ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা চীনে

ইয়াঙ-শেঙ ও লিউ জুয়ানজুন | Sep 18, 2020 08:45 am
রাজনাথ সিং

রাজনাথ সিং - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং মঙ্গলবার দেশের পার্লামেন্টে বক্তৃতাকালে জোর দিয়ে বলেছেন যে চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। তিনি ভারতের সাথে সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য চীনকে দায়ী করেন।

চীনা বিশেষজ্ঞরা মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে এ ধরনের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির ফলে সীমান্ত উত্তেজনা শীতকালেও গড়াতে পারে।
চীনা বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করেছেন যে রাজনাথ সিং বিশেষ করে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দার সময় পার্লামেন্ট থেকে স্থানীয় সমর্থন ও প্রতিরক্ষা বাজেট নিশ্চিত করতে চাইছেন। আর এ কারণেই তিনি স্বীকার করছেননা যে ভারতই প্রথমে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, স্থিতিবস্থা একতরফাভাবে লঙ্ঘন করেছে।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার আরো বলেন, ভারত লাদাখে চীনের সাথে বর্তমান সীমান্ত অচলাবস্থার শান্তিপূর্ণভাবে নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সাংহাই একাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের রিসার্চ ফেলো হু ঝিইয়ং মঙ্গলবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, শীত এগিয়ে আসতে থাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী মারাত্মক চাপে পড়ে গেছে। কারণ শীতকালে লজিস্টিক্যাল ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে। আর ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভারতীয় নেতারা বুঝতে পারছেন যে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে তারা সক্ষম নন।

ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস অব ইন্ডিয়ার ৩১ আগস্ট প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে ২০২০-২১ সময়কালে এপ্রিল-জুন কোয়ার্টারে ভারতের জিডিপি ২৩.৯ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্কোচনই সবচেয়ে বেশি।
হু বলেন, কিন্তু ভারতের সামরিক বাহিনী, বেশির ভাগ সৈন্যই নিম্ন বর্ণের, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে পাকিস্তানের সাথে অচলাবস্থার কারণে প্রতি বছর শত শত অযোদ্ধা হতাহতের কারণে সমস্যায় পড়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার নিম্ন বর্ণের ব্যক্তিদের জীবনের পরোয়া না করে উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছে।
নয়া দিল্লি লাদাখেও ভারতীয় সৈন্যদের মোতায়েন রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে পিপলস লিবারেশন আর্মিকেও (পিএলও) শীতকালের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে হু জানান। তিনি বলেন, ভারত যুদ্ধ করতে সাহসী হবে না, তবে ছোটখাট উস্কানি মাঝে মাঝেই হবে।

ব্লেম গেম ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস
রাজনাথ সিং পার্লামেন্টকে আশ্বাস দেন যে ভারতীয় সৈন্যরা যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত। অথচ সৈন্য ও সঙ্ঘাত এলাকার বিবেচনায় ভারত আগে যে অবস্থায় ছিল, এখন তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়েছে।

তিনি বরেন, চীনা বাহিনী সহিংস আচরণ করেছে, তারা সৈন্য ও অস্ত্র বাড়িয়েছে। তিনি সঙ্ঘাতের পয়েন্টগুলো হিসেবে পূর্ব লাদাখ, গোর্গা, কঙ্গা লা, প্যাঙগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ তীরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যকার ১৯৯৩ ও ১৯৯৬ সালের চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেন।
পরিস্থিতির সাথে পরিচিতি এক চীনা বিশেষজ্ঞ পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনাথ সিং পার্লামেন্টে বলেছেন যে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থা হবে ব্যয়বহুল, ভারতীয় করদাতাদেরকে সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করার জন্য অনেক অর্থ দিতে হবে। অথচ বাস্তবে ভারতীয় বাহিনীই অনেকবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে গুলিবর্ষণ করে, চীনা সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করে। এ কারণে ভারতীয় সামরিক নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।

সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চায়না অ্যান্ড সাউথ এশিয়া কোঅপারেশন রিসার্চ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক লিউ ঝনগি গ্লোবাল টাইমসকে মঙ্গলবার বলেন, আজ পর্যন্ত সীমান্তে চীনের চেয়ে বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে ভারত। আর ১৯৯৩ ও ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী কোনো পক্ষের সৈন্যরা বন্দুক ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু ভারতীয় সামরিক বাহিনী ৮ সেপ্টেম্বর ওই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যে যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখা গেছে, তার উৎস ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে অতিরঞ্জিত ধারণা।

চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞ ও টিভি ভাষ্যকার সং ঝনপিং মঙ্গলবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, ভারত মনে করে যে রণাঙ্গনে তাদের সৈন্য বেশি আছে, তারা অনেক বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। ফলে তারা চীনা বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ের জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, এটি একটি বিভ্রান্তি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানি ও ভারতের ঘরোয়া অন্তঃকলহ ভারতকে আসল পরিস্থিতি বুঝতে দিচ্ছে না।
সং বলেন, চীনা সামরিক বাহিনীর শক্তি অনেক বেশি। তারা অনেক বেশি সুসজ্জিত।

সূত্র : গ্লোবাল টাইমস

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us