ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি
ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি - ছবি সংগৃহীত
নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার এক বড় অনুষঙ্গ হচ্ছে যুদ্ধ বা ওয়্যার। আর একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি। এই ইন্ডাস্ট্রি আজ অনেক দেশে প্রতিষ্ঠিত। ‘ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি’ মানেই কিছু দেশের অনৈতিক অর্থ উপার্জনের পথ খুলে দেয়া, আর সেই সাথে পুরো মানব জাতিকেই কার্যত অর্থনৈতিক, মানবিক ও রাজনৈতিক দুর্ভোগ আর নিষ্ঠুরতার দিকে ঠেলে দেয়া। যুদ্ধ আর অর্থনীতি এসব দেশে হাত ধরাধরি করে চলে, যেমনটি রেললাইন চলে সমান্তরাল। ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি আরো কয়েকটি দেশে গড়ে ওঠলেও এতে একচ্ছত্র অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং এর ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে আগ্রহী পাঠকদের পড়া উচিত ক্রিশ্চিয়ান সোরেনসেনের লেখা ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি’ বইটি। এই বইটি থেকে আমরা জানতে পারি, যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক অর্থনীতি ও অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও কর্তৃত্বপরায়ণ বিদেশনীতি। সোরেনসেন তার যে মূল ধারণা প্রকাশ করতে চেয়েছেন, তা সরল-সহজ ও সুস্পষ্ট। কারা কিভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা তৎপরতার মাধ্যমে দেশে দেশে যুদ্ধ বাধিয়ে সেখান থেকে বাণিজ্যসিদ্ধির তৎপরতায় সদা লিপ্ত, বইটি তা জানার সুযোগ করে দিয়েছে। বইটিতে আছে বিপুল সহায়ক ডাটা। লেখক স্বীকার করেছেন, এসব ডাটা এ সম্পর্কিত বিপুল ডাটার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ডাটাগুলো স্পষ্ট ও আস্থাযোগ্য করে করে তোলার জন্য আছে পর্যাপ্ত ফুটনোট।
যুদ্ধশিল্প তথা ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি কিংবা অন্য কথায় ‘যুদ্ধ অর্থনীতি’র অন্তর্নিহিত সত্য হচ্ছে ক্ষমতা, লোভ আর ভীতি। ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিকে বুঝতে হলে বুঝতে হবে বড় বড় করপোরেশন এবং এগুলোর মুনাফা, লোভ ও বিশ্বায়ন সম্পর্কে সবকিছু। সোরেনসেন মনে করেন, ওয়্যার ডিপার্টমেন্ট (ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স) সামগ্রিক বা ব্যাপকভাবে প্রতারক, বর্জ্যতুল্য ও লোভাতুর। কোনো পদক্ষেপ অথবা অভ্যন্তরীণ কর্মকৌশল তা ঠেকাতে পারে না। করপোরেশন-নির্বাহীরা অনেকটা সহজাতভাবে কিংবা সচেতভাবে জানেন- ওয়্যার ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে করপোরেট গ্রিড বা লোভ মেটানোর একটি স্ল্যাশ ফান্ড তথা অর্থহীন তহবিল।
ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশন একটি বিরাট প্রকল্প, যার পাশ্চাত্যভিত্তিক মূলধন কাজে লাগানো হয় চাপ দিয়ে বিদেশের বাজার উন্মুক্ত করার কাজে; সুযোগ সৃষ্টি করা হয় মূলধন প্রবাহের। মানব প্রবাহের জন্য এ মূলধন ব্যবহার করা হয় না। বিশ্বায়নের আওতায় বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ব্যবহার করে সস্তায় মজুরি কিনে নেয়ার জন্য এবং শোষণ করা হয় নানা দেশের জমির ওপরের ও নিচের প্রাকৃতিক সম্পদ। বিশ্বায়ন মনোলিথিক করপোরেশন-পণ্য আগের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে সমমাত্রিক করে তোলে এদের করপোরেট পণ্য, সেবা ও কালচারাল প্যাকেজ আরোপের মধ্য দিয়ে। এসব দিক বিবেচনায় বিশ্বায়ন আর ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি পরস্পরের সহযোগী। অনেকটা ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’য়ের মতো।
ক্রিশ্চিয়ান সোরেনসেন আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে বলেছেন- অনেক শিল্প, করপোরেশন, রাজনীতিক, বিশ্ববিদ্যালয় একজোট হয়ে এই ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের সাথে কাজ করে। সোরেন আরো জানিয়েছেন বেশ কিছু থিমের কথা। তিনি জানিয়েছেন, কী করে অর্থ ও ক্ষমতা ধীরে ধীরে প্রবিষ্ট করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ও বিশ্বের বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে। নিওলিবারেল অস্টারিটি তথা নব্য-উদারবাদী কৃচ্ছ্রসাধন এই প্যাকেজেরই একটি অংশ। বিশেষ করে চাপের মুখে কিংবা প্রকৃতিগতভাবে এর প্রভাব রয়েছে পাশ্চাত্য-ঘেঁষা দেশগুলোতে।
