রাফালের এমন প্রদর্শনী কেন করল ভারত!
রাফালের এমন প্রদর্শনী কেন করল ভারত! - প্রতীকী ছবি
গত ১০ সেপ্টেম্বর আম্বালায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৫টি মাল্টিরোল ড্যাসাল্ট রাফাল বিমান আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্তি ঘটে। দেশ যখন ভয়াবহ দারিদ্র ও চীনের সাথে সামরিক উত্তেজনায় রয়েছে, তখন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো।
পাঁচটি দুই ইঞ্জিনের জঙ্গিবিমানের মধ্যে তিনটি ডুয়েল সিটের প্রশিক্ষণ বিমান। ২৯ জুলাই ফ্রান্স থেকে এগুলো আম্বালায় অবতরণ করে। এগুলো ভারতীয় বিমান বাহিনীর ১৭ গোল্ডেন অ্যারোস স্কোয়াড্রনে যোগ দেয়।
অন্তর্ভুক্তি অনুষ্ঠানে একটি জোড়া আসনের রাফালকে নিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি জাগুয়ার ও দুটি রুশ সুখোই সু-৩০এমকেআই জঙ্গিবিমান ‘অ্যারোহেড’ ফরমেশনে উড়ে যায়। তাদের অনুসরণ করে তেজাস ও স্যারাঙ হেলিকপ্টার টিম প্রদর্শনীতে অংশ নেয়, বর্ণালী ধোয়া ছাড়ে।
ভারতের হাতে আসা ৪.৫ জেনারেশন রাফাল ফাইটারগুলোতে ভয়াবহ দূরপাল্লার, মাঝারি পাল্লার ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একে আঞ্চলিক গেম চেঞ্জার হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্তু অনেক বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক বলেছেন, এসব বিমানের উচিত হবে রক্ষণাত্মক অবস্থানে থাকা।
অবসরপ্রাপ্ত দুই তারকা ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক অফিসার পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অন্যান্য যুদ্ধবিমান নিয়ে করা এই আয়োজন ছিল অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়। এই পর্যায়ে ভারতের সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং পুরো দেশ মারাত্মক আর্থিক সমস্যায় আছে। ফলে এভাবে অর্থ অপচয় করা কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর আরো অনেক কর্মকর্তাই মনে করছেন, এই অর্থ আরো ভালো কাজে ব্যয় করা যেত।
এই অনুষ্ঠানে ঠিক কত ব্যয় হয়েছে, তা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে একটি আনুমানিক হিসাবে বলা হয়েছে, অন্যান্য বিমানের জন্য ব্যয়ের পরিমাণটি ৫৫ লাখ রুপি।
এই হিসাবটি করা হয়েছে এই ভাবে যে দুটি দুই ইঞ্জিনের সু-৩০এমকেআই ও জাগুয়ারের প্রতি ঘণ্টায় উড্ডয়নের জন্য ব্যয় হয় যথাক্রমে ২০ লাখ ও ১৪ লাখ রুপি করে। এক ইঞ্জিনের তেজাসের জন্য ঘণ্টায় ব্যয় হয় ৬ লাখ রুপি। চারটি দুই ইঞ্জিনের ৫ টনি এএলএইচের জন্য ব্যয় প্রায় ১৫ লাখ রুপি।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক এক পাইলট বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের কোনো লাভ নেই। বিশেষ করে মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন নিরর্থক। তিনি বলেন, ভারতীয় বিমানবাহিনীতে আগে থেকেই যুদ্ধবিমান আছে। ফলে রাফালের সংযুক্তি স্রেফ আরো কিছু বিমান ওই বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার ঘটনা। এর বেশি কিছু নয়।
আর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল ভি কে জিমি ভাটিয়া মনে করেন, এ ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো ভারতের শত্রু পাকিস্তান ও চীনকে রাজনৈতিক বার্তা প্রদান করা। এর মাধ্যমে ভারত তার শত্রুদের বার্তা দিয়েছে যে তারা তাদের ভূখণ্ড রক্ষা করতে প্রস্তুত, কোনো ধরনের সামরিক বা সন্ত্রাসী অভিযান বরদাস্ত করা হবে না।
ভারত ফরাসি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে প্রায় ৬৭ বছর ধরে। দেশটি ড্যাসাল্টের এমডি ৪৫০ হ্যারিকেন (তুফানি নামে পরিচিত) সংগ্রহ করেছিল ১৯৫৩ সালে। এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের বিমান সংগ্রহ করা হয়েছিল ফ্রান্সের কাছ থেকে।
ভারত ২০১৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ৩৬টি রাফাল ৫৯০ বিলিয়ন রুপিতে (৮.০৪ বিলিয়ন ডলার) ক্রয় করতে চুক্তিবদ্ধ হয়।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক এক তিন তারকা কর্মকর্তা বলেন, ভারত যদি ভাব-গম্ভীর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিমানগুলো অন্তর্ভুক্ত করত, তবেই ভালো করত। তিনি বলেন, চীনের সামরিক কৌশলবিদ সান তজু তীক্ষ্ণধী আচরণ করেন।
সূত্র : দি ওয়্যার