পেঁয়াজের বাজারে উত্তাপ : নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে কারা
পেঁয়াজ - ছবি : সংগৃহীত
হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকায় উঠেছে। তবে সোমবার নাগাদ পাইকারি বাজারে দাম আবার বেশ কমে এসেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে আমদানির চেয়ে বিক্রিতে পেঁয়াজের মূল্য বেশি রাখায় রবিবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেশ কয়েকটি পেঁয়াজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ কারণে সোমবার খাতুনগঞ্জের সব পেঁয়াজের আড়ত বন্ধ করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের পেঁয়াজ
ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ী আর আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে বৃষ্টিতে মজুদ থাকা পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সেখানে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সেই আঁচ এসে পড়েছে বাংলাদেশেও।
ঢাকার শ্যামবাজারের পেয়াজের আড়ৎদার আমজাদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, মাঝে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি একটু কমে গেছিল। আবার ভারতে বৃষ্টির কারণে পেয়াজের দাম বেড়েছে, এরকম খবরও পাওয়া যাচ্ছিল। তাই আমাদের এখানেও দাম একটু বেড়েছে।
তবে রবিবার থেকে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ৪/৫ টাকা কমে গেছে বলে তিনি জানান।
''গতকাল থেকে ভারতেও দাম কমেছে, আমাদের এখানেও কমে গেছে। ভারত থেকে কম দামে পেঁয়াজ আসলে দাম আরেকটু কমতে পারে।''
তিনি জানান, সোমবার ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৩৪-৩৬ টাকা দরে আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৪ টাকা কেজি দরে।
তবে ঢাকায় সোমবার খুচরা বাজারে দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা দরে।
সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয়
ঢাকার ধানমণ্ডির বাসিন্দা নাজমা আক্তার বিবিসিকে বলছেন, ''সোমবার সকালে আমি ৬০ টাকা দরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। সাধারণত দুই কেজি করে কিনি। কিন্তু গত বছরের মতো আবার দাম বেড়ে ৩০০ টাকা পার হয়ে যায় কিনা, সেই ভয়ে বেশি করে পেঁয়াজ কিনলাম। ''
আরেকজন ক্রেতা উম্মে সালমা বলছেন, ''বাসায় পেঁয়াজ আছে, তারপরেও পাঁচ কেজি কিনে রাখলাম, যদি দাম অনেক বেড়ে যায়, সেই চিন্তা করে। গত বছর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটা চিন্তা করলেই তো ভয় লাগে। কম খেতে পারি, একেবারে বাদ তো দিতে পারি না।''
গত বছর এই সেপ্টেম্বর মাস থেকেই ৩০ টাকা থেকে বেড়ে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম তিনশো টাকা ছাড়িয়ে যায়। এই ভয়ে এ বছর পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করায় আরও অনেককেই বেশি করে পিঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে।
কলাবাগানের কাঁচা সবজি বিক্রেতা আল আমীন বলছেন, 'আমরা পাইকারিতে যে দরে কিনি, তার সঙ্গে ৪/৫ টাকা লাভ যোগ করে খুচরা বিক্রি করি। রবিবার কাওরানবাজার থেকে পিঁয়াজ কিনেছি ৫৪ টাকা দরে, তাই সেটা ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি।''
অথচ এক সপ্তাহ আগেও ঢাকার খোলা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে।
কাওরানবাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলছেন, ''ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়লে দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়ে। আমরা আমদানিকারক বা শ্যামবাজার থেকে পেঁয়াজ এসে বিক্রি করি। সেখানে যে টাকায় পাবো, তার সঙ্গে সামান্য লাভ যোগ করে পাইকারি বিক্রি করি।''
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। তবে ভারত থেকে আমদানিতে সমস্যা হলে অন্য দেশ থেকেও আমদানি করা হয়।
সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু পেঁয়াজ ঘরে তোলার সময় প্রায় পাঁচ লাখ টন নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে থাকে।
অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানি হয় ১১ লাখ টন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ প্রয়োজন।
ভারতের বাজারেও পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০ থেকে ২৪ রুপি বেড়েছে।
তবে গত বছরের পুনরাবৃত্তি এইবার হবে না বলেই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
আড়ৎদার আমজাদ হোসেন বলছেন, এবার সেরকম কোন সম্ভাবনা নেই। কাঁচাপণ্য, দুই-পাঁচ টাকা ওঠানামা করতে পারে। কিন্তু গত বছরের মতো দাম লাগাম ছাড়িয়ে যাবে না।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলেই ভারতের বাজারে দাম কমবে, তখন দেশি পেঁয়াজের দামও কমে যাবে।
অক্টোবর মাসেই ভারতের বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার কথা রয়েছে।
জরিমানার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের আড়ৎ বন্ধ
পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগে রবিবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ মার্কেটে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সময় কাগজপত্র ছাড়াই আমদানিকারকদের কথার ওপর ভিত্তি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোয় ১০টি আড়ৎকে জরিমানা করা হয়।
এরপর সেখানে পেঁয়াজের দাম বেশ কমে আসে। তবে সোমবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা আড়ৎগুলো বন্ধ করে রাখেন।
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেছেন, জরিমানার শিকার ব্যবসায়ীরা আড়ৎ বন্ধ রাখার পর সব আড়তই বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তারা সমিতির পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচী দেননি।
তিনি দাবি করেন, আমদানিকারকদের দেয়া দরের ওপর ভিত্তি করেই আড়তদাররা পেঁয়াজ বিক্রি করেন। সেখানে তারা কোন মজুতদারি করেন না।
সূত্র : বিবিসি