তুরস্কের মুসলিম সাম্রাজ্যের আকাঙ্ক্ষা
তুরস্কের মুসলিম সাম্রাজ্যের আকাঙ্ক্ষা - ছবি : সংগৃহীত
ইউরোপীয় দেশ গ্রিসের সাথে অনেক বছর ধরেই তুরস্কের বিবাদ চলে আসছে। প্রতিবেশী দু’দেশের দক্ষিণে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরে তেল-গ্যাস আহরণ নিয়ে এ বিবাদ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। গ্রিস যুদ্ধের ভাষায় কথা বলছে। কোনো রকম পিছু হটতে রাজি নয় তুরস্ক। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে একটা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্কের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। ইসরাইলের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন ও গ্রিসের সাথে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়ে আমিরাত প্রকাশ্যেই তুরস্কের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে।
তুরস্ক আর ইরান এ চুক্তিকে মুসলমানদের বিশেষ করে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আমিরাতের বিশ্বাসঘাতকতা বলে ঘোষণা করেছে। ভূমধ্য সাগরীয় অপর একটি দেশ লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্ক আর মিসর পরস্পরবিরাধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে চুক্তি সই হবার পর ইসরাইলও প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে দিয়েছে গ্রিসকে।
এরকম জটিলতার মধ্যে মূলত তুরস্কের ইসরাইলবিরোধী ভূমিকার কারণে দারুণ নাখোশ আমেরিকা। সম্প্রতি তুরস্ক মিসাইল কেনার জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করার পর আমেরিকা থেকে তুরস্কের যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে ট্রাম প্রশাসন। বিপরীত দিকে ফ্রান্স যুদ্ধ জাহাজ আর যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে গ্রিসের পক্ষে শক্তি যোগান দিচ্ছে।
তুরস্ককে ঘিরে ময়দানে নেমে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বেশ কয়েটি যুদ্ধবাজ দেশ ও বৃহৎ শক্তি আমেরিকা। এদিকে রয়েছে আঞ্চলিক শক্তি ইরান ও রাশিয়া।
পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ১৯১৪ সালের প্রথম মহাযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর পতন ঘটে। পতন ঘটে ৬০০ বছরের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের। একইসাথে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিলুপ্তি ঘটে খিলাফত শাসন। খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে তুরস্ক। খণ্ডিত তুরুস্কের মূল ভূখণ্ড নিয়ে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক-এর নেতৃত্বে জন্ম নেয় আধুনিক তুরস্ক।
বর্তমানকালে তুরস্ক একটি সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ যার কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তুরস্কের ৯৬.৫ শতাংশ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ০.৩ শতাংশ খ্রিস্টান ও ৩.২ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গগমস্থলে অবস্থিত তুরস্কের বতর্মান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িপ এরদোয়ান হলেন দেশের ১২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত তার দল একে পার্টি পরপর চারবার সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন রয়েছে।
সম্প্রতি ইস্তানবুলের হায়া সোফিয়া নামের প্রাচীন গির্জাকে পুনর্বার মসজিদে রূপান্তর করে বিশ্বের মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তবে এটাকে উসমানিয়া দখলদারিত্ব বলে নিন্দা করেছে মার্কিন মিত্র মিসর।
বাইজেন্টাইন শাসনামলে ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে কনসটানটিপোলে (আজকের ইস্তাম্বুল) নির্মিত হয় রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের চার্চ হাজিয়া সোফিয়া (ল্যাটিন অর্থ-পবিত্র জ্ঞান)। পরে মুসলমানরা কনস্টানটিপোল জয় করলে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় ও খুতবা পাঠের মাধ্যমে উসমানিয়া সুলতান মেহমেদ এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন।
দীর্ঘ পাঁচ শ’ বছর পরে আধুনিক তুরস্কের জনক বলে পরিচিত মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে এটিকে যাদুঘরে পরিণত করেন ।
গত জুন মাসে প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেই পবিত্র কোরআনের আয়াত পাঠ করে আনুষ্ঠানিকভাবে হায়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তর করেন। এ সময় গ্রিসের সমালোচনার জবাবে এরদোগান বলেছেন, উসমানিয়াদের যুগে এথেন্সে নির্মিত কোনো মসজিদের চিহ্ন আজ নেই। সব মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা তেমনটি করিনি।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেকে মুসলিম উম্মার নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। মুসলিম অনুভূতি ব্যবহার করে তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের তার মার্যাদা বাড়িয়ে নিচ্ছে বলে সৌদি আরবও চিন্তিত।