মোবাইল ফোনে ক্যান্সার?
মোবাইল ফোনে ক্যান্সার? - ছবি সংগৃহীত
অনেকের ধারণা মোবাইল ফোন ব্যবহারে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। ভয়ে অনেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। এ নিয়ে গবেষকদেরও আগ্রহের কমতি নেই। থেমে নেই তাদের গবেষণা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারছেন না তারা। গবেষণা থেকে জানা যায় ১৯৭০ সালের পর থেকে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। এর কারণ হিসেবে মোবাইল ফোন যে খুব বেশি দায়ী তা কিন্তু নয়। কারণ সে সময় মোবাইল ফোনের প্রচলন এতটা ছিল না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি কারণে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হয়। ফলে রোগ নির্ণয় সহজ হয়।
একটি গবেষণায় প্রায় ৪২ হাজার ব্যক্তিকে ২০ বছর ধরে ফলোআপে রাখা হয়। প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানা গেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সাথে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার আর একটি গবেষণা জানাচ্ছে যারা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের গ্লায়োমা নামে এক ধরনের মস্তিষ্কের বিনাইন টিউমার হয় কিন্তু ক্যান্সারের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের স্যালিভারি গ্লান্ড বা লালাগ্রন্থির টিউমার বেশি হয়। এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের খুব অল্প সংখ্যকেরই লালাগ্রন্থির ক্যান্সার হয়েছে। তবে এরা বেশি ধূমপান করেন বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। ধূমপান এ ক্যান্সারের জন্য দায়ী তা আগে থেকেই জানা। গবেষকরা দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার কাজ হাতে নিয়েছেন। সুখবর যে, এখন পর্যন্ত খারাপ কিছু জানা যায়নি।
তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার যে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী নয় তা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি। ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজন সময়। ধূমপান যে অনেক ক্যান্সারের জন্য দায়ী তাও বের করতে অনেকদিন লেগেছে। তাই সচেতনতার বিকল্প নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কম মোবাইল ফোন ব্যবহারের পক্ষপাতী। কানে মোবাইল না লাগিয়ে হেডফোন, লাউড স্পিকারে কথা বললে মোবাইল মস্তিষ্কের সংস্পর্শে কম সময় থাকবে।
ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপে খাবার স্যালাইন
ডা: আব্দুল হাফিজ
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শরীর পানি ও লবণ হারায়। খাওয়ার স্যালাইন সেই পানি-লবণের ঘাটতি পূরণ করে। খাবার স্যালাইনে (ওআরএস) এ নিম্নলিখিত উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে : ১. পানি, ২. সোডিয়াম, ৩. পটাশিয়াম ও ৪. গ্লুকোজ বা শর্করা।
এই সোডিয়াম (লবণ) এবং গ্লুকোজ থাকায় অনেক সময় উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীরা ডায়রিয়ায় এই খাওয়ার স্যালাইন খাবেন কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন।
কেননা উচ্চ চাপের/প্রেশারের রোগীদের লবণ কম খেতে বলা হয়। পাশাপাশি ডায়াবেটিসের রোগীদের গ্লুকোজ বা চিনি খেতেও নিষেধ করেন। কিন্তু খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেটে তো লবণ ও গ্লুকোজের মিশ্রণ থাকে।
এখানে গ্লুকোজের প্রধান কাজ অন্ত্রে এ লবণ শোষণে সাহায্য করা। প্রতি লিটার খাওয়ার স্যালাইনে গ্লুকোজের পরিমাণ ২০ গ্রামের বেশি নয় এবং এর প্রায় পুরোটাই অন্ত্রে লবণ শোষণে ব্যবহৃত হয়। তাই ডায়রিয়ায় স্যালাইন খেলে ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তে শর্করা বাড়বে এমন ধারণা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে স্যালাইন মূলত লবণের ঘাটতি পূরণ করার কাজে ভূমিকা রাখে। শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে লবণের ভারসাম্য রক্ষা করাটা খুবই জরুরি। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে আমরা প্রচুর লবণ হারাই। তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীরও ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে হবে, এতে লবণের আধিক্য হবে না বা রক্তচাপও বাড়বে না।
ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে পানি ও লবণের ঘাটতি দ্রুত পূরণ না করলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়বে, লবণের অভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়বে। পানিশূন্যতা থেকে কিডনি অকার্যকারও হতে পারে। যেসব ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগীর আগে থেকেই কিডনিতে সামান্য সমস্যা আছে, ডায়রিয়ায় তাদের আরো বেশি জটিলতা হতে পারে। তাই ডায়রিয়া হলে সবাইকেই স্যালাইন খেতে হবে। এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। ডায়াবেটিসের রোগীরা সেই সাথে বারবার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে দেখবেন ও উচ্চরক্তচাপের রোগীরা রক্তচাপ মাপবেন।