চীনের হাইব্রিড যুদ্ধ : টার্গেট মোদি-মমতা
চীনের হাইব্রিড যুদ্ধ : টার্গেট মোদি-মমতা - মোদি-মমতা
অত্যাধুনিক ডিজিটাল স্পাইং প্রযুক্তি। যার জাল ছড়িয়েছে ভারতজুড়ে। প্রত্যেক ভিভিআইপির অন্দরমহলে। আর তার কারিগর? চীন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ২৪ জন মুখ্যমন্ত্রী, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফসহ গোটা সামরিক বাহিনী, ৩৫০ এমপি এবং অন্তত ১০ হাজারের বেশি ভিআইপি ও সংস্থা—নজরদারি চালাচ্ছে চীন। মমতা ব্যানার্জি থেকে নরেন্দ্র মোদি, সোনিয়া গান্ধী কিংবা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি- সকলের ডেটাবেস আত্মসাৎ করেছে চীন। প্রতিবেশী দেশ ঢুকে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, সরকারি ওয়েবসাইটে। হাতিয়ার করছে তারা ডিজিটাল লিঙ্ককে। গত ২ বছর ধরে চরবৃত্তি চালিয়ে এই বিপুল তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে চীন সরকার এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না। ভারতের পাঁচ জন বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর গোটা পরিবার এই নজরদারির জালে রয়েছে। চীনা সরকার ও পার্টির হয়ে এই কাজটি করেছে সেনঝেনের জিনহুয়া ডেটা ইনফরমেশন টেকনোলজি ফার্ম। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং বিগ-ডেটা টেকনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই হাই প্রোফাইল চরবৃত্তি করা হচ্ছে। বাদ দেওয়া হয়নি ভারতের কোনও রাজনৈতিক দলকেই। সব দলের নেতানেত্রীদের ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অপারেশনের নাম ফরেন টার্গেট! সন্দেহ করা হচ্ছে, শুধুই ভারত নয়, গোটা বিশ্বের প্রায় সব শক্তিশালী রাষ্ট্রকে টার্গেট করে এভাবে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে চীন।
সর্বভারতীয় ইংরেজি পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ গত দু’মাস ধরে তদন্ত চালিয়ে সোমবার এই বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেছে। যা নিয়ে তুমুল চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে দেশজুড়ে। স্পষ্ট হয়েছে, শুধুই সীমান্ত সংঘাত নয়, চীন গোপনে ডিজিটাল যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঘটনাচক্রে সোমবারই সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই মারাত্মক তথ্যের আবহে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘সংসদকে এক সুরে বার্তা দিতে হবে যে, গোটা দেশ সেনাবাহিনীর পাশে আছে।’ হঠাৎ সংসদের প্রথম দিনেই মোদির এই মন্তব্য নিয়ে তীব্র জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি লাদাখে চীনের আগ্রাসন এবং সমান্তরালভাবে ভারতের প্রশাসনিক নীতি নির্ধারকদের সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য হাসিল করা চীনের বিরুদ্ধে এবার সরকার কড়া কোনও ব্যবস্থা নিতে চলেছে?
ভারতের রাজনীতি, সরকার, শিল্প-বাণিজ্য, মিডিয়া, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন—সকলের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের ফাঁদ রচনা করেছে চীন। নাম দেওয়া হয়েছে প্রোজেক্ট ইনফরমেশন লাইব্রেরি। কীভাবে কাজ করছে এই চক্রান্ত? প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রীরা, সামরিক অফিসার থেকে বিরোধী দলের নেতানেত্রী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী কী পোস্ট দেওয়া হয়, তাদের ফলোয়ার কারা, জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন দ্বারা তাঁরা কে কখন কোথায় যাচ্ছেন, তাদের স্বজন পরিবারদের মুভমেন্ট... সব ফলো করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষার খাতিরে যে কোনও দেশের নিরাপত্তা বাহিনী, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ বা গুপ্তচর সংস্থা এই কাজটি করেই থাকে।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টই থাকে নজরদারিতে। সাধারণ মানুষ কে কখন কোনও ঘটনার প্রতিবাদ করছে, সেটা ট্র্যাক করা হয়। কিন্তু আইন অনুযায়ী, কখনো থার্ড পার্টি ডেটা কালেকশনের অনুমতি দেয় না তথ্যপ্রযুক্তি আইন। কিন্তু চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন সরকার এই বিশেষ টেকনোলজি ফার্মকে কাজে লাগিয়ে যাবতীয় ডেটাবেস সংগ্রহ করে ডিজিটাল সাইবার অ্যাটাকের পথ প্রশস্ত করতে পারে। যা মারাত্মক বিপজ্জনক।
ওই তদন্তে দেখা যাচ্ছে, চীনের জিনহুয়া ফার্মের ডেটা সংগ্রহের তালিকায় রয়েছে ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন, অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন, এমনকী ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনও। এই ভিআইপি ভারতবাসীরা দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও নীতি নির্ধারণ করেন। শুধু তাই নয়, ইসরো কীভাবে স্বল্প খরচে চাঁদ ও মঙ্গল অভিযান করছে এবং কাদের সঙ্গে এই সংক্রান্ত ডিল হচ্ছে, সেই চুক্তির সফ্ট কপি হাতানোর চেষ্টা করেছে চীন। এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ গবেষণায় কী বলা হয়? হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার!
সূত্র : বর্তমান