মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাপ উপমহাদেশে

মাসুম খলিলী | Sep 08, 2020 05:41 pm
মোদি ও মোহাম্মদ বিন সালমান

মোদি ও মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি সংগৃহীত

 

ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তেজনার সাথে মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া বা দক্ষিণ এশিয়ায় এখন যা কিছু হচ্ছে তার সবটার সাথেই মধ্যপ্রাচ্যের যোগসূত্র রয়েছে। ভারতের এখন সবচেয়ে বড় কৌশলগত মিত্র হলো ইসরাইল। ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চুক্তির পর আমিরাত আর ইসরাইল একই নিরাপত্তা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সৌদি আরব ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলো দৃশ্যত এই চুক্তিকে নানা কারণে অনুমোদন না করলেও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের আওতায় বিশেষ সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। কাতার কুয়েত ছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলো এবং মিসর নিজেদের কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেছে ইরান ও তুরস্ককে। আর এই প্রতিপক্ষের বিপরীতে ক্ষমতার ব্যাপারে ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয় পেতে চাইছে দেশগুলো। অথচ এই উপসাগরীয় দেশগুলো পাকিস্তানের অনেক দশক ধরে কৌশলগত মিত্র ছিল। সর্ব সাম্প্রতিক সময়ে সেই অবস্থার পরিবর্তন আসতে শুরু করে ইসরাইলের সাথে এসব দেশের বিশেষ সমীকরণ আর তেলআবিব-দিল্লি কৌশলগত সম্পর্কের কারণে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন আর সৌদি তেলের প্রধান ভোক্তা দেশ নেই। এখন চীন ও ভারতই হলো সৌদি জ্বালানি আমদানিকারক প্রধান দেশ। সৌদি আরব আমেরিকান তেলের বাজার খুঁজে পেতে চাইছে ভারতে। দেশটির ভারতে শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা আর ২৭ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি রফতানির বিষয়টি সৌদি আরবের সাথে পাকিস্তানের প্রায় সাত দশকের সম্পর্ককে উলটপালট করে দিয়েছে। পাকিস্তান ঐতিহ্যগতভাবে কাশ্মির ইস্যুতে ওআইসির সমর্থন পেয়ে এসেছে। এখন সেই সংস্থা তার পাশে না দাঁড়ানোর জন্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তার মূল কারণ সৌদি আরবের ভারতের সাথে সম্পর্কের নতুন বন্ধন। আমিরাত ভারতের সাথে কৌশলগত এই বন্ধন অনেক আগেই চূড়ান্ত করেছে। ভারত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনসংবলিত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর দিল্লিতে সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমিরাতের রাষ্ট্রদূত। এর অব্যবহিত পরে নরেন্দ্র মোদিকে বিশেষ সংবর্ধনাও প্রদান করেছে আমিরাত। আমিরাতের সাথে পাকিস্তানের এক সময় যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ইসরাইলের সাথে একান্ত সম্পর্ক গড়ার পর সেই সম্পর্ক এখন আর নেই। উপমহাদেশে আমিরাতের প্রধান মিত্র এখন ভারত।

অন্য দিকে সৌদি আরবের সামনে মুসলিম উম্মাহর অ্যাজেন্ডার চেয়েও টিপিক্যাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক গুরুত্ব পাওয়ার পর ইসলামাবাদ-রিয়াদ সম্পর্কও ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। এতে ইসরাইলের ডাবল সুবিধা, একদিকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা সহায়তা না থাকলে সৌদি আরব বেশি ইসরাইলনির্ভর হবে। অন্য দিকে সৌদি অর্থনৈতিক সহায়তা না থাকলে পাকিস্তান দুর্বল হবে এবং এর সুবিধা পাবে ভারত। কাশ্মির ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে টানাপড়েন সম্প্রতি দেখা গেছে সেটি এ কারণেই হয়েছে। তবে পাকিস্তান-সৌদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও যে নিরাপত্তা বন্ধন রয়েছে তা এতটা কঠিন যে, দুই দেশের কেউই রাতারাতি এই সম্পর্ক ছিন্ন করার অবস্থায় নেই। সৌদি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সাথে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। আর সৌদি আরবের সাথে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক সহায়তার বাইরে অপ্রকাশ্য অনেক নিরাপত্তাচুক্তি পাকিস্তানের রয়েছে যেখান থেকে চাইলে সাথে সাথে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।

কাশ্মির ইস্যুটি পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার জন্য একটি মরণপণ ইস্যু। আর এই ইস্যুতে দিল্লিকে সহায়তার সাথে সৌদি ও আমিরাতের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকখানি যুক্ত। আর সে সাথে ইসরাইলের প্রভাবতো রয়েছেই।

ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক যেভাবে তলানিতে নেমেছে এবং বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া ও কাশ্মিরে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ভারতের গোপন তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে চীনের সাথে অভিন্ন প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক বন্ধনের বিকল্প ইসলামাবাদের সামনে খুব বেশি নেই। অথচ রিয়াদ ও আবুধাবি অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে চীনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য।
বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষত এশিয়ার দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের অবস্থা বেশ জটিল রূপ নিয়েছে। প্রতিটি দিনই যেন এ সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর রূপ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের অক্ষ বিশ্বে একটি বড় রকমের পরিবর্তন প্রয়াসকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এর বিপরীতে চীন-রাশিয়া অক্ষেরও নিজস্ব হিসাব-নিকাশ রয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর সবার স্বার্থ একই ধারায় বহমান নয়। ফিলিস্তিন ইস্যুটি এক সময় মুসলিম দেশগুলোর অভিন্ন বন্ধন ও ঐক্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখত। সেই বন্ধন মিসর জর্দানও আমিরাত ইসরাইলি বলয়ে প্রবেশের মাধ্যমে বেশ খানিকটা ছিন্ন করেছে। সন্ত্রাসের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রলোভনে সুদানকে সেখানে ঢোকানোর প্রচেষ্টা চলছে। তবে সব দৃশ্যমান পরিকল্পনার ওপরে অদৃশ্য এক পরিকল্পনাও কাজ করে।
ফলে দুনিয়ার দৃশ্যমান অনেক হিসাব শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকে না। করোনার দুনিয়ায় এই বিষয়টি মানুষ অনেক নিবিড়ভাবে অনুভব করতে শুরু করেছে।

mrkmmb@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us