বিপিন রাওয়াতের শঙ্কা
বিপিন রাওয়াত - ছবি সংগৃহীত
নেপাল চলমান সীমান্ত সঙ্ঘাত ও উত্তেজনার মধ্যে লিপুলেখ সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে নেপালের সেনা মোতায়েন কোনো সামান্য বিষয় নয়। নেপাল গত জুন মাসে পার্লামেন্টে নয়া মানচিত্র বিল পাস করে যেখানে ভারতের উত্তরাখন্ডের লিপুলেখ, লিমপিয়াধুরা এবং কালাপানি অঞ্চলকে নেপালের অংশ হিসেবে দেখিয়েছে। ভারতের দখলে থাকা প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে নেপাল তার নয়া মানচিত্রে ‘নিজেদের’ বলে দাবি করেছে। চীনও লিপুলেখ সীমান্তের কাছে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। একটি স্থায়ী সামরিক ছাউনি নির্মাণ এবং কৈলাশে মানসসরোবরের কাছে একটি লঞ্চ প্যাড প্রস্তুত করাসহ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। এসব প্রস্তুতি দেখে মনে হয় নেপালি সামরিক কর্মকাণ্ডে চীনের সমর্থন আছে।
চীন ও ভারত যদি কোনো যুদ্ধ শুরু করে পাকিস্তান কি আবার ‘মুরব্বিদের দোয়া’ চাইবে?
এবার আগেভাগেই পরের সিদ্ধান্ত আগে চলে এসেছে। পাকিস্তান ও চীন সামরিক কমিশন গঠনের কাজ এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। লাদাখ নিয়ে কোনো সংঘর্ষ হলে যুদ্ধ হঠাৎ চার দিকে আগুন ধরিয়ে দিবে। আফগান, নেপাল, পাকিস্তান সীমান্ত ছাড়াও যুদ্ধ ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। চীন একাই ভারতকে অরুণাচল, হিমাচল, সিকিম ও উত্তরাখন্ডে ঘিরে রেখেছে। লাদাখে চীনের পদক্ষেপে মনে হয় না কোনো জায়গা সে ভারতকে ছেড়ে দেবে, আর ভারতই বা কেন নিজের সীমান্ত এলাকা ছেড়ে দেবে? জানা যায়, পণ্ডিত নেহরু চীনের দাবি মতে উত্তর লাদাখ বা আকসাই চিন এলাকা ছেড়ে দিয়েছিলেন। নেহরু এলাকার দাবি ছেড়ে দেয়ার পর জানান যে, ‘আকআই চিন জায়গাটি অনুর্বর, ওখানে ঘাসের একটি পাতাও জন্মায় না।’ তাই ‘শুধু শুধু জায়গা পাহারা দিয় কী লাভ?’ ভারতীয় সমর বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে, হিমালয়ের ওই এলাকাটি ভূকৌশলগত দিক দিয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। লাদাখের এই বিষয়টি নিয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে নয়া দিগন্তে ‘সিয়াচেন কি দ্বিতীয় কাশ্মির’ নিবন্ধে বিস্তারিত লিখেছিলাম। মাও দে জংও সীমান্ত এলাকা নিয়ে ভারতের সাথে বেশি দেনদরবার করেননি। মাও ও নেহরুর সময়কাল আর নেই। এখন ভূরাজনৈতিক দুর্যোগের মহামারী চলছে। সূচাগ্র মেদিনীর জন্যও কোনো পক্ষই ছাড়া দিবে না।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ভারতের শীর্ষ প্রতিরক্ষা বিশারদ জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের ‘সমন্বিত পদক্ষেপের’ আশঙ্কা রয়েছে। তা হলে ভারত প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ফ্রন্ট নির্ধারণ করে রণনীতি সাজাবে। তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিস্থিতি বর্তমানে সামান্য উত্তপ্ত।’
ভারতের আন্তর্জাতিক শক্তিশালী মর্যাদা লাভের উচ্চাভিলাষ রয়েছে। ভারত দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে এটি আঞ্চলিক দেশগুলোর সংযোগস্থলে। ভারত অনেক দিন ধরেই ‘পরাশক্তি’ হওয়ার কথা ভাবছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চেঙ্গিস খান, আলেকজান্ডারের দিন এখন নেই। পরাশক্তি হতে হলে দেশের ভেতর গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করতে হবে। ভারতের বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির ধারাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা এবং অর্থনীতির ভিতকে সৃদৃঢ় করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র শুধু অস্ত্রের বলে শক্তিশালী নয়, ডলারের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চীনের বিরুদ্ধে সে কোল্ড ওয়ার শুরু করেছে। ভারতকেও তার অর্থনীতি, গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির প্রবাহকে গতিশীল রাখতে হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার