গলা-বুক জ্বালা, বমি ভাব, ডিসপেপসিয়া : কী করবেন, কী করবেন না
গলা-বুক জ্বালা, বমি ভাব, ডিসপেপসিয়া : কী করবেন, কী করবেন না - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের অতিমারির মধ্যেই অনেকেরই কখনো ডায়ারিয়া, কখনো বা গ্যাস কিংবা অ্যাসিডিটি, মাঝে মধ্যে গা-গুলিয়ে বমি নিয়ে অবস্থা খুবই খারাপ। এদের একমাত্র চিন্তা, যা খাবার খাচ্ছেন তা হজম হবে নাকি বদ হজম আর ডায়ারিয়া কিংবা অ্যাসিডিটি নিয়ে ভুগতে হবে কি না। মূলত ডিসপেপসিয়ার জন্য এমনটি হয়, বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার।
হজম সংক্রান্ত ও পেটের নানা সমস্যাকে এক সঙ্গে ডিসপেপসিয়া বলা হয়। অনেকের ধারণা, অ্যাসিডিটি মানেই ডিসপেপসিয়া। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। গা-বমি ভাব, অম্বল, পেট গুড়গুড় করা, খিদে পেলে বা অন্য সময় পেট ব্যথা, গলা জ্বালা, কখনো কখনো পেটের মধ্যে গ্যাস হয়ে পেট ফুলে যাওয়া, আবার পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠাকাঠিন্য ও ডায়ারিয়া হওয়া— সব একসঙ্গে হলে তাকে ডিসপেপসিয়া বলা হয়, বললেন দীপঙ্কর সরকার।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া দেখা যায়। অর্থাৎ শরীরের বিশেষ কোনো গুরুতর সমস্যা নেই। সঠিক ডায়েট না করার জন্য ও সামান্য কিছু সমস্যার কারণে এই ধরনের পেট সংক্রান্ত গোলমাল দেখা দেয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০% মানুষ ফাংশনাল ডিসপেপসিয়ায় ভোগেন। দীপঙ্কর বাবু জানালেন, এই ধরনের সমস্যা মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ততা থাকলে সমস্যা বাড়ে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেটের এই অসুবিধা বাড়তেই থাকে। একই সঙ্গে এও জানা গেছে যে, খাওয়াদাওয়ার ত্রুটিপূর্ণ অভ্যাস এই সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার যারা কথায় কথায় ওভার দ্য কাউন্টার ব্যথার ওষুধ ও অ্যান্টাসিড খান, তাঁদের সমস্যা অন্যদের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া থাকলে প্রায়শই পেটে ব্যথা করে। পর্যায়ক্রমে ডায়ারিয়া আর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রায় ৭০–৭৫% মানুষের সাধারণ ডিসপেপসিয়া থাকে। বাকিদের ডিসপেপসিয়ার পিছনে থাকতে পারে অন্য কোনো জটিল শারীরিক সমস্যা। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে অরগ্যানিক কারণ। পেটের অসুখ অথবা লাগাতার গ্যাস ও অ্যাসিডিটি হলে নিজেরা ডাক্তারি না করে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। দীপঙ্কর সরকারের মতে, লাগাতার পেটের সমস্যা হতেই থাকলে এবং মলের সঙ্গে রক্তপাত হলে বা কালো মলত্যাগ করলে কিছু টেস্ট করানো প্রয়োজন। রোগীর বয়স যদি ৫০-এর উপরে হয় ও রক্তাল্পতা থাকে, তখন গুরুতর অসুখের আশঙ্কার কথা ভাবতে হয়। এই সব লক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় খাবার গিলতে অসুবিধে হলে এবং পেটে হাত দিয়ে কোনো লাম্প বোঝা গেলে ম্যালিগন্যান্সির আশঙ্কা করা হয়। এক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করতে হতে পারে। তবে বেশির ভাগ সমস্যাই বিনাইন, অর্থাৎ সাধারণ সমস্যা, যা ওষুধ ও ডায়েটের সাহায্যে দূর করা যায় সহজেই।
ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া থাকলে কিছু কিছু খাবারের কারণে সমস্যা বাড়ে, বললেন নিউট্রিশনিস্ট ইন্দ্রাণী ঘোষ। যাদের গ্যাস, অম্বল আর কনস্টিপেশন অথবা ডায়ারিয়ার সমস্যা আছে, মাঝে মাঝে পেটের ব্যথায় কষ্ট হয়, দেখা গেছে বেশ কিছু খাবার খেলে কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। সেই সব খাবার একেবারেই খাবেন না।
দুধ, শাক, গমের প্রোডাক্ট, যেমন রুটি, বিস্কুট, ডিপ ফ্রাই অর্থাৎ তেলেভাজা খাবার, মিষ্টি, কফি, ফাস্টফুড যেমন রোল, চাউমিন ইত্যাদি রোজকার খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। বাড়িতে রান্না খাবার খেতে হবে, লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতেহবে। বেশি লবণ খেলে অ্যাসিডিটি বাড়ে, বললেন ইন্দ্রাণী। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে পেটে ব্যথা ও অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে।
ডিসপেপসিয়া হলে সাময়িক ভাবে ওষুধ খেতে হতে পারে। ফাংশনাল ডিসপেপসিয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই একবার ডাক্তার দেখিয়ে আজীবন গ্যাস, অম্বল ও হজমের সহায়ক ওষুধ খেয়ে যান। এর কোনো প্রয়োজন নেই। ওষুধের পরিবর্তে পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার ও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন। মন ভারো রাখতে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। খালি পেটে থাকবেন না আর অযথা বিস্কুট খাবেন না। এতে সমস্যা বেড়ে যায়। বিদায় জানান ডিসপেপসিয়াকে, ভালো থাকুন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা