জাল ফেললেই ইলিশের ঝাঁক
ইলিশ - ছবি সংগৃহীত
ভোলার লালমোহনের মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে একটু দেরিতে হলেও ধরা পড়ছে প্রচুর রুপালী ইলিশ। হাসি ফুটে উঠছে জেলেদের মুখে। জমজমাট হয়ে উঠেছে মাছের আড়ৎগুলো। জেলে, আড়ৎদার ও পাইকারদের হাকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার মাছঘাটগুলো। এবার মাছ বিক্রির টাকায় লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী জেলে পরিবারগুলো।
জেলেরা জানায়, এ বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন না করে সরকারের প্রচলিত আইনকে সম্মান করায় অবরোধের দুই মাসের মাথায় নদীতে মাছের দেখা পাননি তারা। তবে এখন পর্যাপ্ত ইলিশ জালে ধরা পরছে। অবরোধের আগে বা অন্যান্য বছর নদীতে এতো মাছের দেখা মেলেনি। চলতি মাসে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলেছে। এমন কোনো জেলে নেই যে ইলিশ বিক্রির টাকায় মহাজনের দাদনের টাকা পরিষদ করেও পরিবারের ভবিষ্যৎ পুঁজি না করেছে। প্রতিটি জেলে পল্লীতে আনন্দে মেতে উঠেছে পরিবারের সদস্যরা।
লালমোহনের বাত্তির খাল, কামারের খাল, সর্দারের খাল, শামপাটারির কাঠির মাথা, গাইট্রা, বুড়ির দোন, চাঁদমিয়ার হাট সংলগ্ল ঘাট ও বেতুয়া স্লুইজ ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায়।
মেঘনার বাত্তির খাল এলাকার জেলে মাঝি মোঃ ঝান্টু জসিম ও শাহেআলম বলেন, গত কয়েক মাস সারাদিন জাল নিয়ে ছুটলেও ফিরতে হতো প্রায়ই খালি হাতে। কিছুদিন হলো এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা অনেক সন্তোষজনক। এক খেও দিয়ে ১০/১২ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
বুড়ির দোন এলাকার জেলে আঃ রহমান বলেন, চারদিনে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি, মাছের আমদানি অনেক ভালো। এতে অনেক জেলেই দাদন শোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
বেতুয়া স্লুইজের মাছ ঘাটের এক আড়তদার বলেন, নদীতে মাছ ধরা পড়ায় জেলে ও আড়ৎদাররা অনেক খুশি। দিন যতো বাড়ছে মাছের আমদানি ততো বাড়ছে। এখানকার মাছ স্থানীয় হাট বাজার ছাড়া ও ঢাকা, বরিশাল ও চাঁদপুর পাঠানো হয়।
মাহেআমল নামের এক আড়ৎদার জানান, মাছ ধরা পড়ছে গত অবরোধে মা ইলিশ না ধরার কারণে। অবরোধ কারণে মহাজনের দাদনের টাকা পরিষদের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন জেলেরা। আল্লাহপাক সব চিন্তা দূর করে দিয়েছেন। পর্যাপ্ত মাছ ধরা পড়েছে। এতে আশাকরি জেলেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
লালমোহনের মৎস্য কর্মকর্তা সুদিপ্ত মিশ্রর কাছে এ বছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার তথ্য জানতে চাইলে বলেন, গত প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা করার কারণে মূলত পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।
তবে স্থানীয় ক্রেতারা ক্ষোভের প্রকাশ করে জানান, আমাদের মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও আমরা জাটকা বা ছোট ইলিশ ছাড়া বড় কোন ইলিশ কিনতে পাইনা, যদি ও কিছু ব্যাপারী বড় মাছ হাট বাজারে আনলেও দাম ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাহিরে। স্থানীয় হাট বাজারগুলোতে কিছু জাটকা ইলিশের দেখা মিললেও বড় বড় ইলিশগুলো ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে নিয়ে যায় জেলেরা।
তাদের দাবি, জেলেরা যেন স্থানীয় জনগণের চাহিদা মিটিয়ে পরে বাইরে বিক্রি বা চালান করেন রুপালী ইলিশ।