যেভাবে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো ভারতীয় ট্যাঙ্ক অর্জুন

কাইল মিজোকামি | Sep 19, 2020 08:34 am
ট্যাঙ্ক অর্জুন

ট্যাঙ্ক অর্জুন - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারত ১৯৭০-এর দশকের মধ্যভাবে পুরোপুরি নতুন, আধুনিক মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক নির্মাণের কাজ শুরু করে তার দেশের আর্মড কোরের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। এতে ফায়ারপাওয়ার, আর্মর প্রটেক্টশন ও মবিলিটির চমৎকার সমন্বয়ে ট্যাঙ্কটি হওয়ার কথা ছিল ভারতের প্রথম দেশীয়ভাবে উৎপাদিত ট্যাঙ্ক এবং সেইসাথে বিশ্বের অন্যতম সেরা। অর্জুন নামে পরিচিত ট্যাঙ্কটি ১৯৮৫ সালে সার্ভিসে আসবে বলে আস্থার সাথে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু এর বদলে অর্জন নির্মাণের ভয়াবহ রকমের দীর্ঘ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, দুটি শতকে বিস্তৃত হয়ে পড়ে এর অপেক্ষার পালা। অবশেষে প্রথমে যে সময়ের কথা বলা হয়েছিল, তার ২৬ বছর পর সেনাবাহিনী ট্যাঙ্কটি হাতে পায়। কিন্তু তারা যে ধরনের ট্যাঙ্ক চেয়েছিল, তেমন ছিল না।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্মড কোরের অস্তিত্ব রয়েছে ৭৪ বছর ধরে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও তাদের অস্তিত্ব দেখা যায়, তারা ভারতের প্রতিবেশীর সাথে প্রতিটি যুদ্ধে লড়াই করেছে। এই বাহিনলি ৬৩টি সাজোয়া রেজিমেন্ট (ব্যাটালিয়নের সমমানের) রয়েছে। এগুলো আটটি আর্মড ও মেকানাইজড ডিভিশনে বিস্তৃত এবং আরো সাতটি আর্মড ও মেকানাইজড বিগ্রেডে বিভক্ত।

ভারত নিজস্ব ট্যাঙ্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ১৯৭২ সালে। এর অল্প আগে ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছ। ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রীয় পরিচালিত ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গ্যানাইজেশনকে (ডিআরডিও) এই ট্যাঙ্ক নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। ৪০ টনি এই যানে ১০৫ মিলিমিটার কামান রয়েছে।

ডিআরডিও প্রায় পুরোপুরি ভারতীয় নক্সায় ট্যাঙ্কটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে প্রধান গান ও ইঞ্জিন বিদেশ থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরনের যান নির্মাণেল মতো প্রতিরক্ষা-শিল্প ভিত ভারতের ছিল না। সমস্যা এখানেই শেষ নয়, এর সাথে ছিল ভারতের বিশ্ববিখ্যাত আমলাতন্ত্র ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। এগুলোও ট্যাঙ্কটির অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমানে অর্জন এমকে ১ হলো ৬২ টনের ট্যাঙ্ক, এতে আছে ১২০ মিলিমিটারের গান, অত্যাধুনিক কম্পোজিট আর্মার, ১,৪০০ হর্সপাওয়ারের টার্বোচার্জড ইঞ্জিন, আধুনিক ফায়ার কন্ট্রোল ও থার্মাল সাইটস। দারুণ সব বৈশিষ্ট্য। এমন ট্যাঙ্ক অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত।

প্রথমে যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার ৩৫ বছর পর ২০০৯ সালে অর্জুন উৎপাদনের জন্য তৈরী হয়। পরীক্ষায় নানা ত্রুটি দেখা দিলেও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ১২৪টি ট্যাঙ্ক কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু কেনার দুই বছরের মধ্যে ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে দেখা যায়, ৭৫ ভাগ ট্যাঙ্কেই কারিগরি সমস্যা রয়েছে। সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়ে, এই হাতিয়ার দিয়ে যুদ্ধ করা যাবে না। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব সীমান্তে এটি কোনো কাজেই আসবে না।

অর্জুন নির্মাণে এত দেরি হয়েছে যে এর প্রধান ডিজাইন পুরোপুরি সেকেলে হয়ে পড়ে। ১০৫ মিটার গান ১৯৭০-এর দশকে খুবই ভালো ছিল। ওই সময় ন্যাটোর ট্যাঙ্কে ছিল ১০৫ মিলিমিটার গান, সোভিয়েত ইউনিয়নের টি-৬২ ট্যাঙ্কের ছিল ১১৫ মিলিমিটার গান। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে এগুলো সেকেলে হয়ে পড়ে।
আসলে খুব বেশি সময় লাগায় পুরো বিষয়টিই গোলমেলে হয়ে যায়। ট্যাঙ্কটি যখন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তারপর এটি সার্ভিসে আসার সময়ে অনেক কিছুই পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। যেমন জিপিএস নেভিগেশন, লেজার ওয়ার্নিং রিসিভার, নন-এক্সপ্লোসিব-রিঅ্যাক্টিভ আর্মর ইত্যাদি বিষয়গুলো ১৯৭৪ সালে ছিল গবেষণাপত্রে। কিন্তু ২০০০-এর দশকের শুরুতে এগুলো অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়। এগুলো যখন অর্জুনে যোগ করা হয়, তখন এর জটিলতা, ওজন ও ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

এত বিলম্বের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এ ধরনের ট্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। ডিআরডিও এখন অর্জুন এমকে ২-এর নক্সা প্রণয়নে ব্যস্ত। এটি মূল এমকে ১ থেকে অনেক উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এখন টি-৯০ ট্যাঙ্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারা ব্র্যান্ড নিউ টি-১৪ আমরাতা ট্যাঙ্কের প্রতিও আগ্রহী। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে, ভারত এখন আরমাতা ট্যাঙ্কের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তা সত্য কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সূত্র : ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us