চীন সীমান্তে ভারতের বিশেষ বাহিনী
চীন সীমান্তে ভারতের বিশেষ বাহিনী - প্রতীকী ছবি
পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলে চীন ও ভারত সীমান্তের প্যাংগং হ্রদের তীরে মাইন বিস্ফোরণে ভারতের স্পেশাল ফোর্সেস ইউনিটের একজন কমান্ডো নিহত ও অপর একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ভারতের তিনজন সরকারি কর্মকর্তা ও নিহত কমান্ডোর পরিবারের দুই সদস্য এমনটি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ভারতীয় বাহিনীর স্বল্প পরিচিত একটি অভিজাত যোদ্ধা বাহিনীর অস্তিত্বের বিষয়টি সামনে এসেছে । রয়টার্স।
নিহত তেনজিং নিয়াম নামের ৫৩ বছর বয়সী ওই কমান্ডো ভারতে আশ্রয় নেয়া তিব্বতি পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে। তিনি ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের (এসএফএফ) অংশ ছিলেন বলে তার পরিবার ও ভারতের ওই সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসএফএফের অধিকাংশ সদস্যকেই ভারতে আশ্রয় নেয়া তিব্বতি শরণার্থী পরিবারগুলো থেকে নেয়া হয়েছে। ১৯৫৯ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর কয়েক লাখ তিব্বতি পরিবার দালাই লামার সাথে তিব্বত থেকে পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এসএফএফএ কিছু ভারতীয় নাগরিকও আছেন।
১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধের পর গোপন এই বাহিনীটি গড়ে তোলা হয়, প্রকাশ্যে এদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য নেই। ভারতীয় দুই কর্মকর্তার হিসাব মতে, এই বাহিনীটিতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সৈন্য আছে। ভারতীয় সরকারের তিব্বতবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অমিতাভ মাথুর বলেছেন, ‘সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট উচ্চতায় যুদ্ধ ও পবর্তারোহণে পারদর্শী এসএফএফ মূলত ক্রাক ফোর্স। যদি তাদের মোতায়েন করা হয়, আমি আশ্চর্য হবো না। তদের উঁচু পর্বতগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তারা অত্যন্ত দক্ষ পবর্তারোহী ও ভয়ঙ্কর কমান্ডো।’
এসএফএফের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও ভারতের প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি। ভারতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তিব্বতিদের উপস্থিতিকে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে চীন। শরণার্থীদের নেতৃত্বদানকারী তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামাকে ‘বিপজ্জনক বিচ্ছন্নতাবাদী’ হিসেবে দেখে বেইজিং।
দালাই লামা জানিয়েছেন, তিনি শুধু তার মাতৃভূমির সত্যিকার স্বায়ত্তশাসন চান। বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছানইং বলেছেন, তিব্বতিরা ভারতের হয়ে যুদ্ধ করছে কি না, তা তার জানা নেই কিন্তু সাবধান থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতসহ যেকোনো দেশেরই তিব্বতীয় স্বাধীনতাপন্থী বাহিনীগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার সমর্থন অথবা তাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা ও ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার দৃঢ় বিরোধী আমরা।’
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেক সীমান্ত এলাকায় চীন ও ভারতীয় বাহিনী প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে এসেছিল বলে দেশ দু’টির সরকার জানিয়েছে। জুনে একই এলাকায় দুই বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল। চীনে তাদের দিকে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
গত শনিবার লাদাখে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে একজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন, বিদেশী সংবাদমাধ্যমে এমন খবর এসেছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তবে এ নিয়ে নয়াদিল্লি বা ভারতের সেনাবাহিনী সরকারিভাবে কিছু জানায়নি বলে জানিয়েছে তারা। আনন্দবাজারের খবরে নিহত ওই সেনা তিব্বতি এবং তিনি ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সদস্য ছিলেন বলে জানানো হয়েছে। কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, নিয়াম তেনজিং নামের বিকাশ রেজিমেন্টের ওই সেনার মৃত্যু হয়েছে মাটিতে থাকা পুরনো মাইন ফেটে।
সিআরপিএফ সদস্যদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
কলকাতা২৪ ও ইন্ডিয়া ডটকম জানিয়েছে, নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ভারতের আধাসামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) সদস্যদের উপরে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, অতি স্পর্শকাতর এলাকায় স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে না। যে ফোনে রেকর্ড করা যায়, তথ্য সুরক্ষিত করা যায়, সেই ধরনের ফোনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। সিআরপিএফের সব কর্মীদের জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হবে বলে জানানো হয়েছে।
সিআরপিএফ জওয়ান, সিভিল স্টাফের প্রত্যেককে এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যদি কেউ এ ধরনের স্মার্ট ফোন নিয়ে অফিসে আসেন, তবে তা নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা রাখতে হবে। পরে ফেরার সময় সেটি ফেরত পাবেন তিনি। সিআরপিএফ নিজের গাইডলাইনে জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ তথ্য সুরক্ষার জন্যই এ ব্যবস্থা। ফোর্সের নিরাপত্তাও এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে। মৌলিক নীতি মেনে চলাই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে জানিয়েছে সিআরপিএফ।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, সিআরপিএফের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কোনোভাবেই তথ্য ফাঁস বা তথ্যের নিরাপত্তাহীনতাকে বরদাশত করা হবে না। এতে দেশের স্বার্থ জড়িত। তাই স্মার্টফোন ব্যবহারে রাশ টানা হয়েছে। তবে অতি স্পর্শকাতর এলাকাতেই এই নিয়ম বলবৎ থাকবে।
উল্লেখ্য, সিআরপিএফ দুই ধরনের ফোন ব্যবহার করে। স্মার্টফোন ও মোবাইল ফোন। এই স্মার্ট ফোনে থাকে উচ্চ উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা, তথ্য সুরক্ষার গোপন ব্যবস্থা, ইন্টারনেটের ব্যবহার, রেকর্ডিং করার ব্যবস্থা। অতি স্পর্শকাতর, স্পর্শকাতর, ও কম স্পর্শকাতর এলাকা অনুযায়ী ফোনের ব্যবহার করে সিআরপিএফ। কম স্পর্শকাতর এলাকায় যথেষ্ট ভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপার নেই বা নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কড়াকড়ি নেই, সেখানে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন সবাই। মধ্য মাত্রার স্পর্শকাতর এলাকার মধ্যে পড়ছে প্রত্যক্ষভাবে কোনো বিশেষ তথ্য সুরক্ষা, প্রশাসনিক আধিকারিকের নির্দিষ্ট অফিস সুরক্ষা, হাসপাতালের সুরক্ষা ক্ষেত্র। তবে জানানো হয়েছে স্মার্টফোন ব্যবহার করার আগে সিআরপিএফ সদর দফতরের অনুমতি প্রয়োজন।