অস্ট্রেলিয়াকে কেন দূরে রাখছে ভারত!
অস্ট্রেলিয়াকে কেন দূরে রাখছে ভারত! - প্রতীকী ছবি
ভারত এখনো চীনবিরোধী জোটের অন্যতম মিত্র অস্ট্রেলিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে মালাবার নৌ মহড়ায় আমন্ত্রণ জানায়নি। অথচ নয়াদিল্লি আর বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা চলছে। তাছাড়া এ বছর মহড়া স্থগিত করা হবে কি না, সেটা নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে বলেও জানতে পেরেছে দ্য প্রিন্ট।
ভারতের শীর্ষ কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, নয়াদিল্লী এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যানবেরাকে জানায়নি যে, তারা মালাবার মহড়ায় অংশ নিতে চায় কি না। ভারত, জাপান আর যুক্তরাষ্ট্র এই মহড়ায় অংশ নিয়ে থাকে।
এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়াকে মালাবার মহড়ায় আমন্ত্রণ জানানোর অর্থ হলো বেইজিংকে এই বার্তা দেয়া যে, বৃহত্তর ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের দেশগুলো চীনের বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে। তবে সূত্র জানিয়েছে যে, এ ধরণের পদক্ষেপে বেইজিং বিরক্ত হতে পারে এবং সেটা সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য চলমান আলোচনার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মহড়া স্থগিত হতে পারে
মহড়ায় অংশগ্রহণকারী একটি দেশের এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর মালাবার মহড়া নাও হতে পারে। তাছাড়া নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রয়েছে; এবং অন্যদিকে, উত্তরসূরী ঘোষিত হওয়ার আগেই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
অক্টোবর কোয়াডভুক্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোয়াড সদস্যদের নিয়ে এটাই প্রথম আয়োজন নয়াদিল্লীর।
এই বৈঠকেরও মালাবার মহড়ার বিষয়টি উঠতে পারে।
ভারত আর জাপানের সামিট বৈঠকের এজেন্ডাতেও এ বিষয়টি রয়েছে। চলতি মাসেই জাপানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনলাইনে বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত আর জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকুইজিশান অ্যাণ্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (আকসা) চুক্তি করারও কথা রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া আর চীনের পরিবর্তিত সমীকরণ
২০০৭ সালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক মহড়ায় অংশ নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ২০১৫ সালে জাপান এতে যোগ দিলেও ক্যানবেরাকে আমন্ত্রণ জানানোর আগ্রহ দেখায়নি ভারত, কারণ অস্ট্রেলিয়ার সাথে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আর তাছাড়া, চীনের ব্যাপারে নিজের সমীকরণ বদলাতে চায় না ভারত।
তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে চীনের আগ্রাসী আচরণের কারণ এবং মহামারীর কারণে ক্যানবেরার সাথে বেইজিংয়ের দ্বিপাক্ষক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছন্দপতন ঘটে গেছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে মোদি আর অস্ট্রেলিয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন দুই দেশ সম্পর্ককে এগিয়ে ‘কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের’ পর্যায়ে নিয়ে যান। ‘মিউচুয়াল লজিস্টিক্স সাপোর্ট’ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অনেকখানি এগিয়ে যায়।
ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান অ্যাডমিরাল (অব.) অরুণ প্রকাশ দ্য প্রিন্টকে বলেন, ইন্দো-মার্কিন মালাবার নৌ মহড়া ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। কিন্তু ইন্দো-চীনের অচলাবস্থার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর গুরুত্ব বিশেষভাবে বাড়বে।
সূত্র : দ্য প্রিন্ট/এসএম