নতুন ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় মোড়
শেখ হাসিনা ও এরগোদান - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কে বেশ নাটকীয় উন্নতি ঘটে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তুরস্কে একটি সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ওই সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকা একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
এরদোগান তখন রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল সময় পার করছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ কেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি তুরস্ককে বোঝানো হয়েছে এবং তুরস্ক সেটি অনুধাবনও করতে পেরেছে। সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান চেয়েছিলেন যত বেশি সম্ভব আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা। আর তাই তিনি বাংলাদেশে আবার রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠান। তুরস্কের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ-এর উপদেষ্টা সেলচুক কোলাগ্লু লিখেছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তুরস্কে যান। এর কিছুদিন পরে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সেলচুক কোলাগ্লু। রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর তুরস্ক দ্রুততার সাথে এগিয়ে আসে। রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পরপরই এরদোগানের স্ত্রী তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
সৌদি আরব ও তুরস্ক : বাংলাদেশ কোন দিকে
বেশ কয়েক বছর শীতল সম্পর্ক থাকার পর বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক এমন এক সময়ে উষ্ণ হয়েছে, যখন মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব নিয়ে সৌদি আরবের সাথে তুরস্কের এক ধরনের ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো বহু বছর যাবত সৌদি আরবের প্রতি অনুগত থাকলেও এরদোগান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবকে টেক্কা দিতে ইরান, তুরস্ক, কাতার এবং সিরিয়াকে নিয়ে নতুন এক মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। আবার এদের মধ্যে ইরান এবং তুরস্কের সাথে চীনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
অন্য দিকে দক্ষিণ এশিয়ায় দু’টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পাকিস্তান ভূ-রাজনীতির এক নতুন পটভূমিতে ইরান এবং তুরস্কের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভূ-রাজনীতির নতুন এই প্রেক্ষাপটে তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এই উষ্ণ সম্পর্ক কি কোনো বার্তা দিচ্ছে?
আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান মনে করেন, তুরস্কের সাথে সম্পর্ক আগের চেয়ে জোরদার হলেও তা এখনো খুব উঁচু মাত্রায় পৌঁছেনি।
‘তুরস্কের সাথে খুব উঁচু পর্যায়ের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটা আমার মনে হয় না। আমার বিবেচনার এটা একটা নরমাল রিলেশনশিপ (সাধারণ সম্পর্ক)। তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের খুব আহামরি গোছের সম্পর্ক হবে না।’
অধ্যাপক রেহমান আরো মনে করেন যে, সৌদি আরব এবং তুরস্কের মধ্যে যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে সেটি বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সৌদি আরবকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং ভবিষ্যতেও সেটা করবে। মুসলমানদের জন্য অতি পবিত্র দু’টি মসজিদ সৌদি আরবে অবস্থিত হওয়ার কারণে এ গুরুত্ব দেয়া হয়।’ সৌদি আরব মনঃক্ষুণ্ন হয়, এমন কাজ করে বাংলাদেশ কখনোই তুরস্কের দিকে ঝুঁকবে না বলে মত দেন এই বিশ্লেষক।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শহিদুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, তুরস্ক এখন তাদের প্রতিবেশীদের ছাড়াও বৈশ্বিকভাবে চিন্তা করছে। তিনি মনে করেন, তুরস্কের সাথে ভালো সম্পর্ক হলেও সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
সূত্র : বিবিসি