যেভাবে ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মিত্রতা

লিং শেঙ্গালি | Sep 08, 2020 09:06 am
যেভাবে ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মিত্রতা

যেভাবে ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মিত্রতা - ছবি : সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার সাম্প্রতিক সময়ে উষ্ণ হয়েছে তথাকথিত গণতান্ত্রিক জোট এগিয়ে নেয়ার প্রয়াসে। অবশ্য কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি উভয়েই শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটি তাদের শাসনক্ষমতার ত্রুটি তুলে ধরেছে। দেশে সৃষ্ট চাপ সরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয় দেশের নেতাই লোকরঞ্জকবাদের উত্থানকে মদত দিচ্ছেন, আরো রক্ষণশীল ও উগ্র দেশপ্রেমিক পররাষ্ট্রনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে লোকরঞ্জকবাদ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে। আর তা আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকেও কঠিন করে তুলবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় উত্থানকে লোকরঞ্জকবাদের বিজয় হিসেবে দেখা হচ্চে। তিনি মেরুকরণ পরিচিতি, বর্ণবাদী ও দলান্ধতাকে উপভোগ করছেন। ভারতেও, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির পুনঃনির্বাচনের পর থেকে মোদি সরকার জাতীয়তাবাদ থেকে লোকরঞ্জকবাদের দিকে যাচ্ছে।
সহজভাবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়ে ক্রমবর্ধমান হারে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে এই প্রেক্ষাপটে যে তারা তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব চীনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে ভারতকে টেনে এনেছে, চীনের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য যৌথ শক্তি গঠন করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য, এটি হলো করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক মন্দার জোড়া চ্যালেঞ্জ সামাল দেয়ার চেষ্টা। চীনের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসন এমন এক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে যাতে করে অন্যান্য দেশকে বেইজিংয়ের ওপর চাপ দিতে বলা যায়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ওয়াশিংটন তার মিত্রদের, বিশেষ করে ফাইভ আই জোটের সদস্যদের, হুওয়াই, হংকং ও দক্ষিণ চীন সাগরের মতো ইস্যুতে তাকে অনুসরণ করতে বলছে। ওয়াশিংটন এখন বিপুলভাবে আশাবাদী যে তাদের সাথে নয়া দিল্লি থাকা চীনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারবেন।
লোকরঞ্জনবাদে তাড়িত হয়ে ভারত ক্রমবর্ধমান হারে পরাশক্তির মর্যাদা পেতে চাচ্ছে, চীনকে তার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে। চলতি বছর চীন যখন করোনাভাইরাস দমনে নিয়োজিত ছিল, তখন সুযোগ গ্রহণের চেষ্টা করেছিল ভারত। কিন্তু এজন্য ভারতকে বিপুল মূল্য দিতে হয়েছে, তার সৈন্যদের জীবন গেছে। এরপর ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের ব্যাপক চিৎকার শোনা গেছে। এর জের ধরে যুক্তিহীনভাবে বিপুলসংখ্যক চীনা অ্যাপস ও পন্য বয়কট করা হয়েছে, দুই দেশের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা ক্ষতির মুখে পড়েছে।
তথাকথিত যুক্তরাষ্ট্র-ভারত গণতান্ত্রিক জোট অভিন্ন স্বার্থের দৃঢ় ভিত্তির অভাবে রয়েছে।

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা সীমিত এবং তা পরিপূরক নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদিও ইতোমধ্যেই চীনকে সমস্যায় ফেলতে ভারতে তৈরী পণ্যকে উৎসাহিত করছে, কিন্তু স্বল্প মেয়াদে তা ফলপ্রসূ হওয়া যে অসম্ভব তা এর মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকা ফার্স্ট মতবাদভিত্তিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নীতি ভারতের জন্য শিথিল করতে আগ্রহী নয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় ধারণা করা হয়েছিল যে ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি সীমিত বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারত কিছু বাণিজ্য সুবিধা পাবে। কিন্তু কোনো বাণিজ্য চুক্তি হয়নি।

দ্বিতীয়ত, ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লির কৌশলগত ভিন্নতা রয়েছে। পরাশক্তিতে পরিণত হতে ভারতের নিজস্ব উদ্যোগ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার কৌশলগত আস্থা আছে সামান্যই। আর পরাশক্তির খেলায় অনুকূল অবস্থান লাভ করার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করছে নয়া দিল্লি, অথচ চীন ও রাশিয়ার সাথে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার জায়ান্ট ভারতকে ব্যবহার করছে ওয়াশিংটন।
তৃতীয়ত, উভয় দেশের উগ্র লোকরঞ্জকবাদ তাদের কৌশলগুলোকে আরো বেশি রক্ষণশীল ও ঘরোয়ামুখী করবে। তুলনামূলকভাবে বলা যায়, কোনো দেশ যত বেশি লোকরঞ্জক হবে, সে তত কম অন্তর্ভুক্তমূলক হবে। এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে আরো কঠিন করে তুলবে।

সংক্ষেপে বলা যায়, লোকরঞ্জকবাদে আক্রান্ত হয়ে তথাকথিত গণতান্ত্রিক জোট যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এমনভাবে একতাবদ্ধ হতে চাচ্ছে, যা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। লোকরঞ্জকবাদের ইগোভিত্তিক প্রকৃতি গণতান্ত্রিক জোটের অন্তর্ভুক্ততার সাথে ব্যাপকভাবে ভিন্ন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে প্রবল লোকরঞ্জকবাদ বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় দোটানার সৃষ্টি করেছে। দুই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ একে অপরের চেয়ে দ্রুত সুবিধা লাভের জন্য ছুটছে। নিজ দেশে লোকরঞ্জকবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সমাধানের চেষ্টা করা পরাশক্তির ধাচের সাথে মানানসই হয় না।

সূত্র : গ্লোবাল টাইমস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us