কারো ক্ষতি থেকে বিরত থাকাও সাদাকাহ
কারো ক্ষতি থেকে বিরত থাকাও সাদাকাহ - ছবি সংগৃহীত
মানুষের অন্যায্য অনৈতিক ব্যবহারে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অন্য মানুষ। বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। দিন দিন মানুষের মানসিক বিকৃতি বাড়ছে। হতাশা বা অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ জীবনে, বেঁচে থাকার প্রতিটি ধাপে। মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষ পাশবিক হয়ে উঠছে। এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সঙ্ঘটিত হচ্ছে না।
মানুষ দিন দিন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠছে। নিজেকে জাহির করা, নিজের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ প্রিয়জনকে হত্যার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে। নিজের জিদের লাগাম টানতে পারছে না মানুষ। একে অপরের ক্ষতি সাধন করা একবারে মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: অপরের অনিষ্ট তথা ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকাকে সাদাকাহ বা দান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আবু মুসা রা: বলেন, নবী সা: বলেছেন : প্রত্যেক মুসলমানের দান-খয়রাত করা ওয়াজিব।
সাহাবিগণ বলেন, সে যদি তা করতে সক্ষম না হয় বা তা করতে না পারে? তিনি বলেন : তাহলে সে স্বহস্তে কাজ করে নিজেকে লাভবান করবে এবং দান-খয়রাত করবে।
সাহাবিগণ বলেন, যদি তার সে সামর্থ্য না থাকে বা সে তা না করতে পারে? তিনি বলেন : তাহলে সে দুস্থ-বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে।
সাহাবিগণ বলেন, সে যদি তাও না করতে পারে? তিনি বলেন : তাহলে সে কল্যাণের বা সৎ কাজের আদেশ দেবে।
তারা বলেন, যদি সে তাও না করতে পারে?
তিনি বলেন : তাহলে সে অপরের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকবে। এটাই তার জন্য দানস্বরূপ। (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ)
অপর এক হাদিসে এসছে, আবু যার রা: থেকে বর্ণিত। নবী সা:-কে বলা হলো, সর্বোত্তম আমল কী?
তিনি বলেন : আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার পথে জিহাদ।
বলা হলো, আজাদ করার জন্য সর্বোত্তম গোলাম কে? তিনি বলেন : যার মূল্য সর্বাধিক এবং যে নিজ মনিব পরিবারের অধিক প্রিয়।
প্রশ্নকারী বলল, আপনার কী মতো, আমি যদি কোনো কোনো কাজ করতে সক্ষম না হই? তিনি বলেন : তাহলে কোনো কারিগরের কাজে সাহায্য করো অথবা অনভিজ্ঞ লোকের কাজ করে দাও।
সে বলল, আপনি কি মনে করেন, যদি তা করতে আমি অপারগ হই?
তিনি বলেন : তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে নিরাপদ থাকতে দাও। কেননা তাও সদাকা যা তোমার নিজের জন্য করতে পারো। (আদাবুল মুফরাদ-২২৫)
আসুন আমরা সাধ্যানুযায়ী মানুষের উপকার করি। তা করতে না পারলেও অন্যের অনিষ্ট করা থেকে নিজেকে বিরত রাখি। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন আমাদের অন্যের ক্ষতি করা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ইসলামিক স্কলার