আর পারছে না। তাদেরকে অবশ্যই তালিবানদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।

আলোচনার ব্যাপারে ভারতকে আস্থায় আনতে গত মে মাসে জালমি খালিলজাদ যখন নয়াদিল্লী সফর করেছিলেন তখনো ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন যে এসব আলোচনায় কোন ফল হবে না। ভারতের হিসাবে, তালিবানরা এতটাই একগুয়ে ও যুদ্ধ-পরিপক্ক যে তারা কূটনীতি ও আলোচনার ধার ধারে না। তারা পাকিস্তানের প্রক্সি মাত্র। তাদের স্বাধীন কোন বক্তব্য নেই।

মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত যে বার্তা দেয় তা মূলত পাকিস্তান-কেন্দ্রিক এবং বলা হয় যে “আফগানিস্তানে স্থায়ী ও টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে হলে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় ও অভ্যয়ারণ্যগুলো বিনাশ করা জরুরি।”

এখন ভারত বুঝতে পারছে যে এতদিন তারা ভুল হিসাব কষেছে। অনাহূত হয়ে পরার ভয় থেকে কঠোরভাবে বিযুক্ত থাকার পর তারা এখন শান্তি আলোচনার ‘একনিষ্ঠ সমর্থক’ হয়ে গেছে।

তালিবানের সামরিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরিবর্তন বিবেচনা করলে গত কয়েক মাসে আফগানিস্তানে কোন বস্তুগত পরিবর্তন হয়নি। গত মে মাসে ভারত যেসব দাবি করেছিলো তার একটিও পূরণ হয়নি। তাহলে হঠাৎ করে ভারতের পুরো উল্টা দিকে মুখ ফেরানের ব্যাখ্যা কি? এটা কি লাদাখে চীনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার সময়ে ওয়াশিংটনের সমর্থন আদায়ের কৌশল?

‘শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ একটি পক্ষ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভারত তার আঞ্চলিক বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে চাচ্ছে বলে মনে হয়। এটা করে তারা অতীতে আফগান শান্তি বিনষ্টকারীর ভূমিকাতেও প্রলেপ দিতে চাচ্ছে। তা নাহলে বর্তমান আন্ত:আফগান আলোচনার ভিত্তি যে যুক্তরাষ্ট্র-তালিবান চুক্তি, তাতে কাবুলের চেয়ে তালিবানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আগেই এই কথা উল্লেখ করে দ্রুত প্রক্রিয়াটি থেকে দূরে থাকার পথ বেছে নেন ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা।

প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা যায়, ভারতের আগের অবস্থান যদি হয় একটি ‘আফগান নেতৃত্বাধিন, আফগান মালিকানাধিন ও আফগান নিয়ন্ত্রিত শান্তি ও সমঝোতা প্রক্রিয়া’, তাহলে বর্তমান প্রক্রিয়াটি, যদিও একে আন্ত:আফগান বলা হচ্ছে, এটা মূলত আকৃতি পেয়েছে ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দ্বারা।

বিবেচনা করুন : যুক্তরাষ্ট্র-তালিবান চুক্তির পক্ষ না হয়েও কাবুলকে তালিবান বন্দিদের মুক্তি দিতে হয়েছে। এসব বন্দিকে মুক্তিদানের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা তাদের ছিলো না। এদের অনেকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিলো।

কাবুল প্রথমে যখন বন্দি মুক্তি দেবেনা বলেছিলো তখন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য বন্ধ করার হুমকি দেয়। অন্যদিকে পাকিস্তান কাবুলের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা চালিয়ে যায়, তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তালিবানকে গ্রহণ করে নেয়াই অনিবার্যতা। এই প্রক্রিয়াটি যদি আসলেই ‘আফগান নিয়ন্ত্রিত’ হতো তাহলে বন্দি মুক্তির প্রশ্নটি অন্যরকম হতো।

কিন্তু যে সরকার সামরিক ও আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল তার পক্ষে স্বাধীন কোন মত দেয়া সম্ভব নয়। আর, ভারতের অবস্থা সবসময় ছিলো মাঠের বাস্তবতা সম্পর্কে অবাস্তব উপলব্ধিতে পরিপূর্ণ। কাবুলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি তারা অবমূল্যায়ন করেছে।

ভারতের অবস্থান চালিত হয় এমন বিশ্বাস দ্বারা যে আফগানিস্তানের যুদ্ধ কখনো শেষ হবে না অথবা এই অবসানের চিন্তাটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবাস্তব কল্পনা মাত্র।

এখন আফগান যুদ্ধের অবসান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি দ্বিদলীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি খুবই খাঁটি কথাটি বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সবাই এই অন্তহীন যুদ্ধ নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইউরাশিয়া গ্রুপের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে শত্রুকে না হারানো পর্যন্ত আফগানিস্তানে থেকে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন ২০১৯ ও ২০২০ সালের মধ্যে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর এই সমর্থন ছিলো ৩০%, এ বছর হয়েছে ১৫%।

আরেক জরিপেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায় ১০ শতাংশের কম আমেরিকান তালিবান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির বিরোধিতা করে। ট্রাম্পের প্রায় ৬৬% সমর্থক চলমান আলোচনা ও আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী অপসারণকে সমর্থন করে। বাইডেনের ৬০% সমর্থকেরও একই অভিমত।

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা তখনই আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের গতিপথ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের সমাপ্তিটি স্পষ্টভাবে দেখা গেলো।

তবে, এই প্রক্রিয়ায় ভারতের অংশগ্রহণ অথবা এমন কোনো পথ অবলম্বন, যা একজন সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তার ভাষায় ‘জড়িত হওয়ার বিপরীতে একটি দ্ব্যর্থহীন অবস্থান’, আলোচনার ফলাফলে আদৌ কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তালিবান এখনো কোনো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি। তারা সামরিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আরো বেশি করে আফগান ভূখণ্ড তাদের নিয়ন্ত্রণে আনছে। আফগানিস্তানের উপর তাদের রাজনৈতিক-সামরিক প্রভাব বেড়েই চলেছে।

সূত্র : এসএএম


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us