দেশী-বিদেশী করপোরেট শক্তি পেন্টাগন ও সেনাবাহিনীর সেবা সরবরাহের কাজের চেয়ে আরো বেশি লোককে ব্যবহার করে যুদ্ধের আনুষঙ্গিক, সরবরাহ, তথ্য এবং সত্যিকার যুদ্ধের অন্যসব ক্ষেত্রে। ভাড়াটে সৈন্য ও ভাড়াটে করপোরেট ব্যক্তিত্ব একসাথে মিলে গঠন করে সামরিক সাম্রাজ্যের বৃহত্তম অংশটি। বিশ্বজুড়ে ভাড়াটে সৈন্য ও ভাড়াটে করপোরেট ব্যক্তির সংখ্যা অজানা। তবে এদের তৎপরতা উপলব্ধি করতে অসুবিধা হয় না।
ভীতি হচ্ছে আরেকটি থিম, যা সোরেনসেন প্রকাশ করেছেন পুরো বইটিজুড়ে। এটি প্রধানত ব্যবহার করা হয় অন্যদের সংজ্ঞায়িত করার নিয়ামক হিসেবে। শত্রু হিসেবে কাউকে বেছে নেয়ার জন্য ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের যুক্তি খাড়া করার প্রয়োজনে খরচ করা হয় অঢেল অর্থ। করপোরেট প্রেক্ষাপট থেকে বড় ধরনের ‘পাওয়ার কমপিটিশন’ খুবই বিস্ময়কর। বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে ধরা পড়ে চীন, রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা, লিবিয়া ও আরো কয়েকটি দেশকে ঘিরে চলা ঘটনাবলিতে।
ইসরাইল ও এর জায়নবাদী সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে বইটির অনেক জায়গায়। ইসরাইলের সার্ভিল্যান্স, জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণ ও যুধ্যমান হামলার সাজ-সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। আর এসব বিক্রি করা হয় বিশ্বব্যাপী। সেখানে সবার আগে ইসরাইলের সাথে অংশীদারিত্ব বা সম্পর্ক থাকে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির নেতারা পছন্দ করেন বর্ণবাদী ইসরাইলকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়্যার করপোরেশনগুলো সাধারণত ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, মিসরসহ আরবের নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো পরোয়া করে না। ইউএস ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এসব দেশের ব্যাপারে উদাসীন থাকতে পারে না। কারণ, যুদ্ধ মানেই তাদের মুনাফা। যুদ্ধবাধা মানে তাদের নতুন অস্ত্র বিক্রি ও অন্যান্য ব্যবসায়-ক্ষেত্র খুলে যাওয়া। যুদ্ধে মানুষের মৃত্যু তাদের জন্য নিশ্চিত করে অধিক মুনাফা। জায়নিজমের আগ্রাসী সামরিক মনোভাব হচ্ছে এর অন্তর্নিহিত বাণিজ্যিক সম্পদ। ইসরাইল বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আরবদের হত্যা করেছে এবং করছে। আর এই হত্যাকাণ্ড পরিচালনার জন্য ইসরাইল অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেশনগুলো থেকে।
সোরেনসেনের বইয়ে ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি কিংবা যুদ্ধ অর্থনীতির নানা দিকই বর্ণিত হয়েছে। তিনি শুধু তা বর্ণনা করেই দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি এই ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির অবসান কামনা করেন। তা হলে কী করতে হবে? এর সমাধানই বা কী? এর উত্তরে তিনি দু’টি সমাধানের উল্লেখ করেছেন। এসব সমাধান কোনো বৈপ্লবিক সমাধান নয়। রাতারাতি অবসান ঘটানোর কোনো উপায় তিনি বাতলাননি। বরং বাস্তবতার আলোকে ঠাণ্ডা মাথায়, ধৈর্যধারণ করেই এই ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির অবসানের অপেক্ষায় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্রথম সমাধানের কথা জানাতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন মুনাফার জন্য লোভাতুর ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির কথা। এ সম্পর্কে যে বর্ণনা তিনি তুলে এনেছেন তার এই বইয়ের মাধ্যমে, তাতে বলেছেন এর একটা পরিবর্তন আনতেই হবে এবং তা আসবেই। প্রশ্ন হলো- কিভাবে তা করা যাবে? বইটির শেষ দিকে সোরেনসেন উল্লেখ করেছেন বেশ কিছু ভালো ও মূল্যবান পদক্ষেপের কথা, যেগুলো প্রয়োগ করে কমিয়ে আনা যাবে ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের প্রভাব। দুর্ভাগ্য, বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সে প্রেক্ষাপটে করপোরেশন ও ব্যক্তিদের পেছনে অর্থখরচ ঠেকিয়ে সব সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান আনা যাবে না। