বদলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য : কী করবে পাকিস্তান?

ড. জুনায়েদ এস আহমেদ | Sep 05, 2020 05:55 pm
বদলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য : কী করবে পাকিস্তান?

বদলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য : কী করবে পাকিস্তান? - ছবি : সংগৃহীত

 

দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাশ্মীরকে অগ্রাধিকার দেয়া ছাড়া পাকিস্তানের উপায় নেই। অবশ্য সৌভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তান সেটা করছে। ওআইসিতে সৌদির বিরোধীতার মুখে কাশ্মীর ইস্যু মোকাবেলার জন্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি যে বিকল্প মুসলিম ব্লক গড়ে তোলার কথা বলেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায় অর্ধ শতাব্দির মধ্যেও পাকিস্তানের দিক থেকে এ ধরণের ‘সঙ্ঘাতমূলক’ বিবৃতি শোনা যায়নি। বেশ কিছু ঘটনার কারণেই পাকিস্তানী সরকার প্রকাশ্যে সৌদ পরিবারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এভাবে কথা বলার ঔদ্ধত্য দেখালো।

কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন বাতিল করে ভারত একতরফাভাবে এই অঞ্চলকে তাদের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কাশ্মীরীদের ন্যায় বিচার নিয়ে অস্বাভাবিক সরব হয়েছেন। সৌদ পরিবার প্রাথমিকভাবে কাশ্মীর ইস্যুতে নয়াদিল্লীকে সমর্থন দিয়েছে। গত বছর কুয়ালা লামপুরে সম্মেলনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তানকে হুমকি দিয়েছিলেন, যেটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল অপমানজনক। সৌদি শাসকরা কি ধরণের ‘বন্ধু’ সেটার উপলব্ধি তখনই পাকিস্তানের হয়েছে।

একইসাথে, আরও বড় ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছে। ইসলামাবাদ আরও জোরালোভাবে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও স্বায়ত্বশাসনের ঘোষণা দিচ্ছে, এবং ঔপনিবেশিকতা-মুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও জোরদার হচ্ছে।

বৈশ্বিক রাজনৈতিক অর্থনীতির কিছু পরিবর্তনের কারণে পাকিস্তান এমন একটা পর্যায়ে গেছে, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই শক্তি যুক্তরাষ্ট্র আর চীন ইসলামাবাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তান থেকে সরে আসার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি পাকিস্তান সরকারের উপর নির্ভরশীল। চীনের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়ার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ওয়াশিংটনের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে ওঠায় চিন্তিত হয়ে উঠছে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, মার্কিন নৌবাহিনী চারপাশ থেকে চীনকে ঘিরে ফেলায় এবং বেইজিংয়ের সাথে তাদের সঙ্ঘাতে যাবার মানসিকতার কারণে পাকিস্তান গোয়াদর বন্দরটি আক্ষরিক অর্থেই চীনের প্রাণসঞ্জিবনী হয়ে উঠতে যাচ্ছে, যেটার মাধ্যমে অতি দরকারী জ্বালানি বহন ও বৈশ্বিক বাণিজ্যে অংশ নেবে চীন।

সেই সাথে এটাও স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য একটা পরিবর্তন এসেছে। বেসামরিক সরকারের প্রধান ইমরান খান আর সামরিক হাই কমান্ডের আধিপত্য বিস্তারকারী অংশের পররাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি মোটামুটি অভিন্ন। এটা নিয়ে পাকিস্তানের অনেক ‘পশ্চিমাপন্থী’ উদারপন্থীরা অখুশি।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক জায়নবাদের দুর্বলতা এখন পুরোপুরি প্রতিভাত হয়েছে। দক্ষিণ ও উত্তর গোলার্ধের বহু মিলিয়ন মুসলিম যখন ফিলিস্তিনি, কাশ্মীরী আর অন্যান্য নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তখন চরম ভণ্ডামির পরিচয় দিয়েছে সৌদি আরব, আরব আমীরাত আর মিশর। ইসরাইল আর ভারত যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তার বিরুদ্ধে কথা বলা থেকেই শুধু তারা বিরত থাকেনি, বরং তাদের নেতাদেরকে তারা পুরস্কৃত করেছে এবং ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে তাদের অপকর্মের বৈধতাও তারা দিয়েছে।

এই বৈপরীত্য গোপন করে রাখার আর উপায় নেই। ইসলামাবাদকে এখানে একটা উপায় বেছে নিতে হবে। অন্যান্য শক্তির কাছে নত হয়ে থাকার অপমান থেকে বের হয়ে আসার পর মনে হচ্ছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আরেকটি বিরক্তিকর জায়গায় অনুগত থাকা থেকে পাকিস্তানকে বেরিয়ে আসতে হবে- সেটা হলো সৌদ পরিবার।

সৌভাগ্যের বিষয় হলো, পাকিস্তানী নেতৃত্বের সামনে এখান স্বাধীনভাবে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সুযোগ রয়েছে, যেখানে তারা তুরস্ক, ইরান, কাতার ও মালয়েশিয়ার মতো অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়তে পারবে। সত্যিকার অর্থে উপনিবেশমুক্ত হওয়া এবং অর্থপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের সেটাই একমাত্র পথ।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us