সেরিব্রাল অ্যাটাকে দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে

সুবর্ণ বসু | Sep 20, 2020 09:55 pm
সেরিব্রাল অ্যাটাকে দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে

সেরিব্রাল অ্যাটাকে দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে - প্রতীকী ছবি

 

আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে কোনো কারণে রক্তক্ষরণ ঘটলে অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। এই কারণে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে যে ধরনের শারীরিক অবনতি দ্রুত শুরু হয়, সেটাই হলো স্ট্রোক। দেহের রক্তের মাত্র দুই শতাংশ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। কিন্তু মস্তিষ্কের কোষ অত্যন্ত সংবেদনশীল, সেই কারণে অক্সিজেন বা শর্করা সরবরাহে সমস্যা হলে দ্রুত এই কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের ওই কোষগুলো শরীরের যে-যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করত, ওই সব অংশ তাদের ক্রিয়াশীলতা হারিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।

মস্তিষ্কে আঞ্চলিকভাবে রক্তচলাচল বন্ধ হলে যে স্ট্রোক হয় তাকে ইসকেমিক স্ট্রোক এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে হওয়া স্ট্রোককে হেমারেজিক স্ট্রোক বলে। বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট এবং স্ট্রোক-বিশেষজ্ঞ ডা. জয়ন্ত রায় বললেন, “বর্তমানে স্ট্রোকের ঘটনা আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে। আগে ষাট বা তারও বেশি বয়সে এই রোগ থেকে সাবধান হতে হতো। এখন বয়স চল্লিশ পেরোলেই স্ট্রোকের আশঙ্কা তৈরি হয়। বর্তমানে বয়সের দিক থেকে আর কোনো নিম্নসীমা বা ঊর্ধ্বসীমা নেই।”

তা হলে ভয়ের কারণ কোনগুলো?

প্রথমত, পরিবর্তনযোগ্য বা মডিফায়েবল- এর মধ্যে প্রথমেই পড়ছে উচ্চ রক্তচাপ, তার পর একে একে আসছে বেশিমাত্রার কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিস, অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, ওবেসিটি বা খুব বেশি ওজন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। আর অপরিবর্তনীয় বা নন-মডিফায়েবল কারণগুলোর মধ্যে পড়ছে প্রধানত বয়স এবং পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক কারণ। এখন পরিবর্তনযোগ্য কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অনেকাংশে এই রোগের আশঙ্কা কমিয়ে আনা যায়। কারণ চিকিৎসক জয়ন্ত রায় জানালেন, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে আশি ভাগই কিন্তু পরিবর্তনযোগ্য কারণগুলোর ফলে হয়ে থাকে। সুতরাং জীবনযাত্রা বদলের মাধ্যমে স্ট্রোকের আশঙ্কা কমিয়ে আনা যায় অনেকটাই।

চিকিৎসক জয়ন্ত রায় বুঝিয়ে দিলেন, “এটা বোঝার জন্য চিকিৎসা জগতে একটি সুন্দর ছ’অক্ষরের অ্যাক্রোনিম আছে—BEFAST, এখানে বি ফর ব্যালান্স, ই ফর আই, এফ ফর ফেস, এ ফর আর্মস, এস ফর স্পিচ এবং টি ফর টাইম। দেখতে হবে, কোনো রোগীর হাঁটতে গেলে ব্যালান্স বা ভারসাম্য চলে যাচ্ছে কি না, হঠাৎ একটা চোখের দৃষ্টি চলে যাচ্ছে কি না, মুখের একটা দিক বেঁকে যাচ্ছে কি না, একটা হাতের জোর চলে যাচ্ছে কি না, কথা বলার সময় জিভ জড়িয়ে যাচ্ছে কি না। যদি এগুলোর মধ্যে কোনো এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যায়, তা হলে একদম সময় নষ্ট না করে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। যাতে চিকিৎসকদের হাত থেকে গোল্ডেন টাইম বেরিয়ে না যায়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারলে অনেক ক্ষতি আটকানো সম্ভব হয়।”

