পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে সরকার
পেঁয়াজ - ছবি : সংগৃহীত
হঠাৎ করেই বাজারে পেঁয়াজে দাম আবারো বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বিপাকে পড়েছে সরকার। তিন দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে এই পণ্যটির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও সুযোগ বুঝে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুযোগটি নিয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের হাতে থাকা সপ্তাহখানেক আগে কম দামে কেনা পেঁয়াজও মওকা বুঝে কেজি প্রতি সর্Ÿোচ্চ ৩০ টাকা বাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজ এলাকাভেদে কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য দিকে আমদানি করা বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। আর এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ধনী লোকদের বাজার বলে বিবেচিত অনলাইন গ্রোসারি শপগুলো।
এ ধরনের একটি জনপ্রিয় অনলাইন ভিত্তিক গ্রোসারি শপ ‘চালডাল ডট কম’। এই কোম্পানি গেল সপ্তাহেও ২৯-৩০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। কিন্তু তারাও মওকা বুঝে এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৫০ টাকা কেজি দরে। তবে গতকাল সোমবার সোমবার এক টাকা কমিয়ে বিক্রির অফার দেয়া হয়েছে ৪৯ টাকা। অন্য দিকে গত সপ্তাহে চালডাল দেশী পেঁয়াজ ৪৫ টাকা করে বিক্রি করলে এখন তা বিক্রি করছে ৬৫ টাকা কেজি। অভিযোগ রয়েছে, এই কোম্পানিটি আগের কেনা কম দামের পেঁয়াজ এখন সুযোগ বুঝে বেশী দামে বিক্রি করছে। করোনার লকডাউনের সময়ও চালডাল সুযোগ বুঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম চড়িয়ে দিয়েছিল বলে ভোক্তারা মোটা দাগে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এসব দেখার আসলে তেমন কেউ ছিল না আর এখনো নেই।
এই যখন অবস্থা কোনো কারণ ছাড়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে একটু নড়েচড়ে বসেছে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টাস্ক ফোর্স কমিটি রয়েছে।
গতকাল এই কমিটির একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকে দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা কথা থাকলেও মূল আলোচনা সীমাবদ্ধ ছিল পেঁয়াজের দাম নিয়ে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বৈঠকে পেঁয়াজের মজুদ, আমদানি ও সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় আলোচনা করে বলা হয়Ñ দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে, আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। পেঁয়াজের সঙ্কট বা মূল্য বৃদ্ধির কোনো সঙ্গত কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুদ বা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করা হলে সরকার আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার মনিটরিং আরো জোরদার করেছে। পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অবিলম্বে খোলা বাজারে ট্রাক সেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করবে, নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুল্কহার পুনঃনির্ধারণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং আইপি ও কোয়ারেন্টিন বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায়, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্স কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি এবং বাণিজ্য সচিব ড. মো: জাফর উদ্দীন। এতে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফতানি মো: ওবায়দুল আজম, অতিরিক্ত সচিব(আমদানি) মো: হাফিজুর রহমান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আরিফুল হাসানসহ টাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্যগণ।
বৈঠকে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারকে মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সম্ভব হলে আগামী সপ্তাহ থেকে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়ত বন্ধ রেখে বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জরিমানার প্রতিবাদে আড়ত বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছে কিছু আড়তদার। তবে বিকেলে তারা ৩৫ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছিল বলে জানা গেছে।
গত রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তে অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় বাড়তি দাম রাখা এবং ইনভয়েস ছাড়া বেচাকেনা করার অপরাধে ১০টি আড়তকে ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ওই অভিযানের জেরে পেঁয়াজের আড়তদাররা গতকাল সোমবার সকাল থেকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই আড়ত বন্ধ রাখেন এবং অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় খুচরা ব্যবসায়ীরা মালামাল সংগ্রহ করতে এসে বিপাকে পড়েন। তাদের বিক্ষোভের কারণে সেখানে যানবাহন ও পথচারী চলাচলও ব্যাহত হয়। তবে অপর একটি সূত্র দাবি করেছে অভিযান ঠেকাতে আড়ত বন্ধ রাখলেও ভেতরে ভেতরে বিক্রি চলেছে এবং সেসব বিক্রিত পণ্য পরে পৌঁছে দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। গতকাল বিকেলের দিকে ৩৫ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি করা হচ্ছিল বলে জানা গেছে।