কতটা ভুঁড়ি হলে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে?
কতটা ভুঁড়ি হলে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে? - প্রতীকী ছবি
ভুঁড়ি অর্থাৎ স্থূলত্বে কি করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বাড়ে? সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-তে এই উত্তর দেয়া সমীচীন নয়। প্রথমেই বলে নেয়া দরকার, করোনা সংক্রমণের সঙ্গে মোটা বা রোগার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর রোগ আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কার সঙ্গে ওবেসিটি অর্থাৎ স্থূলত্বের পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, ওবেসিটির কারণে করোনা সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা ৪৮ শতাংশ বেড়ে যায়।
ওবেসিটি গুরুত্বপূর্ণ কো-মরবিডিটি— ওবেসিটি কী? সামান্য ওজন বেড়ে যাওয়া মানেই কিন্তু ওবেসিটি নয়। এটি মেটাবলিজম অর্থাৎ বিপাকের গভীর সমস্যা। অসংযমী, অলস জীবনযাপনের জন্য দেহে ফ্যাট জমতে থাকে। দেখা দেয় স্থূলত্ব। কিন্তু স্থূল হলে ঝুঁকি বাড়েই বা কেন? আসলে স্থূলদের ক্ষেত্রে এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশন হয়। রক্তবাহী শিরা-উপশিরায় ভিতরে এন্ডোথেলিয়াম বলে একটি স্তর থাকে। স্থূলদের ক্ষেত্রে দ্রুত প্লাক জমতে থাকে সেখানে। রক্তচলাচলে বাধা পড়ে। হার্টের অসুখ, প্রেশারসহ নানা সমস্যার সূত্রপাত হয়। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণে কমে। আর এই রোগগুলোই অনেক সময় করোনা আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই বিষয়গুলিকেই ‘কো-মর্বিডিটি’ বলা হয়।
এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই করোনা রোগীর চিকিৎসা বাড়িতে রেখে সম্ভব। বাকি যারা করোনার কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরানো এক বা একাধিক রোগ ছিল। করোনা সংক্রমণের সময় সেই রোগগুলোই ডালপালা ছড়িয়ে আরো জটিল আকার ধারণ করছে।
কতটা ভুঁড়ি চিন্তার— এখন প্রশ্ন, ঠিক কতটা স্থূলকায় রোগী করোনা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়? এক্ষেত্রে ওজন নয়, গুরুত্ব পাবে বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স। ৩৫-এর বেশি বিএমআর থাকা মানুষের করোনা হলে প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু কার কত বিএমআই, কীভাবে মাপা সম্ভব? এর সহজ সমাধান সূত্র হল, যে কোনও মানুষের ওজনকে (কেজি), তাঁর উচ্চতার (মিটারে) বর্গ দিয়ে ভাগ করলেই বেরিয়ে আসে বিএমআই।
২০ থেকে ২৬ পর্যন্ত বিএমআই হলে, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বিএমআই ২৬ থেকে ৩০-এর মধ্যে থাকলে ওজন বেশি বলা যায়। বিএমআই সূচক ৩০ থেকে ৩৫-এর মধ্যে থাকলে, তখন স্থূলকায় বা ‘ওবিস’ বলা হয়। বিএমআই আরো যত বাড়বে, বাড়বে ঝুঁকিও। ওবেসিটির সঙ্গে যদি রক্তে কোলেস্টেরল, সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে এবং সঙ্গে হাই প্রেশারও থাকে, বুঝতে হবে ওই ব্যক্তি মেটাবলিক সিনড্রোমে আক্রান্ত। তখন সুগার, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল এবং তা থেকে করোনারি আর্টারি ডিজিজ সবই করোনা মহামারীতে কো-মরবিডিটি হিসেবে কাজ করতে থাকে। এই রোগগুলি থাকা অবস্থায় কোনও ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক করোনা আক্রান্তের তুলনায় তার মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
এই বিপদ ঠিক কতটা, তা বুঝতে দেশের প্রায় ১০টি হাসপাতালের করোনা রোগীদের নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। ৭০০-৮০০ রোগীদের নিয়ে এই সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট যা, তাতে বোঝাই যাচ্ছে ৩৫-এর বেশি বিএমআই থাকলে করোনায় প্রাণহানির ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ছে।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া— আবার যারা স্থূলকায়, তাদের কমবেশি স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থাকে। এই ধরনের রোগীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়ায় বিস্তর গোলযোগ দেখা দেয়। শ্বাসনালী সরু হতে থাকে। শ্বাসযন্ত্র ও ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই স্থূলকায় ব্যক্তির করোনা হলে ফুসফুসে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এভাবেই ভুঁড়ি করোনাকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলতে পারে। এছাড়া নাক ডাকার সমস্যা থাকা মানুষজনের মধ্যে, যাঁদের ওএসএ বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তাদের ক্ষেত্রেও করোনা বিপদ বাড়াতে পারে। ওএসএ থাকলে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করেই শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ফের চালু হয়। আসলে এক্ষেত্রে হাইপক্সিয়া বা শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা যায়।
কী করবেন— সামগ্রিকভাবে ওজন বেশি থাকলে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এই সময়। খুব প্রয়োজন না পড়লে বাড়িতেই থাকুন। সপ্তাহের অন্তত পাঁচদিন আধ ঘন্টা বাড়িতেই কোনও নির্দিষ্ট ঘর বা ছাদে ব্যায়াম করুন। ফিট থাকার চেষ্টা করুন। ভাত, রুটি, আলু’র মতো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য খাওয়া কমান। শাকসব্জি বেশি মাত্রায় খান। স্বাস্থ্যকর, সংযমী খাওয়াদাওয়া করুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
সূত্র : বর্তমান