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ডলার নিয়ে অর্থনৈতিক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে এবং সৌদি আরব ও এর পেট্রোডলার রিসাইক্লিং স্কিমগুলোর সাথে মার্কিন ডলারের সম্পর্কের কারণে তেলের দাম নির্ধারণ করতে হবে মার্কিন ডলারে। আর এসব ডলার তখন ব্যবহার করা হবে মার্কিন সামরিক সাজসরঞ্জাম কেনার পেছনে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চলছে এক ধরনের পিছুটান। কোভিড-১৯-এর কারণে মার্কিন অর্থনীতির এই পিছুটান নয়। বরং কোভিড-১৯ নিশ্চিতভাবে সহায়তা করেছে দেশটির অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে নেয়ায় বিজারক হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে কখনোই ২০০৮-০৯-এর অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা যায়নি। তখন ফেডারেল ব্যাংক (আসলে এটি একটি প্রাইভেট ব্যাংক) ব্যবস্থা ও অন্য করপোরেশনগুলোতে জোগান দিয়েছে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার, যাতে এগুলো দেউলিয়া হয়ে না পড়ে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেডারেল ব্যাংক আবার ব্যাংক ব্যবস্থায় শত শত কোটি ডলার দিতে শুরু করে, যাতে ব্যাংকগুলোর নগদপ্রবাহ ভালোভাবে চলে। কোভিড-১৯-এর সময়ে অর্থনীতির বৃহত্তম অংশের শাটডাউনের (এর অভ্যন্তরীণ ভাগ ছিল ৭০ শতাংশ) ফলে একে সচল রাখতে প্রয়োজন তিন-চার ট্রিলিয়ন ডলার। এর বড় অংশই যায় ‘টপ ওয়ান পার্সেন্টারদের’ কাছে; অন্য কথায় শীর্ষ ধনীদের হাতে। সামান্য পরিমাণ ডলার পায় শ্রমিক শ্রেণী। এর পরও অর্থনীতিকে সহায়তা করতে ফেডারেল ব্যাংককে আরো ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার দিতে হবে, অর্থনীতিতে পুঞ্জীভূত বিপুল ঋণের সাথে ভারসাম্য আনার প্রয়োজনেই তা করতে হবে।
তাহলে করণীয় কী? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে- অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্র হাইপারইনফ্লেশন ও লোকসানের মধ্য দিয়ে বিপর্যস্ত হয় ও এর পরাশক্তির ক্ষমতা হারায়। এটি হতে পারে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু ইতিহাসের সব ক্ষমতাধর মুদ্রা শেষ পর্যন্ত ফিরে যায় এর সত্যিকার মূল্যে, অর্থাৎ ‘নাথিং’-এ। রাশিয়া ও চীন ইতোমধ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে মার্কিন ডলারবিহীন একটি অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে। তাদের বাণিজ্য চলবে স্থানীয় মুদ্রায়। নিজস্ব ঋণ-ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে চলবে তাদের ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং এই ব্যবস্থা তারা সম্প্রসারণ করবে আগ্রহী বৈশ্বিক অংশীদার দেশেও। ডলার নিয়ে আসল অভ্যন্তরীণ হুমকিটা থেকে গেছে পাশ্চাত্যে করপোরেটের চালু থাকার ওপর। কারণ, বিপুল ঋণের জন্য প্রয়োজন আরো আরো ডলার। যুক্তরাষ্ট্র যখন হাইপারইনফ্লেটেড হবে, এটি হারাবে পরাশক্তি হিসেবে এর গুরুত্ব। আর একবার সে গুরুত্ব হারিয়ে ফেললে, তা ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের অনেক প্রভাব খাটানোকেই অসম্ভব করে তুলবে। তখন ওয়্যার ডিপার্টমেন্ট চাইলেও পারবে না যেখানে-সেখানে অস্ত্র কিংবা ঘুষ সরবরাহ করতে, আকর্ষণীয় বেতনে কাউকে নিয়োগ করতে; তাদের হয়ে কাজ করার জন্য। হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র তখন বর্তমানের মতো ডলার সরবরাহ বন্ধ করে ‘নতুন কিছু’ চালু করবে।
দ্বিতীয় সমাধানের উপায় নিয়ে সোরেনসেন বলেছেন- ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের সব ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার দিন দিন আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ওয়্যার ডিপার্টমেন্টে ই-মেইল থেকে শুরু করে এনক্রিপশনের মাধ্যমে যোগাযোগ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সেন্সর, সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট, ব্যাংকের লেনদেন, আরো অনেক কিছুতে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ানো হচ্ছে। সোরেনসেন উল্লিখিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয় হচ্ছে- একটি সুসংহত একক ব্যাপক নেটওয়ার্ক এবং এক সেট সলিড ডাটা পেতে ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ, যাতে করে যেকোনো ডিপার্টমেন্ট অন্য একটি ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করে সহসাই তথ্য দিতে ও নিতে পারে।
