পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক ও সার্ক
পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক ও সার্ক - ছবি : সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রসচিব অ্যাডমিরাল অধ্যাপক জয়ন্ত কলম্বাগ শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র সম্পর্ক ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটরের পি কে বালাচন্দ্রনের সাথে শুক্রবার কথা বলেছেন। অ্যাডমিরাল তার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মধ্যে বলেন, যে ভূ-কৌশলগত দিক থেকে দ্বীপ দেশটির আকর্ষণীয়তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও শ্রীলঙ্কা যদি ইস্যুভিত্তিক বহু জোটীয় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে তবে চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করা সম্ভব হবে।
অবশ্য তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই কাজটি করার সময় শ্রীলঙ্কাকে প্রতিবেশী ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
এখানে তার সাক্ষাতকারের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো
এমসিসি ও সোফা সমস্যাপ্রবণ
প্রশ্ন : বিতর্কিত মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন কম্প্যাক্ট (এমসিসি) ও স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোফা) চুক্তির জন্য শ্রীলঙ্কার ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসবের কিছু ধারা অসাংবিধানিক এবং পরিবর্তন করা যেতে পারে। সরকারের এ ব্যাপারে অবস্থান কী?
জবাব : এমসিসির ব্যাপারে সরকারের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হলে তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে, তারপর পার্লামেন্টে পেশ করা হবে। সরকার সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক পথ অবলম্বন করবে।
এর আগে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এক্সেস অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট নামে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল শ্রীলঙ্কা। ২০১৭ সালে তা নবায়ন করা হয়। এই চুক্তি এলটিটিইর ভাসমান ওয়্যারহাউজগুলো শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সহায়ক হয়েছিল। কিন্তু সোফা বিরোধপূর্ণ। কারণ এটি শ্রীলঙ্কার আইনি কাঠামোর বাইরেমার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যক্তিদের অস্ত্র, যোগাযোগ সরঞ্জাম বহন ও নিজস্ব যানবাহন ব্যবহার করার সুযোগ এনে দেবে। যেকোনো চুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে দেশের স্বার্থ, সংবিধান ও আইনের আলোকে।
কলম্বো বন্দরের জাতীয়তাবাদ
প্রশ্ন : কলম্বো বন্দর হলো ভারতের ট্রানশিপমেন্ট কেন্দ্র। ভারত বন্দরের ইস্টার্ন কন্টেইনার টার্মিনালে (ইটিসি) সংশ্লিষ্ট হতে চায়। কিন্তু ভারতীয় সম্পৃকতার ব্যঅপারে শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদীরা বিরোধিতা করছে। শ্রীলঙ্কা এই ত্রিভূজ কিভাবে সমাধান করবে?
জবাব : প্রেসিডেন্ট ইসিটির ব্যাপারে ইতোপূর্বে ভারত ও জাপানের সাথে করা চুক্তিগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবশ্য বন্দর শ্রমিকেরা এই চুক্তির বিরোধী। আবার বন্দরের মতো জাতীয় সম্পদগুলো শ্রীলঙ্কার হাতে রাখাও সরকারের নীতি। এসব সম্পদে শ্রীলঙ্কার হাতে কমপক্ষে ৫১ ভাগ শেয়ার থাকা উচিত। সব বিষয় ও সব পক্ষকে বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব সঙ্কটে সার্ক
প্রশ্ন : সার্ক কেন অকার্যকর হলো বলে আপনি মনে করেন? ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতিতে কি সার্ককে একীভূত করা যায়?
জবাব : ভারত প্রতিবেশী প্রথম নীতি দিয়ে শুরু করলেও এখন তা প্রতিবেশী আগে বাদ নীতিতে অর্থাৎ পাকিস্তানকে বাদ দেয়ার নীতিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য,প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীল সফরে প্রমাণ করে, নিকট প্রতিবেশীদের অগ্রাধিকারকে ভারত কতটুকু গুরুত্ব দেয়। সার্কের ব্যাপারে বলা যায়, এটি তার সম্ভাবনা মোটেই পূরণ করতে পারেনি। সার্ক একটি পুরনো সংগঠন। এটি শুরু হয়েছিল বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে। কিন্তু আসিয়ানের সাথে তুলনা করে বলা যায়, সার্ক অর্থনৈতিকভাবে একীভূত হয়েছিল একেবারে খুবই কম পর্যায়ে। সার্কের একীভূত প্রায় ৫ ভাগ, আর আসিয়ানের প্রায় ২০ ভাগ। এর মানে হলো, আসিয়ান তার বাজারের জন্য বাইরের পাশাপাশি তাদের গ্রুপের দিকেও তাকায়। অন্যদিকে, আমরা সার্ক অঞ্চলের চেয়ে বাইরের দিকে তাকাই বেশি। সার্কে আমরা রাজনৈতিক ইচ্ছাকে এগিয়ে যেতে দেখি না। এ কারণে ভারত এখন বিমস্টেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরিয়াল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) দিকে নজর দিচ্ছে।
সূত্র : এসএএম