কোন কোন কাজ ইবাদত?
কোন কোন কাজ ইবাদত? - ছবি সংগৃহীত
ইসলামী ইবাদত বলতে আমরা দুই ধরনের কাজকে বুঝিয়ে থাকি। এক. নিরেট ইবাদত। নিরেট ইবাদত হচ্ছে এমন সব কাজ যা আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর রাসূল সা:-এর শেখানো নিয়মানুযায়ী কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে হয়। এ কাজগুলো দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্যে সাধারণত করা হয় না; তা করলে দুনিয়াবি কোনো আর্থিক ফায়দাও লাভ করা যায় না। যেমন : নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। এই চারটি কাজ ইসলামে ফরজ বলে পরিগণিত। সুতরাং একজন মুসলমানকে তা অবশ্যই আদায় করতে হয়। এ ছাড়া আরো কিছু নিরেট ইবাদতের কাজ রয়েছে। যেমন : জিকির আজকার ও দোয়া-দরুদ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি।
দুই. সব বৈধ কাজ যা সাধারণত ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা হয় না; মানব স্বভাব হিসেবে বা দুনিয়ার কোনো ফায়দা হাসিলের জন্য সাধারণত করা হয়; তবে তা আল্লাহর দেয়া বিধান ও নিয়মকানুন অনুসারে এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হলে তাও ইবাদতে পরিণত হয়; তাতেও সাওয়াব পাওয়া যায়। যেমন : ব্যবসা-বাণিজ্য একটি বৈধ কাজ। এ কাজটি যখন কেউ শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে হক হালালভাবে করে তখন তা ইবাদতে পরিণত হয়। এ কারণেই সত্যবাদী ব্যবসায়ীরা কেয়ামত দিবসে নবী সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে থাকবেন।
অনুরূপভাবে ঘুমানো একটি বৈধ কাজ। এ কাজটি যখন কেউ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সা:-এর শেখানো পদ্ধতিতে করে, আর ঘুমিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে নিজেকে রুজি রোজগার করার ও ইবাদত বান্দেগিতে ব্যস্ত রাখার উদ্দেশ্যে করে তখন তাও ইবাদতে পরিণত হয়। এ কারণেই সাহাবি মুয়াজ ইবন জাবাল বলেন, ‘আমি ঘুমাই আবার রাতে জেগেও থাকি। আমি আমার ঘুম থেকেও সেই রকম সাওয়াবের আশা করি যেমন রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা থেকে সাওয়াবের আশা করে থাকি।’ (বুখারি, খণ্ড ৫, ১৬২, হা: ৪৩৪৪; আহমদ, খণ্ড ৩২, পৃ-৪৪০, হা : ১৯৬৬৬)
অনুরূপভাবে স্ত্রী সহবাস একটি বৈধ কাজ। এ কাজটি মানুষ সাধারণত নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণের জন্য করে; তবে কেউ যখন এ কাজটি নিজেকে ও নিজের স্ত্রীকে যেনা ব্যভিচার থেকে বাঁচিয়ে রেখে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে মনোনিবেশ করার নিমিত্তে শরিয়তসম্মতভাবে বৈধ পদ্ধতিতে করে; তখন তাও ইবাদতে পরিণত হয়।
আবু যার রা: থেকে বর্ণিত। একবার রাসূল সা:-এর কিছু সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসূল ধনীরা প্রতিদান ও সাওয়াব নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেরূপ নামাজ পড়ি তারাও সেরূপ নামাজ পড়ে। আমরা যেরূপ রোজা রাখি তারাও সেরূপ রোজা রাখে। তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পদ আল্লাহর পথে সাদকাহ করে। তখন রাসূল সা: বললেন, আল্লাহ কি তোমরা সাদকাহ করতে পারো এরূপ কোনো জিনিস রাখেননি? প্রত্যেক তাসবিহতে সাদকাহর সাওয়াব আছে। প্রত্যেক তাকবিরে সাদকাহর সাওয়াব আছে। প্রত্যেক আল-হামদুলিল্লাহতে সাদকাহর সাওয়াব আছে। প্রত্যেক ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’তে সাদকাহর সাওয়াব আছে। সৎকাজের আদেশ দানে সাদকাহর সাওয়াব আছে, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করাতে সাদকাহর সাওয়াব আছে। ‘তোমাদের যৌন মিলনেও সাদকাহর সাওয়াব আছে।’ তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সা: আমাদের কেউ তার যৌন ক্ষুধা নিবারণ করে; তাতেও সে সাওয়াব পায়? তখন রাসূল সা. বলেন, তোমরা বলো তো যদি কেউ তা হারামভাবে নিবারণ করত তাতে কি তার গুনাহ হতো না? সে যেহেতু তা হালালভাবে নিবারণ করে সেজন্য সে তা থেকে সাওয়াব হয়।’ (মুসলিম, খ-২, পৃ-৬৯৭, হা:১০০৬)
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া