ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় চীন-ভারত!
ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় চীন-ভারত! - ছবি সংগৃহীত
ভারত ও চীন নিশ্চিত যুদ্ধের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিশ্ব যখন কোভিড নিয়ে আর যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যস্ত তখন বিতর্কিত সীমান্তে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে দেশ দুটি। আর তাতে করেই তাদের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।
১৯৬৭ সালের পর গত জুনে প্রথম গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাত বাধে। এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এরপর থেকে দুই পক্ষই সেখানে অতিরিক্ত সেনা, ট্যাঙ্ক, কামান ও ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থার সমাবেশ ঘটাচ্ছে। শুধু যে পশ্চিম সীমান্ত তা নয়, ভারতের পূর্ব সীমান্তেও চীনের শক্তি বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় চীনের নির্মাণ সামর্থ্য বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত সপ্তাহে চীন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে কিছু কূটনৈতিক সমাধান পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কিন্তু অচলাবস্থার নিরসনের চূড়ান্ত কোন সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুই পক্ষই পরস্পরকে স্থিতাবস্থা নষ্ট ও এ যাবতকালের সমঝোতাগুলো লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করছে।
চীনের তৎপরতা স্পষ্ট নয় : প্রেসিডেন্ট শি সাধারণত আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেন। তিনি কৌশলগত সুবিধা লাভের সুযোগ দেখতে পারেন। কিন্তু এই অবস্থাতেও চীন কেন ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি নেবে তা বুঝে আসে না। চীনের এই ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মাখামাখি এবং চীন-বিরোধী কোয়াডের সঙ্গে সংলাপকে তুলে ধরা হয়। চীনের উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমানোরও ইংগিত দিয়েছে ভারত, চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কিন্তু শি যদি অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা লাভের জন্য বিরোধ উস্কে দিয়ে থাকেন তাহলে এর খবরাখবর চীনের অভ্যন্তরে কেন তেমন প্রচার পাচ্ছে না সেটাও একটি ধাঁধা। আরেকটি সম্ভাব্য হাইপোথিসিস হচ্ছে তিব্বত নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন। ভারত এখনো দালাই লামা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তিব্বতি সরকারকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। তিব্বতে হস্তক্ষেপ থেকে ভারতকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে চীন।
এসব অনিশ্চয়তা পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। শীত এগিয়ে আসছে। এই সময়ে হিমালয়ের বৈরি পরিবেশে হাজার হাজার চীনা সেনা মোতায়েন রাখার কোনো মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। ভারতও সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ফলে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি খেলা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
পুরনো নিশ্চয়তা সংঘাত প্রতিরোধ করতে পারবে না। আধুনিক যুদ্ধকৌশলে কঠোর শীত বা বন্ধুর ভূমি কোনো বিষয় নয়। ১৯৪১ সালে জার্মান আর্মির প্রতিরোধ এই কঠিন শীতের মধ্যেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো লাল ফৌজ। এখন তাদের কৌশল অনেক উন্নত হয়েছে।
গালওয়ান উপত্যকার ঘটনায় ভারতের জনগণের মনোভাব এখন চীনের বিরুদ্ধে। ফলে ভারতের পক্ষে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার কঠিন। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে নয়া দিল্লীতে ঐক্যমত গড়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি শক্ত মনোভাব দেখাতে না পারেন তাহলে তার মান-মর্যাদা ধুলোয় লুণ্ঠিত হবে। ফলে শি’র সামনে দুটি বিকল্প : ভারতে হামলা করা অথবা জুন-পূর্ব অবস্থানে সেনা সরিয়ে নিয়ে মুখ হারানো।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। কাকতালীয় বটে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধ হয়েছিলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের মনযোগ কিউবান মিসাইল সঙ্কটের কারণে অন্যদিকে ঘুরে গিয়েছিলো। এখন নভেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা।
তাই চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কাটি উড়িয়ে দেয়া যায় না। গত সপ্তাহে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সমঝোতা একটি বিরতি হতে পারে। কিন্তু যেসব কারণ দুই দেশকে গুরুতর সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেগুলো ওই বৈঠকে নিরসন করা হয়নি।
আমেরিকান ঐতিহাসিক বারবারা তুসম্যান প্রায়ই বলেন, ‘ভুল হিসাব থেকে যুদ্ধ বাধে।’ এসব ধারণার সত্য-মিথ্যা বোঝা যাবে আগামী মাসগুলোতে।
সূত্র : ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস/এসএএম