দরুদ শরিফ পাঠের উপকারিতা
মদিনা শরিফ - প্রতীকী ছবি
নবী সা:-এর বদৌলতে আমরা ইসলামে দীক্ষিত হতে পেরেছি। সমগ্র পৃথিবীতে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে। আমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ অগণিত। এ অনুগ্রহের হক আদায় আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অন্ততপক্ষে উম্মত হিসেবে আমাদের দীনি ও ঈমানী দায়িত্ব হলো নবীজী সা:-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
দরুদ পাঠ আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির এক বিশাল মাধ্যম, প্রশান্তি লাভের সহজ উপায়। এটি এমন আমল যা সর্বদা কবুল হয়। কুরআন তিলাওয়াত করলে আল্লাহতায়ালা তা কবুল করতে পারেন, আবার কবুল নাও করতে পারেন। কিন্তু দরুদ শরিফ এমন একটি সর্বদা গ্রহণীয় আমল, যা পাঠ করলেই আল্লাহ তা কবুল করে নেন।
নবী সা:-এর ওপর দরুদ পড়ার গুরুত্বের দ্বারা সহজেই অনুমিত হয় যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর ওপর রহমত বর্ষণ করেন আর ফেরেশতাকুল দোয়া করেন। হে মুমিনরা, তোমরা তাঁর ওপর বেশি বেশি দুরুদ পড়ো ও খুব সালাম পাঠাও।’ (সূরা আহজাব, আয়াত : ৫৬)
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আবুল আলিয়া রহ: বলেন, সালাতুল্লাহ তথা আল্লাহর রহমত বর্ষণের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের কাছে নবীর প্রশংসা করেন। আর ‘সালাতুল মালাইকা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফেরেশতারা নবীর জন্য রহমতের দোয়া করেন। (সহিহ বোখারি : ২/৭০৮)
নিয়ম : মহানবী সা:-এর নাম বললে ও শুনলে তাঁর প্রতি দরুদ পড়া ওয়াজিব। তবে বারবার বললে ও শুনলে প্রথমবার দরুদ পড়া ওয়াজিব, অন্যবার মোস্তাহাব। মুখে উচ্চারণ করলে যেমন দরুদ ও সালাম ওয়াজিব, তেমনি কলমে লিখলেও ওয়াজিব। জীবনে একবার দরুদ পড়া ফরজ। মহানবী সা: বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত করা হলে দরুদ পাঠ করে না।’ (মিশকাত, হাদিস : ৯২৭)
কুরআন-হাদিসে দুরুদ পাঠের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আনাস ইবনে মালেক রা: বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ শরিফ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন। তার ১০টি পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তার দশটি পদমর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১২৯৭)
আলী রা: নবী করিম সা: থেকে বর্ণনা করেন, এমন কোনো দোয়া নেই, যে দোয়া ও আসমানের মাঝে কোনো পর্দা থাকবে না-নবীজী সা:-এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করা পর্যন্ত। যখন নবীজী সা:-এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করা হয়, তখন পর্দা সরে যায় ও দোয়া কবুল হয়। আর যখন নবীজী সা:-এর ওপর দরুদ পাঠ করা না হয়, তখন দোয়া কবুল হয় না।’ (জালাউল আফহাম, পৃষ্ঠা : ২৫)
আবু বকর সিদ্দিক রা: থেকে বণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি- ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়বে, আমি তার জন্য কিয়ামতের ভয়াবহ দিবসে সুপারিশকারী হয়ে যাবো।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৪৪২৬৯)
অবহেলাকারীর শাস্তি : নবী করিম সা:-এর ওপর দরুদ পাঠ করলে যেমন মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায়, একইভাবে দরুদ পাঠে অবহেলা করলে তিরস্কারের উপযুক্ত হয়। আলী রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, কৃপণ ওই ব্যক্তি, যার নিকট আমার নাম উল্লেখ করা হয়, অথচ সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করে না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৬)
কাতাদা রহ: থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘কত বড় জুলুমের কথা ওই ব্যক্তির জন্য, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ হয় অথচ সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করে না।’ (আশ-শিফা বি তারিফে হুকুকে মুসতফা, পৃষ্ঠা : ৬২-৬৩)
ফজিলত : শাইখ ইবনুল কাইয়িম জাওজিয়া (রহ.) সুপসিদ্ধ কিতাব জালাউল আফহামে দরুদ শরিফ পাঠের চল্লিশটি উপকারিতা বর্ণনা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
এক. দোয়ার পূর্বে দরুদ পাঠ করার দ্বারা দোয়া কবুলের আশা করা যায়। কেননা, দরুদ দোয়াকে আল্লাহ তায়ালা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আর দরুদ পাঠের আগে দোয়া আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলে থাকে। যখন দরুদ পাঠ করা হয়, তখন তা কবুল করা হয়।
দুই. দরুদ পাঠ করার দ্বারা প্রয়োজন মিটে যাবে। অর্থাৎ দরুদ পাঠের বরকতে কোনো জিনিসের প্রয়োজন থাকলে, আল্লাহ তায়ালা সমাধান করে দেন।
তিন. দরুদ পাঠ করার ফলে কিছু ভুলে গেলে তা স্মরণ হয়। অর্থাৎ কোনো জিনিস ভুলে গেলে দরুদ পাঠ করলে সেই জিনিস স্মরণ হয়।
চার. দরুদ পাঠ করার দ্বারা দারিদ্রতা দূর হয়।
পাঁচ. দরুদ শরিফ পাঠ করার দ্বারা নবীজী সা:-এর ন্যূনতম হলেও হক আদায় হয়। আল্লাহ তায়ালা নবীর মাধ্যমে আমাদের যে নিয়ামত দিয়েছেন, দরুদ পাঠ করার দ্বারা এর ন্যূনতম শুকরিয়া আদায় হয়, অর্থাৎ এই উম্মতের ওপর নবীর সীমাহীন দয়া-অনুগ্রহ বিদ্যমান, সেই অনুগ্রহের হক কখনো আদায় করা যাবে না। তাই নবীর ওপর দুরুদ শরিফ পড়া হলে কিছু হক যদি আদায় হয়!
উল্লেখিত ফায়দাগুলো নবীর ওপর দুরুদ পাঠ করার দ্বারা অর্জন হবে। আর সেই দরুদ পাঠ হতে হবে নবীজী সা:-এর নির্দেশিত তরিকায়। অন্যথায় ওই উপকার পাওয়া যাবে না।
লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