তুরস্ক না গ্রিস : মার্কেল কী করবেন?
মার্কেল - ছবি সংগৃহীত
জার্মানি বর্তমানে পালাক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছে এবং চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল তুরস্ক ও গ্রিসের বিরোধ নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করছেন। যদিও ইইউ তুরস্কের বিরোধিতা করে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিষয়ে সতর্ক করেছে, তবে তিনি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন।
মার্কেল যখন শান্তি আলোচনার কথা বলছেন তখন ম্যাক্রনের সম্পর্কচ্ছেদের জন্য তাড়াহুড়োকে সম্ভবত তিনি ভালো মনে করছেন না। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাশ স্পষ্ট করে তুলেছেন যে, নৌমহড়া ভালো কোনো ফল আনছে না। কর্সিকায় ছয়জন ইউরোপীয় নেতার উপস্থিতি সত্ত্বেও তুরস্ককে মোকাবেলা করার জন্য উৎসাহী বড় শক্তি ফ্রান্স একা। আর ম্যাক্রন নিজেই বিভিন্ন ধরনের সঙ্কটে রয়েছেন। তার নিজ দেশে করোনাভাইরাস উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি মহামারী মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছেন। তার অর্থনৈতিক প্রণোদনা পরিকল্পনাকে ১০০ বিলিয়ন ইউরোর (১১৮ বিলিয়ন ডলার) জুয়া হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।
বিদেশেও মোকাবেলা করার জন্য ম্যাক্রনের সামনে বিভিন্ন সঙ্কট রয়েছে : ম্যাক্রন লেবাননবাসীকে তাদের রাজনীতিবিদদের কবল থেকে উদ্ধারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা কয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য সামনে আসবে। আর মালির রাজনৈতিক উত্থান সাহেল অঞ্চলে ফ্রান্সের সন্ত্রাসবাদবিরোধী উদ্দেশ্যকে চ্যালেঞ্জ জানায়। লিবিয়ায় এরদোগানের সাথে তার দ্বন্দ্বটিও ম্যাক্রন ঠিকঠাক মতো চালিয়ে যেতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন পূর্ব ভূ-মধ্যসাগরীয় বিরোধের মধ্যে তার অলঙ্কৃত অগ্নিকুণ্ডলি বহন করতে চাইছেন। আর চ্যান্সেলরের সাথে কথা বলা থেকেও তিনি দূরে রয়েছেন। সব মিলিয়ে ম্যাক্রন কতটা সফল হবেন তাতে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে ন্যাটো মিত্র হিসেবে ছাড়তে চাইছে বলে মনে হয় না। জার্মানিও সমঝোতাই চাইছে। ফলে তুরস্ককে কন্টেইন করতে চাইলেই যে ইসরাইল, মিসর, আমিরাত, সৌদির মতো দেশগুলো সফল হবে এমনটি মনে হয় না।
নতুন মেরুকরণ কি আসন্ন?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ইসরাইলের প্রতি স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন সর্বব্যাপী চাপ সৃষ্টি করছে মুসলিম দেশগুলোর ওপর। এই চাপের কাছে অনেক আরব দেশ বেশ খানিকটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হয় যে, বাহরাইনের পর ওমান একই পথে যেতে পারে। সৌদি আরব ও সুদানের কথা বলা হলেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশ দু’টির পক্ষে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া সহজ হবে না। এর পরও সেটি ঘটলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক মেরুকরণ ঘটতে পারে।
এই মেরুকরণের একটি ফর্মুলা হামাসের দ্বিতীয় প্রধান নেতা ইরান সফরের সময় দিয়েছেন। আর তুর্কি সমর্থনপুষ্ট হামাস এবং ইরান সমর্থনপুষ্ট হিজবুল্লাহর মধ্যে সমঝোতায়ও এই মেরুকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইসরাইল উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশ ও মিত্রদের নিয়ে যত চাপ বাড়াবে তুরস্ক-ইরানের মধ্যে ঐক্য ততটা বাড়বে। এর সাথে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তানসহ আফ্রো-এশিয়ায় বেশ ক’টি মুসলিম রাষ্ট্র থাকতে পারে। এটি হলে মুসলিম বিশ্ব এমনভাবে ভাগ হবে যাতে একদিকে গণতন্ত্র চর্চার দেশগুলো এবং ব্রাদারহুডের মতো জনসমর্থিত রাজনৈতিক শক্তি থাকবে অন্য দিকে ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয়ের অধীনস্থ কয়েকটি আরব দেশ এবং তাদের প্রভাব বলয়ের রাষ্ট্রগুলো থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র এই পক্ষে থাকলে পাল্টা পক্ষে রাশিয়া-চীনের অবস্থান তৈরি হতে পারে। অবশ্য ইসরাইলকে সর্বাত্মকভাবে প্রশ্রয় দেয়ার এতটা প্রান্তিক নীতি যুক্তরাষ্ট্র নাও নিতে পারে। আর সেটি হলে ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার পথ থেকে আমেরিকা বিরতও থাকতে পারে।