নতুন মেরুকরণে কোন দেশ কোন পক্ষে
বাদশাহ সালমান ও এরদোগান - ছবি সংগৃহীত
ভূ-মধ্যসাগরে বিশেষত এর পূর্বাংশে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এক দিকে তুরস্ক ও এর মিত্র দেশগুলো আর অন্য দিকে ফ্রান্স, ইসরাইল, গ্রিস ও এর মিত্ররা বাকযুদ্ধ ও শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যেকোনো সময় দু’পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের সঙ্ঘাত শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
নতুন মেরুকরণ কি আসন্ন?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ইসরাইলের প্রতি স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন সর্বব্যাপী চাপ সৃষ্টি করছে মুসলিম দেশগুলোর ওপর। এই চাপের কাছে অনেক আরব দেশ বেশ খানিকটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হয় যে, বাহরাইনের পর ওমান একই পথে যেতে পারে। সৌদি আরব ও সুদানের কথা বলা হলেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশ দু’টির পক্ষে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া সহজ হবে না। এর পরও সেটি ঘটলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক মেরুকরণ ঘটতে পারে।
এই মেরুকরণের একটি ফর্মুলা হামাসের দ্বিতীয় প্রধান নেতা ইরান সফরের সময় দিয়েছেন। আর তুর্কি সমর্থনপুষ্ট হামাস এবং ইরান সমর্থনপুষ্ট হিজবুল্লাহর মধ্যে সমঝোতায়ও এই মেরুকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইসরাইল উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশ ও মিত্রদের নিয়ে যত চাপ বাড়াবে তুরস্ক-ইরানের মধ্যে ঐক্য ততটা বাড়বে। এর সাথে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তানসহ আফ্রো-এশিয়ায় বেশ ক’টি মুসলিম রাষ্ট্র থাকতে পারে। এটি হলে মুসলিম বিশ্ব এমনভাবে ভাগ হবে যাতে একদিকে গণতন্ত্র চর্চার দেশগুলো এবং ব্রাদারহুডের মতো জনসমর্থিত রাজনৈতিক শক্তি থাকবে অন্য দিকে ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয়ের অধীনস্থ কয়েকটি আরব দেশ এবং তাদের প্রভাব বলয়ের রাষ্ট্রগুলো থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র এই পক্ষে থাকলে পাল্টা পক্ষে রাশিয়া-চীনের অবস্থান তৈরি হতে পারে। অবশ্য ইসরাইলকে সর্বাত্মকভাবে প্রশ্রয় দেয়ার এতটা প্রান্তিক নীতি যুক্তরাষ্ট্র নাও নিতে পারে। আর সেটি হলে ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার পথ থেকে আমেরিকা বিরতও থাকতে পারে।
ভোরের আলো ফুটবেই!
মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে অমানিশা ঘনীভূত হওয়ার অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা একসময় কেটে যাবে। করোনা উত্তর সময়ে নতুন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প জয়ী হলে হয়তো কিছুটা আগ্রাসী হয়ে উঠতে চাইবেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ইসরাইলও মধ্যপ্রাচ্যে তার নিয়ন্ত্রণ সংহত করতে চাইবে। কিন্তু আমেরিকার সামনে চীন-রাশিয়ার চ্যালেঞ্জ যেমন অনেক বড়, তেমনিভাবে ইউরোপ তার উদ্যোগগুলোতে সেভাবে পাশে নাও থাকতে পারে। ফিলিস্তিনের ব্যাপারেও তাদের অবস্থান এক নয়। জার্মানি তো নয়ই এমনকি ব্রিটেনও নানা ইস্যুতে স্বতন্ত্র অবস্থান নিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আগ্রাসী অবস্থাও বেশি দিন চালাতে পারবে বলে মনে হয় না। নিজ নিজ দেশের বৈরী জনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আরব সরকারগুলো ইসরাইলের সাথে একাকার হয়ে খুব বেশিদূর যেতে পারবে বলে মনে হয় না। আরবেও নতুন একটি ঢেউ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। সেটিই হতে পারে মধ্যপ্রাচ্য বা মুসলিম বিশ্বের জন্য নতুন ভোরের আলোকরেখা।
mrkmmb@gmail.com