দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়ে আত্মহারা উপকূলের জেলেরা। গত চার দিন ধরে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে এভাবে ধরা পড়ছে ইলিশ। গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো মহিপুর, আলীপুর, কুয়াকাটা অবতরণ কেন্দ্রের আড়তগুলোতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। 

কাক্সিক্ষত রূপালী ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের মুখে। এর ফলে মৎস্য বন্দর মহিপুর, আলীপুর ও কুয়াকাটার আড়তগুলোতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। ক্রেতা বিক্রেতাদের অবিশ্বাস্য ব্যস্ত সময় কাটছে। ট্রলার থেকে ঝুড়িতে করে শ্রমিকেরা ইলিশ এনে আড়তে ফেলছেন। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, কেউ ট্রাকে তুলছেন। অন্য দিকে মাপজোক ও দরদাম। পাইকারি ক্রেতারা দরদাম শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য কার্টনে ভরা শুরু করেন। ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের ছাদে করে সাগরের ইলিশ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরও সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই সময়সীমা শেষ হয়। করোনার কারণে ওই সময়টা জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেরা সাগরে নামলেও ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তারা। তবে এক সপ্তাহ ধরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
নিচকাটা এফবি আক্তার গাজী ট্রলারের সজিব মাঝি জানান, ৫০ হাজার টাকার রসদ সামগ্রী কিনে সাগরে নেমে তিনিও পাঁচদিন পর শনিবার সন্ধ্যায় ৮০০ ইলিশ নিয়ে মহীপুর মাছের আড়তে আসেন। প্রতি মণ ১৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। দাম পেয়েছেন দেড় লাখ টাকা।

মৎস্য বন্দর মহীপুর আড়তের কয়েকজন ট্রলার মালিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, এমনিতেই ধারদেনা ও মহাজনদের কাছ থেকে আগাম দাদন নিয়ে সাগরে নামাতে হয় ট্রলার নিয়ে। এতদিন তেমন ইলিশ ধরা না পড়ায় তারা দেনা পরিশোধ নিয়ে তিনি চিন্তায় ছিলেন। এই পূর্ণিমার পর গভীর সাগরে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরো ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তারা। সাগর থেকে ফিরে আসা জেলে ইউসুফ, কামরুল, মালেক, জসিম, নিজাম বলেন, গভীর সাগরে এখন প্রচুর ইলিশ। ইলিশ মৌসুম শুরু হওয়ার পর দেড় মাস সাগর মাছশূন্য থাকলেও এখন প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। তারা আরো বলেন, এখনো সাগরে অনেক ট্রলার আছে, যেগুলোতে প্রচুর মাছ রয়েছে। করোনার প্রভাব ও সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষেও তেমন মাছ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জেলেরা। তবে এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে এবং আকারেও বড়। তাই জেলেরা বেশ খুশি।

মহিপুর মৎস্য বন্দরের মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক জব্বার মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন পর সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই দামও একটু কমে গেছে।
আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা বলেন, হঠাৎ করে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া এবয় করোনার কারণে রফতানি না থাকায় ইলিশের দাম একটু কম। এখন যে ইলিশ ১৮ হাজার টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ্ বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ভবিষ্যতে আরো বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তিনি।