স্ট্রোকের পর প্যারালিসিস

আমাদের মস্তিষ্কে অনেক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র আছে। যেমন মোটর সেন্টার, স্পিচ সেন্টার, ভিশন সেন্টার ইত্যাদি। সেগুলোর মধ্যে স্ট্রোকের ফলে কোন অংশ কতখানি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার উপরে নির্ভর করে কোন কোন অঙ্গের ক্রিয়াশীলতা কতটা নষ্ট হবে। ছোটখাটো স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সহজেই রিকভারি সম্ভব। কিন্তু বড় স্ট্রোকের ক্ষেত্রে হয়তো প্যারালিসিস সারানো সম্ভব হয় না। তবে স্ট্রোকজনিত আংশিক পক্ষাঘাত সারিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার জন্য ঠিক ফিজ়িয়োথেরাপি এবং রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামের বিশেষ ভূমিকা থাকে।

খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার

আমাদের বাঙালি খাদ্যাভ্যাস খুব ক্ষতিকর কিছু নয়। কিন্তু অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক খাবার খাওয়ার প্রবণতা শরীরের ক্ষতি করে। ডা. জয়ন্ত রায় বললেন, “খাবারের বিষয়ে মূলত যা মনে রাখতে হবে, তা হলো টাটকা ফল, আনাজপাতি ও মাছ। এগুলোই শরীরকে অনেকটা সুস্থ রাখে। খুব স্বাস্থ্যকর ডায়েট ছাড়া চলবে না, এমন কিন্তু নয়। সে রকম মেনে চলা সকলের পক্ষে সম্ভবও নয়। বাঙালির খাবারে সর্ষের তেল থাকে। সেটা কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভাবে গ্রহণযোগ্য। এতে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা কোলেস্টেরলের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়।”

আপৎকালে মনে রাখতে হবে

শেষে কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা ধরিয়ে দিলেন ডা. জয়ন্ত রায়। ‘BEFAST’ নিয়ম অনুযায়ী কারো স্ট্রোক হয়েছে, এমন সন্দেহ হলে—

• মুখে সরবিট্রেট বা এই জাতীয় কোনো রকম ওষুধ দেবেন না। পানি বা কোনো কিছুই নয়।

• সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে ডাক্তার ডাকার মতো ঝুঁকিও নেয়ার দরকার নেই। তার আসতে দেরি হলে অবস্থার অবনতি ঘটবে।

• রোগীর যদি ডায়াবিটিস থাকে এবং বাড়িতে সুগার মাপার মেশিন থাকে, তা হলে ব্লাডসুগার চেক করে নিতে পারেন। অনেক সময়ে হাইপোগ্লাইসিমিয়া বা সুগার ফল করে যাওয়ার লক্ষণ কিন্তু হুবহু স্ট্রোকের মতোই হয়। সুগার লেভেল খুব নিচে থাকলে চিনির পানি ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে যদি রোগীর জ্ঞান থাকে, তার পর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাকি চিকিৎসা। কিন্তু সুগার লেভেলে সমস্যা না থাকলে মুখে কোনও কিছুই দেয়া যাবে না।

• অনেকে বলেন, স্ট্রোক হয়েছে, রোগীকে বসিয়ে রাখুন, শুতে দেবেন না, তা হলেই আবার স্ট্রোক হবে— এ কথা একেবারেই মিথ, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। বরং রোগীকে ধীরে ধীরে যে কোনো দিকে পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে রাখাই নিরাপদ। পাশ ফিরিয়ে শোয়ালে মুখে জমা লালা গলায় গিয়ে আটকাতে পারে না, পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

• বাড়িতে রক্তচাপ মেপে নিতে পারেন, তবে অতিরিক্ত কিছু পেলেও প্রেশারের ওষুধ খেতে যাবেন না। যত দ্রুত সম্ভব, অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে হাসপাতালে পৌঁছন।

মনে রাখবেন, এই ধরনের অ্যাটাকে সতর্ক থাকা ও তৎপরতা খুব জরুরি।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us