দাড়ি নিয়ে ভাবনা
ইংরেজ ক্রিকেটার মইন আলি - ছবি : সংগৃহীত
আরবি শব্দ লাহি (চোয়াল) থেকে আগত লিহইয়াহ অর্থ দাড়ি। দাড়ি নবীর সুন্নাত যা একজন মুসলিম পুরুষের জন্য আবশ্যক। অথচ মিথ্যার মায়াজাল কিছু মানুষকে সত্য থেকে দূরে রাখে। দাড়ি সমস্যা একটি অনাহুত সৃষ্টি। দাড়ি না রাখার অজুহাত নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বহন করে। দুনিয়ায় রাসূল সা:-এর চেয়ে স্মার্ট কেউ নেই, চলনে-বলনে তিনি সমগ্র জাতির মডেল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য আছে উত্তম আদর্শ। (সূরা নিসা : ৮০)
অজুহাত নিরসন : এক শ্রেণীর চাকরিজীবী মন্তব্য করেন, অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অধ্যাদেশনুযায়ী কর্মচারীরা চলতে বাধ্য, সেখানে স্মার্টনেসের একটা ফিডব্যক পাওয়া যায়, নানা ধরনের সুযোগ দাড়ি রাখলে হাত ছাড়া হয়ে যায়। আর কিছু অফিসে তো নির্দেশই দেয়া থাকে দাড়ি না রাখার, সেজন্য রাখছি না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কাকে খুশির জন্য আমাদের চলা উচিত, আল্লাহকে নাকি অফিসের বসকে?
এক শ্রেণীর ছাত্রের অভিমত; ক্লাসে দাড়ি রেখে যাওয়া আর হাসির পাত্র সাজা একই, আর এখন স্টাডির সময়, জীবন উপভোগের সময়, এ সময় দাড়ি রাখলে অল্প বয়সেই বৃদ্ধ দেখা যায়। অথচ তাদের অজানা এ বয়সই ইবাদতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ।
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল-সা: এর মাঝে তোমাদের জন্য আছে উসওয়াতুন হাসানাহ। (নিসা : ৮০) আসল কথা হচ্ছে দাড়ি অশোভন হলে আল্লাহ দাড়ি দিতেন না, কারণ তিনি মানুষকে সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।
সম্মানের মাপকাঠি দাড়ি : পৃথিবীর বহু মনীষী দাড়ি রেখে প্রমাণ করে গেছেন দাড়িতে সম্মান বৃদ্ধি পায়। বিশ্বকবি হিসেবে পরিচিত রবিন্দ্রনাথ নিজ আবক্ষ বিলম্বিত দাড়ি নিয়ে পৃথিবী ভ্রমণ করে প্রত্যেক স্থানে সম্মানের আসনে বসেছেন। হিন্দু সন্নাসী, খ্রিষ্টান পাদ্রি, মুসলিম সম্প্রদায় পীর ও আলেমগণ দাড়ি রেখে থাকেন। এতে প্রমাণ হয় যে দাড়ি ধার্মিকতা ও রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে।
দাড়ি স্বাস্থ্যবিধি : শ্লেষ্মার আক্রমণ হতে নিরাপত্তায় দাড়ি অনুকূল ভূমিকা পালন করে। দাড়ি শেভ করার ফলে মুখমণ্ডলের সূক্ষ্ম স্নায়ুগুলো বারংবার আহত হয়, এ আঘাত চোখের শিরাসমূহে পৌঁছে যার ফলে দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়। এই দাড়ি শেভের ফলেই সংক্রামক রোগসমূহ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
বার্লিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর মূর বলেন, ত্বকের জন্য আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি অত্যন্ত ক্ষতিকর, এ রশ্মি সূর্যকিরণের সাথে মিশে ত্বকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া শেভ করার কারণে পিটুইটারি গ্লান্ডে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেয় ও নার্ভ সিস্টেম মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। দাড়ি শেভ করার কারণে ত্বক ও শরীর যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয় সম্ভবত অন্য কোনো কারণে শরীরে এত ক্ষতি হয় না।
