কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাচ্ছেন তো?

জামান শামস | Sep 03, 2020 02:14 pm
কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাচ্ছেন তো?

কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাচ্ছেন তো? - ছবি : সংগৃহীত

 

কবরের আজাব সত্য। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণ রয়েছে। কবরের জীবন মূলত বরজখি জীবন। আর বরজখ হচ্ছে দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টিকারী মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়। চাই মৃতদেহ দাফন করা হোক, জ্বালানো হোক, পানিতে ডুবে যাক, কোনো প্রাণী মৃতদেহ খেয়ে ফেলুক অথবা অন্য কিছু হোক- এর সবই কবরের জীবনের অংশ।

কোনো ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন সে বরজখে প্রবেশ করে এবং পুনরুত্থান পর্যন্ত সেখানে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, এরপর যখন তাদের কারো মৃত্যু আসবে, তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে ফিরিয়ে দাও। যাতে আমি যেগুলো রেখে এসেছি, সেগুলোর ব্যাপারে নেক আমল করতে পারি। কখনো নয়। এটি একটি কথার কথা, সে তা বলবে। আর মানুষের পশ্চাতে রয়েছে বরজখ-পুনরুত্থান পর্যন্ত। (সূরা মুমিনুন : ৯৯-১০০)

আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের ব্যাপারে বলেছেন, ফেরাউন ও তার অনুচরদেরকে কুচনীয় আজাব গ্রাস করে ফেলল। সকাল-সন্ধ্যায় তাদের আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন কেয়ামত সঙ্ঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরাউন ও তার দলবলকে কঠিনতর আজাবে দাখিল করো। (সূরা আল-মু’মিন : ৪৫-৪৬)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে কঠিনতর আজাব বলতে হাশরের ময়দানে চূড়ান্ত ফায়সালার পর জাহান্নামে নিক্ষেপ বুঝানো হয়েছে। আর সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করার ব্যাপারটা বরজখের (কবরের) জিন্দেগিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মুফাসসেরিনে কেরাম বলেছেন, কবরের আজাব যে সত্য উপরোক্ত আয়াত তার প্রমাণ।

আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেছেন, তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোনো উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গোনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আত্তুর : ৪৫-৪৭)

আর কবরে সওয়াল-জওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতে মজবুত রাখেন এবং জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা চান তা করেন। (সূরা ইবরাহিম : ২৭)

ইবনে আববাস রা: বর্ণনা করেন, নবী করীম সা: দুটো কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলছিলেন, তাদের কবর আজাব চলছে। তবে তেমন কোনো বিরাট কারণে তাদের এ আজাব হচ্ছে না। একজন প্রস্রাব করার পর ভালো করে পবিত্র হতেন না। আর দ্বিতীয়জন চোগলখোরি করে বেড়াতেন। তারপর একটা তাজা ডাল নিয়ে দু’ভাগ করে দু’কবরে গ্রোথিত করে বললেন, আশা করছি এ দুটো ডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আজাব কিছু লঘু করা হবে। (বুখারি, মুসলিম)
আনাস বিন মালেক রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: এরশাদ করেছেন, যদি তোমরা দাফন-কাফন ছেড়ে না দিতে, তাহলে আল্লাহর কাছে চাইতাম, তিনি যেন তোমাদেরকে সরাসরি কবর আজাব কমার ব্যবস্থা করে দেন। যা আমাকে শুনানো হয়েছে। (মুসলিম, নাসাঈ, আহমদ)

হজরত বারা বিন আজিব রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে জনৈক আনসারি সাহাবির জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য বের হলাম। তখনো কবরের খনন কাজ শেষ হয়নি। রাসূলুল্লাহ সা: কিবলামুখী হয়ে বসে পড়লেন। আমরাও তাঁর চার পাশে বসে গেলাম। তাঁর হাতে ছিল একটি কাঠি। তা দিয়ে তিনি মাটিতে খোঁচাতে ছিলেন এবং একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন আরেকবার জমিনের দিকে মাথা অবনত করছিলেন। তিনবার তিনি দুষ্টি উঁচু-নিচু করলেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাও। কথাটি তিনি দু’বার অথবা তিনবার বললেন। তারপর তিনি এ দোয়াটি করলেন- আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আ’জাবিল কবরি। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। (আহমদ, আবু দাউদ)

রাসূলুল্লাহ সা: দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবর আজাব থেকে, জীবন-মৃত্যুকালীন সব ফিৎনা থেকে, আর মসিহ দাজ্জালের ফিৎনা থেকে।’ (বুখারি)

যেখানে সহিহ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা: কবর আজাব থেকে পানাহ চেয়েছেন, সেখানে আমাদেরও প্রতিদিন কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই।

দুনিয়ার গাফিলতিতে মশগুল, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে অন্যায় কাজে নিবদ্ধ আমরা; অথচ কবরকে আমাদের শেষ আশ্রয় স্থানকে আমরা স্মরণ করছি না। তারও প্রস্তুতি যে দরকার সেটা আমাদের দুনিয়াবি কাজকর্মে বিলকুল মনেই হয় না। দুনিয়ার চাহিদা আমাদের নিয়ে এত পেরেশান করে তুলছে ভাবখানা এমন যে কবর হাশরের চিন্তার সুযোগ কোথায়? আমরা এক মহা ধোঁয়ার মধ্যেই তবে পড়ে গেছি।

যে কথাটি আল্লাহ বলেছেন- হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে ধোঁকায় ফেলেছে? (সূরা আল ইনফিতার : ০৬)

লেখক : সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us