চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা

মাসুম খলিলী | Sep 08, 2020 05:51 pm
চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব

চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব - ছবি সংগৃহীত

 

বাহ্যিক নানা ঘটনায় যাই দেখা যাক না কেন, বৈশ্বিক নেতৃত্ব এখনো বেশ খানিকটা যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই রয়ে গেছে। জ্ঞান বিজ্ঞান, সমরাস্ত্র, প্রযুক্তি ও অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ- এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব গ্রহণে চীন দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। দেশটি বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের। ২০২৪ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। সামরিক-বেসামরিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জনে দ্রুত সাফল্য পাচ্ছে বেইজিং। দশককালের মধ্যেই চীন বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে চলে যেতে পারে। চীনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটি প্রধান বৈশ্বিক শক্তি হতে চায়, যে সময় চীন হয়ে উঠবে বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান পরাশক্তি।

স্বাভাবিকভাবে চীনের এই উত্থান বিদ্যমান বিশ্বশক্তি, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র্রের জন্য উদ্বেগজনক। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় চীন যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটির উত্থানমুখী শক্তিকে পাশ্চাত্য সেভাবে মূল্যায়ন করেনি। দেং শিয়াও পিংয়ের নেতৃত্বে চীন বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে নিজেকে একাত্ম করার পর বিশ্বের শীর্ষ করপোরেট হাউজগুলো সস্তায় পণ্য উৎপাদনের জন্য তাদের শিল্পকারখানা চীনে স্থানান্তর করেছে। এতে করপোরেশনগুলো যেমন লাভবান হয় তেমনিভাবে কয়েক দশক ধরে চীনা অর্থনীতি প্রায় ডাবল ডিজিটে বিকশিত হতে থাকে। এভাবে চীন জাপানকে টপকে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগযোগ্য সবচেয়ে বেশি (জাপানের তিন গুণ) তহবিল জমা হয় চীনের হাতে।

এই অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের সাথে সাথে চীন তার প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক প্রযুক্তি বিকাশে ব্যাপকভাবে মনোযোগী হয়ে ওঠে। অনেকখানি বাধাহীন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধার পথ ধরে চীন আফ্রিকা এশিয়া এমনকি ইউরোপ আমেরিকাতেও একটি বড় স্থান করে নেয়। বিশ্বের অনেক দেশই চীনা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় বিশ্ব নিয়ন্ত্রকরা চীনকে সীমিত করার ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন।

শি জিন পিং চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আস্তে আস্তে খোলস থেকে বের হয়ে আসা শুরু করে দেশটি। উচ্চাভিলাষী ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট প্রকল্পের’ মাধ্যমে ইউরেশিয়া জুড়ে একটি বিশেষ বাণিজ্যবলয় এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তৈরির মাধ্যমে বিকল্প বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেয়। জাতিসঙ্ঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এ সংস্কার আনারও দাবি উঠায়। চীনের এই দ্রুত অগ্রসর হওয়াকে ঠেকাতে বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে দেয়। সভ্যতার দ্বন্দ্ব তত্ত্বের নতুন ব্যাখ্যায় চীনকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

করোনা-উত্তর সময়ে চীনবিরোধী এই আয়োজন সর্বাত্মকভাবে অবয়ব গ্রহণ করতে পারে। এ জন্য একটি চীনবিরোধী মহাজোট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকান ‘ডিপ স্টেট’। আগামী নভেম্বরের আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর সম্ভবত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবয়ব নেবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us