করোনার তেলেসমতি

সৈয়দ আবদাল আহমদ | Sep 13, 2020 05:48 pm
করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস - ছবি সংগৃহীত

 

করোনা মোকাবেলায় সরকার যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে। মানুষও জীবন-জীবিকার তাগিদে করোনাকে অগ্রাহ্য করছে। করোনাভীতি এখন আর নেই। ‘যা হওয়ার তাই হবে’- মানুষের এ ধরনের মনোভাব এখন করোনাভাইরাস নিয়ে।

অথচ কিছু দিন আগেও এই করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে কত বিচিত্র ঘটনা এবং তেলেসমাতি কাণ্ডই না ঘটেছে বাংলাদেশে! করোনার কারণে পরিবারকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আত্মীয় হয়ে গেছেন পর, পড়শিরা একে অপরের সাথে স্বার্থপর আচরণ করেছেন। যে বাড়িতে করোনা রোগী আছে খবর পাওয়া গেছে, সে বাড়ি অনেকটা একঘরে করে রাখা হয়েছে। বিদেশফেরত কারো খবর ফেলে সে বাড়িতে টানিয়ে দেয়া হয়েছে লাল নিশান; যেন নিষিদ্ধ বাড়ি। করোনা রোগী বা রোগীর পরিবারকে বাসা থেকে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। ডাক্তার বা নার্সকে বাসা ভাড়া দেয়া হয়নি, অথবা ভাড়া বাসা ছাড়তে বলা হয়েছে। করোনা রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে ঘুরে আরেক হাসপাতালে গিয়েও ভর্তি করানো যায়নি। চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। টাঙ্গাইলের সখীপুরে করোনা আক্রান্ত মাকে ছেলেরা জঙ্গলে ফেলে গেছে। তেমনি বোন, ভাই বা অন্য স্বজনকে করোনা হওয়ায় দূরে ফসলের ক্ষেতে রেখে আসার ঘটনাও ঘটেছে। করোনায় মৃতদের জানাজা পড়তে দেয়া হয়নি, কবরে লাশ দাফনে বাধা দেয়া হয়েছে। ঢাকার খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনায় মৃতদের দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে। দাফনে বাধা দেয়া হয়েছে। বাবা-মা কিংবা সন্তানের জানাজায় পর্যন্ত একে অপরে অংশ নেননি।

অন্য দিকে করোনা থেকে সুরক্ষার এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী কেনা ও বিতরণ নিয়ে হয়েছে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি। কোভিড-১৯ পরীক্ষায় প্রতারণা, ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ধুলায় মিশেছে। ইতালি থেকে বাংলাদেশী যাত্রীদের এবং ফ্লাইট ফেরত পাঠানো হয়েছে। করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়ে রিজেন্টের সাহেদ, জেকেজির ডা: সাবরিনা কোটি কোটি টাকা কামাই করে ধরা পড়েছেন। অথচ এই সাহেদ টিভি টকশোতে গিয়ে নীতিকথার খই ফুটিয়েছেন এত দিন।

করোনায় প্রবাসী বাংলাদেশীরাও ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছেন। দুই থেকে আড়াই লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে এসেছিলেন। তারা এখন যেতে পারছেন না। অনেকের চাকরি চলে গেছে। বিদেশে ২০টি দেশে ১৮২৯ জন বাংলাদেশী করোনায় মারা গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে মারা গেছেন ৭৮৮ জন।
করোনাভাইরাসের ক্ষত সহজে শুকাবে বলে মনে হয় না। মানুষ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে। সামাজিক সঙ্কট বেড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রাজধানী ছেড়ে গেছে ১৬ শতাংশ দরিদ্র মানুষ।
করোনায় অমানবিক ঘটনার বিপরীতে মানবিক আচরণেরও উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। আল মারকাজুল ইসলামী, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, রহমতে আলম ফাউন্ডেশন, আল রশিদ ফাউন্ডেশন, আল মানাহিল ফাউন্ডেশন, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা করোনায় মৃতদের দাফন ও সৎকারে এগিয়ে আসে। করোনায় সাড়ে চার হাজার এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রায় দুই হাজার লাশকে এসব সংস্থার মাধ্যমে ভালোভাবে শেষ বিদায় জানানো সম্ভব হয়েছে।

গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র করোনা কিট উদ্ভাবন করলেও সরকারি অনুমোদন পায়নি আজো। করোনা মহামারী নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নানা বেসামাল মন্তব্য মানুষের বিরক্তির সৃষ্টি করেছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষ ঘরে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক, বিভিন্ন ভিটামিন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক-পিপিইসহ বিভিন্ন ওষুধের মজুদ গড়ে তোলে। তেমনি গরম পানির ভাপ নেয়া, আদা তেজপাতা, লবঙ্গ, এলাচ সহযোগে গরম পানি পান, গড়গড়া করা, মধু, খেজুর, তুলসী, পুদিনাপাতা, কালিজিরাসহ দেশজ চিকিৎসার চর্চায় ব্যস্ত থাকে করোনা থেকে বাঁচার আশায়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us