করোনাকে কেন আর ভয় পাচ্ছে না কেউ?
করোনাভাইরাস - ছবি সংগৃহীত
একেবারে অবুঝ শিশু ছাড়া এখন পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই, যারা কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস নামটি জানেন না। বলা যায়, পৃথিবীর সাতশ’-আটশ’ কোটি মানুষের প্রায় সবাই একবাক্যেই কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের আদ্যোপান্ত চেনেন। চীনের উহানে ভাইরাসটির উৎপত্তি কিংবা জন্ম। সেখানকার সামুদ্রিক মাছ ও বন্যপ্রাণী বিক্রির একটি পাইকারি বাজার থেকে বাদুড়, বনরুই কিংবা অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর মাধ্যমে এটি মানবদেহে ছড়িয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। উহানে গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মধ্য এপ্রিলে কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসকে ‘প্যানডেমিক’ বা ‘বৈশ্বিক মহামারী’ ঘোষণা করে। করোনায় ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে ৯ লাখ ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ৭৮ লাখ ২২ হাজার ৯৭৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮০ লাখ।
৯ মাস ধরে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে দেশে দেশে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৭টি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি দ্বীপদেশ ছাড়া আর কোনো দেশ বাকি নেই, যেখানে করোনাভাইরাস নেই। এ ভাইরাসটির কারণে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব, টেস্ট, করোনা পজিটিভ, নেগেটিভ প্রভৃতি শব্দ এখন মানুষের মুখে মুখে।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনের উহানে হলেও চীন মাত্র দুই মাসের মাথায় রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। চীনে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে চার হাজার ৭৩৩ জন। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ১০০ জন। করোনা সংক্রমণে প্রথম দিকে ইউরোপের ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং উপসাগরীয় দেশ ইরানের অবস্থা খুব খারাপের দিকে গেলেও শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। আমেরিকা করোনা ভাইরাসে মৃত্যু এবং সংক্রমণ উভয় দিকে এক নম্বর। করোনায় আমেরিকায় ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৯০ হাজার ৩৩৪ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৮ জন। করোনায় মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয়তম দেশ হচ্ছে ব্রাজিল। সেখানে এ সময়ে করোনায় মারা গেছে এক লাখ ২৮ হাজার ৫৩৯ জন। সংক্রমণের শিকার ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৯ জন। আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয়তম দেশ হচ্ছে ভারত। এ সময়ে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬৩। ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা ৭৫ হাজার ৬২। এরপর রয়েছে মেক্সিকো ৬৯ হাজার মৃত্যু, ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্যে ৪১ হাজার ৫৯৪ জনের মৃত্যু, ইতালিতে মৃত্যু ৩৫ হাজার ৫৭৭ জন। করোনা মোকাবেলায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে প্রশংসিত হয়েছে নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ।
কারোনা বাঘ এখন বিড়াল!
করোনাভাইরাসে প্রথম নাস্তানাবুদ হওয়া দেশ ইতালির স্যান মার্টিনো জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক রোগের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা: মাত্তিও বাসিত্তি গত জুনের তৃতীয় সপ্তাহে ভাইরাসটি নিয়ে তার এক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস শক্তি হারিয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্রতিষেধক ছাড়াই এটি নির্মূল হবে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এটি হিংস্র বাঘের মতো আচরণ করেছে। কিন্তু জিনগত পরিবর্তনের ফলে এটি এখন বুনো বিড়ালে পরিণত হয়েছে। ভাইরাসটির প্রাণঘাতী ক্ষমতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। একসময় দেখা যাবে, এটি সাধারণ বিড়ালে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে করোনা রোগীরা অনেক দ্রুত সেরে উঠছেন।’
ডা: বাসিত্তির সাথে তখন অনেক বিশেষজ্ঞই ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। তার পর্যবেক্ষণ এখন অনেকটা সত্যে পরিণত হচ্ছে। মনে হচ্ছে, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী তার থাবা গুটিয়ে আনছে। ভাইরাসের আগ্রাসী ভাবটা এখন আর অতটা নেই। ধীরে ধীরে দেশগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাধানম গেব্রেইয়েসুসও বলেছেন, এই ভাইরাস আপনা আপনি হয়তো যাবে না। এর সাথেই বসবাস করতে হবে। তবে দুই বছরের মধ্যে করোনা মহামারী বহুলাংশেই শেষ হবে। অবশ্য তিনি বলেছেন, বর্তমান বিশেষ উন্নত প্রযুক্তি ভাইরাসটিকে আটকে দেবে। অর্থাৎ তিনি কার্যকর টিকার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, স্প্যানিশ ফ্লু দুই বছরের মধ্যে শেষ হয়েছিল। ১৯১৮ সালের ওই ফ্লুতে পাঁচ কোটি লোক মারা যায়।