ইসরাইল হলো বন্ধু আর শত্রু তুরস্ক
এরদোগান ও নেতানিয়াহু - ছবি সংগৃহীত
এসব প্রক্রিয়া যখন চলমান তখন আরব লীগের সম্মেলনে ফিলিস্তিনিদের উত্থাপিত আমিরাত-ইসরাইল চুক্তির নিন্দা করে পেশ করা এক প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে পাল্টা আরব দেশগুলোতে তুরস্কের হস্তক্ষেপের বিষয় নিয়ে একটি উপকমিটি করা হয়েছে। দৃশ্যত এটি আরব ইসরাইল দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি সাব কমিটির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে বলে মনে হয়। অর্থাৎ আরব শাসকরা তাদের শত্রুর তালিকায় ইসরাইলকে স্থলাভিষিক্ত করল তুরস্ককে দিয়ে।
আরব রাজতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে বাগে আনার জন্য একটি হুমকি দরকার ছিল ইসরাইল ও তার মিত্রদের। এতদিন সেই হুমকি হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল ইরানকে। নেতানিয়াহুর দক্ষিণপন্থী সরকারের সমর্থক জেরুসালেম পোস্টে এখন নতুন সুর তুলে বলা হচ্ছে ইরান এখন আর আরব দেশগুলোর জন্য হুমকি নয়। অবরোধসহ নানা ব্যবস্থা নেয়ার কারণে ইরান দুর্বল হয়ে গেছে। এখন নতুন উদীয়মান আরব শত্রু হচ্ছে তুরস্ক। ইসরাইলি পত্রিকার এই বক্তব্য এবং আরব লীগের সম্মেলনের কার্যক্রম একই ধারায় এগিয়েছে।
তুরস্ককে টার্গেট করা হয়েছিল বেশ ক’বছর আগেই। ২০১৬ সালে এর অংশ হিসেবে এরদোগানের বিরুদ্ধে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর পর থেকে আমিরাতের ইসরাইলপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ যেখানে তুরস্ক গিয়েছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে। লিবিয়ায় এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে কার্যত আমিরাতকে ইসরাইলের সম্প্রসারিত রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। এখন মুসলিম দেশগুলোতে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার সব ধরনের কার্যক্রম মূলত পরিচালিত হচ্ছে আরব আমিরাতের মাধ্যমে।
আমিরাতের মতো একই ভূমিকায় বাদশাহ সালমানকে নামাতে ব্যর্থ হয়ে ইসরাইল এখন নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। ওয়ান ইলেভেনের ঘটনায় যুক্ত করে ২৪ প্রভাবশালী সৌদির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছাড়াও মিসর, জর্দান আর ইরাককে নিয়ে একটি ইসরাইলপন্থী ইউনিয়ন করে আরব নেতৃত্ব গ্রহণের হুমকিও দেয়া হয়েছে। বাদশাহ সালমানের ৩৫ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সব আয়োজন করলেও সিনিয়র সৌদি নীতি প্রণেতারা এটি চাইছেন না। ওয়ান ইলেভেনের বিচারের নামে সেই প্রতিবাদ রুদ্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাদশাহ সালমান হয় ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি মেনে নেবেন, অথবা তিনি ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় তরুণ পুত্রকে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেবেন।
ধারণা করা হয় যে, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মক্কা-মদিনার দুই পবিত্র মসজিদ পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও কাবা শরিফের প্রধান খতিব আবদুর রহমান সুদাইসকে দিয়ে জুমার খুতবায় ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পক্ষে কথা বলা হয়েছে। যে সুদাইস গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বর্বর হামলায় মজলুম গাজাবাসীর মুক্তির জন্য অশ্রুসিক্তভাবে হারাম শরিফে মোনাজাত করেছিলেন তিনি এখন জুমার খুতবায় ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন।
এতে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত সৌদি সিদ্ধান্তের ওপর মোহাম্মদ বিন সালমানের অবস্থান জয়ী হতে যাচ্ছে। হয়তোবা বাদশাহ সালমান কুশনার-নেতানিয়াহুর চাওয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন নয়তো সালমান অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে এমবিএস অধ্যায়ের সূচনা করার চেষ্টা হবে। বাদশাহ হওয়ার পর এমবিএসই সৌদি আরবে ইসরাইলের স্বীকৃতি ও উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। কুয়েতের আমিরও কোনোভাবেই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না বলে সেখানে এমবিএসের মতো নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে।