আসামের এনআরসি : এরপর কী?

রাজীব ভট্টাচার্য | Sep 05, 2020 08:50 am
আসামের এনআরসি : এরপর কী?

আসামের এনআরসি : এরপর কী? - প্রতীকী ছবি

 

ভারতের সীমান্ত রাজ্য আসামে বাস্তবায়িত বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) এক বছরেরও বেশি সময় আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো এর অচলাবস্থা কাটেনি। ২০১৫ সালে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল আসামের ভারতীয় নাগরিকদের তালিকা চূড়ান্ত করা। বাংলাদেশ থেকে আসা বিদেশী নাগরিকদের ঢল (যা অনেক বছর ধরেই বিতর্কিত বিষয় হিসেবে বিরাজ করছে) প্রতিরোধ করার জন্য এই প্রক্রিয়াটি প্রয়োজন বলে মনে হয়েছিল।

গত বছরের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত তালিকা থেকে প্রায় ২০ লাখ লোককে বাদ দেয়া হয়। তাদেরকে এখন তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে তাদের দাবি পেশ করতে পারবে এবং ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতগুলোতে আপিল করতে পারবে।

অবশ্য প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে আছে এবং নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। তবে তা করার জন্য তাদের বাদ পড়ার কারণসহ এনআরসি সচিবালয় থেকে ‘প্রত্যাখ্যান স্লিপ’ পেতে হবে। ওই প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি। অবশ্য, মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, আগামী মাসে তা শুরু হতে পারে।
তাছাড়া বিচারকাজ ত্বরান্বিত করার জন্য ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এই লক্ষ্যে ২২১ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের এখনো নিয়োগ দেয়া হয়নি।
ভারত সরকারের সাথে অল আসাম গণ সংগ্রাম পরিষদের ১৯৮৫ সালের চুক্তির আলোকে এনআরসি হচ্ছে। তবে তখনই এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। স্থবির হয়েই ছিল। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের কারণে প্রক্রিয়াটির সূচনা ঘটে।এই কাজে জড়িত ছিল প্রায় ৫০ হাজার সরকারি কমৃী, আর ব্যয় হয় ১২ বিলিয়ন রুপিরও বেশি।
সরকার মনে করে যে, অনেক বিদেশী নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে এনআরসিতে তাদের নাম প্রবেশ করিয়েছে। ২০১৮ সালে রাজ্যের এনআরসি সমন্বয়কারী প্রতীক হাজেলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে অভিযোগ করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণা ঘটেছে। এ কারণে তালিকাটি বাতিল করা দরকার। আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেয়।

আসামের কয়েকটি নাগরিক সমাজের সংস্থা নিবন্ধনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে আসাম সরকার রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আরো বেশি নজর দেয়ার ওপর জোর দিয়েছে।

গত বছর ভারতীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন আসামসহ ভারতজুড়ে প্রতিবাদের সৃষ্টি করে। এই আইন রাজ্যে এনআরসির সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে। নাগরিকত্ব আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে পালিয়ে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির শেষ সময় ধরা হয়েছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ওই আইনে অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব পেতে ১২ বছরের বদলে ছয় বছর করা হয়েছে।
এনআরসির শেষ তারিখ ছিল ১৯৭১ সাল। এখন তা ২০১৪ করায় আসামজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।কারণ নতুন ব্যবস্থার ফলে বিপুল সংখ্যা অমুসলিম বিদেশী আসামের নাগরিক হয়ে যাবে। এতে করে রাজ্যের জনসংখ্যা ও সাংস্কৃতিক চিত্র পাল্টে যাবে। ভারত সরকার উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্যে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) অ্যাক্ট থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। কিন্তু আসামের একটি বড় অংশ এর ব্যাপ্তির মধ্যেই রয়েছে।

দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us