এক মহড়ায় পাকিস্তানের অনেক সুযোগ
এক মহড়ায় পাকিস্তানের অনেক সুযোগ - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানি ও রুশ সামরিক বাহিনী ১৯৭০-এর দশকে পরোক্ষভাবে আফগানিস্তানের পার্বত্য এলাকায় একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল।আফগান কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থনে সোভিয়েত সেনাবাহিনী কাবুলে প্রবেশ করলে দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সঙ্ঘাত শুরু হয়। পাকিস্তান ও আমেরিকা দ্রুত জবাব দেয়,মুজাহিদদের তহবিল ও অস্ত্র দেয়, সেইসাথে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে পাকিস্তানের পার্বত্য এলাকায় সঙ্ঘবদ্ধ হতে তাদের জন্য নিরাপদ স্থানের সুযোগ করে দেয়। যুদ্ধটি ১৯৮০-এর দশকে অব্যাহত থাকে এবং পুরো সময়জুড়ে আফগান বিদ্রোহের প্রতি ইসলামাবাদের সমর্থন অনড় ছিল। অব্যাহত ক্ষয়ক্ষতির মুখে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রত্যাহার করে আফগানিস্তান থেকে। এর এক বছরের কিছু সময়ের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে।
তিন দশক পর পাকিস্তান ও রাশিয়ার আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে সাক্ষাত ঘটে। তবে এবার একপক্ষেই রয়েছে তারা। আর তা ঘটে যৌথ সামরিক মহড়ায়। এসব মহড়া কেবল ১৯৮০-এর দশকের পারস্পরিক বৈরিতা থেকে ব্যাপক পরিবর্তনই চিহ্নিত করছে না, সেইসাথে পাকিস্তান ও সাবেক সোভিয়েত বিশ্বের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করছে। সর্বশেষ দফার সামরিক মহড়ার মধ্যে রয়েছে বহুপক্ষীয় কাভকাজ ২০২০ সামরিক মহড়া।
মহড়াটি হবে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী অস্ত্রখানের কাছে। এতে পাকিস্তান, বেলারাস, আজারবাইজান, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ অংশ নেবে। মহড়ার মধ্যে রয়েছে ওয়ার গেম, যৌথ প্রশিক্ষণ। এছাড়া অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের সর্বশেষ সামরিক প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে অংশগ্রহণকারীদের সামনে।অবশ্য পাকিস্তান আগেও রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
অবশ্য এবার ভিন্নতা আছে।
ভারত সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা এই মহড়ায় অংশ নেবে না। এই মহড়ায় নয়া দিল্লির সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রায় ২০০ সৈন্য পাঠানোর কথা ছিল।কিন্তু শনিবার তারা মহড়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে।প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে কোভিড-১৯-এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আসল কারণ হলো চীনা উপস্থিতি। তাছাড়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অবস্থান করে প্রশিক্ষণ গ্রহণেও তারা রাজি নয়।সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, এই সিদ্ধান্তে রাশিয়া হতাশ হয়েছে।
কারণ ভারতের উপস্থিতি রাশিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বার্তা পাঠানোর সুযোগ ছিল। তবে এর ফলে পাকিস্তানের কাছে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার।
এই মহড়ার মাধ্যমে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করার পাশাপাশি সাবেক সোভিয়েত বিশ্বের সাথেও সম্পর্ক সুসংহত করার সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান।যেমন রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়াও অংশ নিচ্ছে এই মহড়ায়। পাকিস্তান সমর্থন করে আজারবাইজানকে। আজারবাইজান আর আর্মেনিয়ার মধ্যে নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ রয়েছে।পাকিস্তান বাকুকে হতাশ করতে না চাইলেও এই মহড়ার ফলে আর্মেনিয়া ও পাকিস্তানের সৈন্যরা একত্রিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বেলারাসও এখানে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে। সাবেক সোভিয়েতভুক্ত এই দেশের সাথে পাকিস্তান উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার সুযোগ হচ্ছে এই আয়োজনে।
পাকিস্তান এর মাধ্যমে তাজিকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। এই দুই দেশকে আলাদা করে রেখেছে ১০ কিলোমিটারের সৌন্দর্যমণ্ডিত ওকান করিডোর। তাজিকিস্তানেই আছে বিদেশের মাটিতে ভারতের একমাত্র বিমান ঘাঁটি। ওই ফার্কহর বিমান ঘাঁটিটি দুশানবে থেকে প্রায় ৮১ কিলোমিটার দূরে।তবে আফগানিস্তানের কাছাকাছি ওই ঘাঁটিটি পাকিস্তান থেকেও খুব দূরে নয়।ওই ঘাঁটি থেকে বিমান উঠে মাত্র কয়েক মিনিটেই পাকিস্তানে চলে আসতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই এই মহড়ার ফলে পাকিস্তানের সামনে সুযোগ ঘটছে তাজিকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার।এর ফলে ভারতের সামরিক মুঠো থেকে তাজিকিস্তানকে বের করার উদ্যোগ নেয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে পাকিস্তানের কাছে।
সামরিক মহড়া অনেক সময় মিত্রদের মধ্যে অভিন্ন শক্তির প্রদর্শনী ও অন্যদের প্রতি হুঁশিয়ারি প্রদান করার মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। অবশ্য, পাকিস্তানের জন্য এসব মহড়াকে তাদের শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে দেখানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, বরং এটিকে সাবেক সোভিয়েত দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক আরো জোরদার করার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।কাভকাজ ২০২০ থেকে ভারতের প্রত্যাহার এবং সাবেক সোভিয়েতভুক্ত অনেক দেশের এতে যোগদানের ফলে পাকিস্তানের সামনে যেসব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না।
সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট