ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে বিপাকে বাহরাইন!
ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে বিপাকে বাহরাইন! - ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে বাহরাইনের বিরোধীদলগুলো। গতকাল রোববার দেশটির প্রথম সারির এক শিয়া নেতা ইহুদি রাষ্ট্রটির সাথে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা প্রতিরোধ করতে উপসাগরীয় অঞ্চলের জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরানে বসবাসরত বাহরাইনি শিয়া নেতা আয়াতুল্লাহ শেখ ইসা কাশিম বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরোধী তিনি। বাহরাইনের বিরোধী দল আল-উইফাকের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত মাসে ইসরাইল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত শান্তি চুক্তিতে পৌঁছায়। গত শুক্রবার ইসরাইলের সাথে বাহরাইন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হয়েছে বলে এক টুইট বার্তায় জানান ট্রাম্প।
আয়াতুল্লাহ শেখ ইসা কাশিম বলেন, মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব চুক্তি হচ্ছে। চিন্তাভাবনা, মানসকিতা, লক্ষ্য এবং স্বার্থের ক্ষেত্রে শাসক ও শাসিতদের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। সরকারগুলো মনস্তাত্ত্বিক পরাজয় ঘটছে এবং তারা সেটি জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু জনগণকে এই পরাজয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রোববার বাহরাইনের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল, বাহরাইন বার অ্যাসোসিয়েশন ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলের সাথে চুক্তির বিরোধিতা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি স্বার্থের পক্ষে বাহরাইনের কয়েক প্রজন্ম; যারা বংশীয় পরম্পরায় ফিলিস্তিনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠেছেন তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এই চুক্তির ফল মেনে নেবে না।
এ দিকে রোববার বাহরাইনের স্থানীয় দৈনিক আল-বিলাদ এক প্রতিবেদনে বলছে, দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বিচারবিভাগের কর্মীদের সরকারের নীতির সমালোচনা না করতে ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করতে পারে এমন কোনো মত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
বাহরাইনিরা বরাবরই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোরবিরোধী। গত জুনে মানামায় এক সম্মেলনে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তির সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ৫০ বিলিয়ন ডলারের একটি অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা হয়। মানামায় এই সম্মেলনের আয়োজন করায় বাহরাইনের সরকার দেশটির নাগরিকদের সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
বাহরাইনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাল ওমান
ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাহরাইনের নেয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক আরব দেশ ওমান। গতকাল রোববার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন তাদের টুইটার একাউন্টে এ খবর জানিয়েছে। ওই টুইটে চ্যানেলটি বলেছে,‘ভগিনীতুল্য রাষ্ট্র বাহরাইন যে উদ্যোগ নিয়েছে সালতানাৎ তাকে স্বাগত জানাচ্ছে।’ এতে আরো বলা হয়, ‘ওমান আশা করে কিছু আরব দেশ নতুন যে কৌশলগত পথটি গ্রহণ করেছে তা ফিলিস্তিনি ভূমিগুলোর ওপর ইসরাইলি দখলদারিত্বের শান্তিপূর্ণ অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।’
গত মাসে ইসরাইলে সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এরপর শুক্রবার এক ঘোষণায় ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের পদক্ষেপ অনুসরণের ঘোষণা দেয় বাহরাইন। বাহরাইন এবং ওমান উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে হওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইল শান্তিচুক্তির প্রশংসা করে একে স্বাগত জানিয়েছিল।
ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ
ইসরাইলের সাথে উপসাগরীয় দু’টি দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে গাজার ফিলিস্তিনিরা। গত শনিবারের হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার এ বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের ছবি পোড়ায় ফিলিস্তিনিরা, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গাজায় বিক্ষোভটি আয়োজন করেছিল ভূখণ্ডটির নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস।
হামাস কর্মকর্তা মাহের আল-হোলি বলেছেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে আমাদের; এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এটির সফল হওয়ার সব পথও রুদ্ধ করে দিতে হবে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, বাহরাইনের বাদশা হামাদ বিন ইসা আল খলিফা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতভ্ক্তু আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের ছবিতে আগুন দিয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স