আল্লাহর জিকিরে যত লাভ

মো: আবদুল গণী শিব্বীর | Sep 20, 2020 01:55 pm
আল্লাহর জিকিরে যত লাভ

আল্লাহর জিকিরে যত লাভ - ছবি সংগৃহীত

 

জিকির আরবি শব্দ। শব্দটির অর্থ হলো স্মরণ করা, সংরক্ষক, উপদেশ, নামাজ, বিধান, মর্যাদা। এছাড়াও শব্দগতভাবে জিকর শব্দের মানে হলো আল্লাহকে স্মরণ করা, তাঁকে নিয়ে আলোচনা করা, সালাত পড়া বা কুরআন তেলাওয়াত করা।

পরিভাষায় জিকির বলা হয় ‘আল্লাহ তায়ালার ভয় ও ভালোবাসা হৃদয়ে সদা-সর্বদা জাগ্রত রেখে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের ঐকান্তিক কামনায় মন ও মুখে একনিষ্ঠ চিত্তে কথা-বার্তায়, কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে, চিন্তা-চেতনায় তথা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। শায়খ হুজাইফি বলেন, জিকির ও আল্লাহর স্মরণ হলো- কল্যাণের উন্মুক্ত দ্বার, শাস্তি থেকে মুক্তির মাধ্যম, পুণ্যার্জনের মহৎ পন্থা ও অমঙ্গল থেকে রক্ষার কারণ। কেননা, জিকির ফরজ-ওয়াজিব ইবাদতকে পূর্ণতা দেয়।

পবিত্র কুরআনুল কারিমের মধ্যে জিকির শব্দটি মোট ২৬৮ বার এসেছে। এর মধ্যে ১৫৪ বার শব্দটি ফে’ল (ক্রিয়া) হিসেবে ব্যবহার হয়েছে আর ১১৪ বার ইসম (বিশেষ্য) হিসেবে। মিসরের একজন বিখ্যাত গবেষক মোস্তফা ফাহমী। তিনি বলেছেন : কুরআনুল কারিমের প্রায় ১২টা সূরার মধ্যে প্রায় ৫০টি আয়াত আছে যেখানে এই ‘জিকির’-এর পরে নবী-রাসূল, অহি, পূর্ববর্তী কিতাব, উল্লেখ আছে এবং এর দ্বারা ওই কিতাবের মাধ্যমে উপদেশের কথা বলা হচ্ছে। সুতরাং ‘জিকির’ মানে হলো- এমন উপদেশ যা কিতাবের মাধ্যমে দেয়া হয়, এমন নিয়মনীতি যা কিতাবে উল্লেখ আছে।

আল্লাহর জিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রুহ আবু ওসমান নাহদী রাহ. বলেন, কুরআন মজিদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং শোকর গোজারি করো, না-শোকরি করো না। (বাকারা : ১৫২) তিনি আরোজ ইরশাদ করেন : ‘এবং যে আমার স্মরণ থেকে/বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সঙ্কীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’ (ত্বহা : ১২৪)

আল্লাহ তায়ালা বলেন : আল্লাহকে কে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো। (আনফাল : ৪৫) আল্লাহর অভিমুখী হেদায়েতপ্রাপ্ত লোক তারাই যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু চিত্ত প্রশান্ত হয়। (রাদ : ২৮) যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। (আনফাল : ২), যাদের হৃদয়ে ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে। (হজ : ৩৫), আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও জিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহর প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (আহজাব : ৩৫)

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন : ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।’ (আহজাব : ৪১)। স্মরণ করতে থাকো স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়। (আরাফ : ২০৫)। তিনি আরো ইরশাদ করেন : যারা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান জমিন সৃষ্টির বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করোনি। (আলে ইমরান : ১৯৯)। যে তাঁর পালনকর্তার নাম স্মরণ করে অতঃপর নামাজ আদায় করে। (আ’লা : ১৫)

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতেন। (সাহহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা ৪)

জিকিরের সুফল : নবী সা: ইরশাদ করেন, শয়তান আদম সন্তানের কলবে জেঁকে বসে থাকে, যখনই আল্লাহর জিকির করে ছিটকে পড়ে এবং যখনই কলবের জিকির বন্ধ থাকে সে কুমন্ত্রণা দেয়। (মুসান্নাফে আবি শায়বাহ : ৩৫৯১৯)

হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। ... ঐ ব্যক্তি, যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করেছে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে। (বুখারি, হাদি : ৬৪৭৯)

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার জিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকি। (আল্লাহর রহমত তাঁর সাথে থাকে) (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১০৯৬৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭৯২)

হজরত আবু হুরায়রা রা. ও হজরত আবু সায়ীদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে তখন ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখেন, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে নেয় এবং তাদের ওপর ছাকিনা নাজিল হয়, আর আল্লাহ তায়ালা তার নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা উল্লেখ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭০০; শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৫৩০)

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহর জিকিরের চেয়ে আজাব থেকে অধিক নাজাতদানকারী আর কোনো আমল নেই। (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদিস : ১৬৭৪৫)

লেখক : প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us