সাধারণভাবে গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট, অ্যাপল ও অন্যান্য কমিউনিকেশন ওরিয়েন্টেড কোম্পানি এই প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে চলেছে। কিন্তু বড় পশ্চাৎপদতা নিহিত সেইসব উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমাধানগুলোর মধ্যেই, যা এরা প্রমোট করছে। সব কিছুরই রয়েছে একটি অন্তর্নিহিত দুর্বলতা। এরা যত বেশি কানেকটেড হচ্ছে, তত বেশি ভঙ্গুরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবেও আসতে পারে ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি অবসানের কাক্সিক্ষত একটি সমাধান। তবে এটিও অপেক্ষায় থেকে দেখার মতো সমাধান। আমরা আশা করতে পারি, বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর ত্বরান্বিত টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে ঘটতে পারে সত্যিকারের লড়াই ও এর বিস্ফোরণ। কারণ, হয়তো এমন কেউ কোনো এক স্থানে বসে আছে, যার সক্ষমতা আছে ওই সব ইলেকট্রনিক যোগাযোগ একটি বোতাম টিপে বন্ধ করার এবং এটা কার্যকরভাবে বন্ধ করে দিতে পারে যাবতীয় লড়াই। ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার এবং তথাকথিত ‘ভিজিবিলিটি রিডাকশন টেকনিকস’ সম্পর্কিত একটি রিসার্চ সেন্টার সংযুক্ত রয়েছে ‘রাশিয়ান এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমি’র সাথে। এই সেন্টারের ডিরেক্টর ভ্লাদিমির বেলিবাইন বলেছেন- ‘রেডিও ইলেকট্র্রনিক সিস্টেম যত বেশি জটিল, তত বেশি সহজ ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার ব্যবহার করে তা অকার্যকর করে দেয়া’।
এর পরও প্রশ্ন আসে, ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি কি এভাবে কোনো এক সময় বিধ্বস্ত হওয়ার পর এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে? ঘটবে কি এর রিপ্রাইজেল? কারণ, ওয়্যার ডিপার্টমেন্টের রয়েছে ব্যাপক বিস্তৃতি ও আকার। যুক্তরাষ্ট্রের সব অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি এর আওতার মাঝে। মিলিটারি, করপোরেশন ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এর রিভলভিং ডোর অ্যাকশন নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে দিকনির্দেশনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ক্ষমতা, লোভ এবং সেই সাথে জাতিকে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারে। এটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সবকিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট। যতদিন না এর মুনাফার মনোভাব না থামবে, ততদিন সত্যিকারের শান্তিপূর্ণ সহযোগিতামূলক বিশ্ব পরিবেশ অসম্ভব।
সোরেনসেনের বইটি সঠিক উপায়ে ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানা-বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। বইটিতে এ সম্পর্কে আছে প্রচুর তথ্য। সুষ্ঠু গবেষণার মাধ্যমে এসব তথ্য তিনি তুলে এনেছেন। তার রয়েছে মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল-কংগ্রেশনাল (এমআইসি) নেটওয়ার্র্ক সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান। এমআইসি সম্পর্কে জনগণকে জ্ঞানদানের প্রয়াস এর আগেও চলেছে। কিন্তু এসব প্রয়াসের মধ্যে এই বইটি সর্বোত্তম বলতে হবে। এটি যুদ্ধবিরোধী শান্তিপ্রিয় বিবেকী মানুষদের কাছে সমধিক জনপ্রিয়তা পাবে। বিশ্বব্যাপী ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি তথা যুদ্ধ অর্থনীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সোরেনসেনের এই বইটি নিশ্চিত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। তবে সোরেনসেন যে কথাটি না বলেও বলতে চেয়েছেন তা হলো- এই ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির বিরূপ প্রভাব বিশ্বের ৯৫ শতাংশ দেশের মানুষের ওপর। সেসব দেশ ও দেশের নেতৃত্ব এবং সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি অবসানে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অপেক্ষায়ই থাকতে হবে। সেই সাথে প্রস্তুত থাকতে হবে সে পর্যন্ত দুর্ভোগকে মেনে নেয়ার ব্যাপারেও।