সালেহীনদের মতামত : হজরত আয়েশা রা: বলেন, ১০টি বিষয় সব নবী রাসূলগণের সুন্নাত তার মধ্যে গোঁফ ছোট করা ও দাড়ি লম্বা করা অন্যতম। (মুসলিম শরিফ : ১/১২৯)
মুসলিম পুরুষদের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব- এ বিধান বিভিন্ন হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে, হানাফি মাজহাবের কিতাব আদ্দুররুল মুখতার গ্রন্থে উল্লেখ আছে দাড়ি কাটা হারাম। দাড়ি এক মুষ্টির চেয়ে ছোট করা মেয়েলি স্বভাব, আর পুরোপুরি কেটে ফেলা ফারসি ও হিন্দুস্তানি মুশরিকদের প্রথা।
আল উম্ম গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম শাফেয়ির মতে দাড়ি মুণ্ডন হারাম। এছাড়া হাম্বলি আলেমদের মাঝে এ ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই।
আল মুহাল্লায় উল্লেখ আছে, ইবনে তাইমিয়াহ বলেন, সহিহ হাদিস থেকে প্রাপ্ত হুকুমের ফলে দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম। কোনো আলেম কখনোই এর অনুমোদন দেননি।
তাফসিরে রুহুল মায়ানির ১৭ পারার ৬৬ পৃষ্ঠায় নিম্নলিখিত হাদিসটি উল্লেখ আছে, হজরত দাউদ আ: বলেছেন, ১০টি কুকর্মের দরুন হজরত লুৎ আ:-এর কওম ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে, তার মধ্যে ১. দাড়ি কর্তন। ২. মোচ লম্বা রাখা। ৩. হাতে তালি দেয়া। ৪. রেশমি বস্ত্র পরিধান করা ইত্যাদি।
ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতি হচ্ছে, শরিয়ত প্রবর্তক কর্তৃক কে নো বিষয়ের প্রতি সাধারণ নির্দেশ হলে তা পালন ওয়াজিব ও বিপরীত করা হারাম। আল্লাহ বলেন, যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রমাণিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ওই দিকেই ফেরাব যেদিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টদের গন্তব্য। (সূরা নিসা : ১১৫)
রাসূলের অনুসরণ হোক পূর্ণভাবে : রাসূলের সুন্নাতকে ভালোবাসার মানে খাবারের পর কেবল মিষ্টি ও অজুর পূর্বে মেসওয়াকেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। আরো কিছু সুন্নাত আছে, যা নিজ স্বার্থে যুক্তি দিয়ে দূরে না ঠেলে বরং উম্মতে মোহাম্মদি হিসেবে যথাযথভাবে পালন আবশ্যক।
রাসূল সা: বলেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে মুহাব্বত করে সে যেন আমাকেই মুহব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে। (তিরমিজি শরিফ, মেশকাত শরিফ, পৃ : ৩০)
রাসূলের সুন্নাত পালনকারীই প্রকৃত স্মার্ট : ফিতরাতের বিপরীত কাজ করতে করতে আমাদের চোখে বিকৃতটাই স্বাভাবিক হয়েগেছে। দাড়ি শেভ করা ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানানো মানেই দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত একটি বিধানের বিরোধিতা করা। আর যদি দাড়ির বিধান না জেনে দাড়ি মুণ্ডন সমর্থন করা হয় তবে তা কুফুরি হবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা নিসার ৮০ নং আয়াতে বলেছেন, যে রাসূলের আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। ব্যক্তি স্বার্থে নিজের জীবন স্থির না রেখে একটুখানি বুদ্ধির সাথে যদি রাসূল সা:-এর সুন্নাত অনুযায়ী চলা যায় তবে সহজেই দুনিয়াদারি দ্বীনদারিতে পরিণত হবে।
মহান রাব্বুল আলামিন প্রতিটি মুসলিম যুবককে রাসূলের সুন্নাত জীবনে বাস্তবায়নের জান্নাতি সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।