ঘুম নিয়ে যা বলেছেন আল্লাহ
ঘুম নিয়ে যা বলেছেন আল্লাহ - প্রতীকী ছবি
আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের জন্য বিভিন্ন কর্ম নির্ধারণ করেছেন, আর তাদের কর্মের ক্লান্তি দূর করে ফের নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর জন্য ‘ঘুম’ নির্ধারণ করেছেন। তিনি তাঁর সৃষ্ট জীবের জন্য যেসব নিয়ামত দিয়েছেন, তার মধ্যে ‘ঘুম’ অন্যতম। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্য।’ (সূরা ফোরকান : ৪৭)
ঘুমকে প্রত্যেক জীবের জন্য প্রশান্তির মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছে কুরআন- ‘আমি তোমাদের ঘুমকে শান্তির উপকরণ বানিয়েছি। আর আমি রাতকে তোমাদের জন্য আবরণ করে দিয়েছি।’ (সূরা নাবা : ৯-১০) কুরআনের বিভিন্ন তাফসিরে ঘুমকে আল্লাহ তায়ালার ‘অসাধারণ একটি নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা প্রত্যেক সৃষ্টিই নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনের পর আল্লাহর দেয়া ব্যবস্থাপনায় ঘুমিয়ে পড়ে এবং সম্পূর্ণ অক্ষম ও অচেতন হয়ে যায়। এ নিদ্রাই তার ক্লান্তি দূর করে এবং পরবর্তী সময় জীবনপথে আরো কঠিন পরিশ্রম করতে নতুন করে শক্তি জোগায়।
নিদ্রা শেষে মানুষ যখন জেগে ওঠে, তখন নিদ্রাবস্থায় সে কোথায় কী অবস্থায় ছিল তার কিছুই বলতে পারে না। যেমন কুরআনে বর্ণিত গুহাবাসী কয়েকশ’ বছর ঘুমিয়ে জাগ্রত হওয়ার পর তারা নিজেরা বলাবলি করছিল, তারা একদিনের কিছু বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। অনেক মৃতকে দেখে মনে হয়, সে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। আবার অনেক ঘুমন্ত ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে মরার মতো করে ঘুমাচ্ছে। তাই তো ইসলাম বাস্তবধর্মী এক ঘুমের দোয়া শিক্ষা দিয়েছে। তাতে ঘুমানোর আগে পড়তে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’ যার অর্থ ‘হে আল্লাহ আপনার নামে আমরা মৃত্যুবরণ করি আবার আপনার নামেই জীবিত হই।’ আবার জাগ্রত হওয়ার পর পড়তে বলা হয়েছে- ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহ ইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিননুশুর।’ যার অর্থ ‘সব প্রশংসা ওই আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত করেন এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবো।’
আর এ জন্য কুরআনে ঘুমকে এক প্রকার মৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা (মানুষের) মৃত্যুর সময় তার প্রাণবায়ু বের করে নেন, আর যারা ঘুমের সময় মৃত্যুবরণ করেনি (তিনি তখন) তাদেরও (রুহ বের করেন), অতঃপর যার ওপর তিনি মৃত্যু অবধারিত করেন তার প্রাণ তিনি (ছেড়ে না দিয়ে) রেখে দেন এবং বাকিদের (রুহ) একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছেড়ে দেন, নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা জুমার : ৪২) ঘুম মানুষের শুধু শারীরিক ও মানসিক চাহিদাকেই পূরণ করে না, বরং তার কঠিন সংগ্রামপূর্ণ জীবনে স্নিগ্ধ প্রশান্তিও বয়ে আনে। এটি জীবনের এমন এক আরামপ্রদ অনুষঙ্গ, যা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাকে কিছু সময়ের জন্য সে পূর্ণ প্রশান্তির কোলে ঢলে পড়ে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘(স্মরণ করো) যখন তিনি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের নিরাপত্তা ও স্বস্তির জন্য তোমাদের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে দিয়েছিলেন।’
আল্লাহ তায়ালা এভাবে যুদ্ধের ময়দানেও শান্তিদায়ক ঘুমের মাধ্যমে তাদের শক্তি জুগিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালার এ ব্যবস্থাপনার আরো একটি দিক হচ্ছে, প্রকৃতির জড় পদার্থগুলোকে তিনি জীবজগতের সাথে সামঞ্জস্যশীল করেছেন। যেমন পোশাকের মতো ‘রাত’ এসে মানুষকে ঢেকে ফেলে এবং তাকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দান করে, এরপর দিনের আগমন মানুষকে জীবিকা আহরণের সুযোগ করে দেয়। আর এভাবেই আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং বিশ্বজগৎটি সৃষ্টির বাসোপযোগী হয়ে থাকে। কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী, আল্লাহ তায়ালা রাতকে ঘুমের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আর তাই প্রশান্তির ঘুমের জন্য রাতকে কোলাহালমুক্ত মনোমুগ্ধকর করে মিটি মিটি আলোর দ্বারা সজ্জিত করেছেন। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করো, তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা কাসাস : ৭৩)
কুরআনের ভাষায়- (আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সা. কে লক্ষ করে বলেন) তুমি আরো বলো, তোমরা কখনো একথা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ তায়ালা যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে তোমাদের ওপর বসিয়ে দেন, তাহলে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো উপাস্য আছে যে, তোমাদের জন্য রাত এনে দিতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম নিতে পার, তোমরা কি তবু (আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে) ভেবে দেখবে না?