ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক শ্রীলঙ্কা
ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক শ্রীলঙ্কা - প্রতীকী ছবি
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রসচিব অ্যাডমিরাল অধ্যাপক জয়ন্ত কলম্বাগ শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র সম্পর্ক ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটরের পি কে বালাচন্দ্রনের সাথে শুক্রবার কথা বলেছেন। অ্যাডমিরাল তার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মধ্যে বলেন, যে ভূ-কৌশলগত দিক থেকে দ্বীপ দেশটির আকর্ষণীয়তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও শ্রীলঙ্কা যদি ইস্যুভিত্তিক বহু জোটীয় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে তবে চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করা সম্ভব হবে।
অবশ্য তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই কাজটি করার সময় শ্রীলঙ্কাকে প্রতিবেশী ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
এখানে তার সাক্ষাতকারের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো
প্রশ্ন : ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক- উভয়ভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূকৌশলগত এলাকা। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিই মনে হয় দেশটির দিকে তাকিয়ে থাকে। আপনি কি মনে করেন, এটি দেশের জন্য একটি সুবিধাজনক অবস্থান নাকিক এর ফলে সব দিক থেকেই আরো বেশি চাপ আসছে? বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে লাভবান হতে শ্রীলঙ্কা কী পরিকল্পনা করছে?
জবাব : একটি দেশে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে। দেশটি তার অর্থনীতি বা রাজনৈতিক নীতি বদলে ফেলতে পারে, কিন্তু একটি জিনিস পরিবর্তন করতে পারে না। আর তা হলো ভৌগোলিক অবস্থান। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত মহাসাগর ও আশপাশের এলাকায় প্রধান শক্তিগুলোর কাছে দেশটি খুবই আকর্ষণীয়। ভারত, চীন, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়া- সবাই শ্রীলঙ্কার ভূকৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে খুবই আগ্রহী। কিন্তু এই আকর্ষণ অনেক চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে। শ্রীলঙ্কার উচিত হবে এসব আকর্ষণ কাম চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করা। আমাদের যথেষ্ট চতুর হওয়া উচিত, কঠোর পরিশ্রম করে শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কল্যাণর সুযোগগুলো গ্রহণ করা উচিত। এ কারণেই প্রেসিডেন্ট চান শ্রীলঙ্কা যেন নিরপেক্ষ থাকে, কোনো জোটে না যায়। তিনি চান, শ্রীলঙ্কা যেন এই অঞ্চলের সব দেশের সাথেই সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে যাতে শ্রীলঙ্কার মাটি বা শ্রীলঙ্কার পানি অন্য কারো বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়, বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়। কারণ ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগগুলো আমাদের বুঝতে হবে। ভারতের সামুদ্রিক ও নিরাপত্তা ছাতার নিচে শ্রীলঙ্কার অবস্থান। আমাদের কখনো পক প্রণালীর ৪০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে থাকা বিমানবাহী রণতরী থাকা চলবে না, যেমনটা শিবশঙ্কর মেনন তার গ্রন্থ চয়েজেজে উল্লেখ করেছেন। ভারতের কৌশলগত উদ্বেগের প্রতি সতর্ক না থাকার বিষয়ে আমাদের খুবই মনোযোগী থাকতে হবে। প্রেসিডেন্ট বিষয়টি বারবার উল্লেখ করেছেন। ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তা প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে আমাদের খুবই মনোযোগী হতে হবে, ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়, এমন কাউকে আমাদের পানি ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না।
নিরাপত্তা খাতে ভারতের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি আমাদেরকে আরো দেখতে হবে যে অন্যান্য দেশও শ্রীলঙ্কার সাথে সামরিকভাবে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সেইসাথে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, সেগুলো বিবেচনা করতে হবে নিরাপত্তা চুক্তি সই করার আগে। আমরা অর্থনৈতিক সুবিধাকে সামরিক সুবিধা থেকে আলাদা করতে পারি না।
এমনকি ভারতেরও এই নীতি রয়েছে। আমি শুনেছি, অজিত দোভাল ও জয়শঙ্কর বলেছেন যে ভারতের উচিত ইস্যুভিত্তিক বহু জোটীয় নীতি থাকা। আমরা শ্রীলঙ্কায় এই নীতি অনুসরণ করছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জলদস্যূ ইস্যুতে শ্রীলঙ্কা এখানে সব দেশের নৌবাহিনীকে স্বাগত জানায়। তবে এটি বিশেষ একটি বিষয়।
প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্র ও চীন স্নায়ুযুদ্ধে রয়েছে। চীনকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু করছে। শ্রীলঙ্কা এতে কিভাবে প্রভাবিত হবে? শ্রীলঙ্কায় চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে ও করছে। এসব বিনিয়োগ কি বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে?
জবাব : দুটি হাতি যখন লড়াই করে, তখন ঘাস পদদলিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ এখন বাণিজ্যযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এটি অনেকভাবেই শ্রীলঙ্কাকে আঘাত করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবরোধের ফলে ইরানে শ্রীলঙ্কার চা রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ২৪টি চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করেছে। এগুলোর কয়েকটি শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও নির্মাণকাজের সাথে জড়িত। যেমন সিসিসিসি সাবসিডিয়ারি সিএইচইসি কলম্বো পোর্ট সিটি নির্মাণ করছে। তবে ভবিষ্যতে এই অবরোধ শ্রীলঙ্কাকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।