থাইল্যান্ডকে দুই টুকরা করে দেবে থাই খাল!

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Sep 02, 2020 08:28 am
প্রস্তাবিত থাই খাল

প্রস্তাবিত থাই খাল - প্রতীকী ছবি

 

চীনকে ভারত মহাসাগরে যাওয়ার পথ করে দিতে থাইল্যান্ডে একটি খাল খননের কথা চলছে। প্রস্তাবিত থাই খাল প্রকল্প গ্রহণ করা মানে থাইল্যান্ডের নিজেকে দুই টুকরা করার ঝুঁকি গ্রহণ। থাইল্যান্ড তার সর্বদক্ষিণের তিনটি প্রদেশে সক্রিয় বিদ্রোহের মুখে রয়েছে। এসব প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, বেশির ভাগ লোকই জাতিগতভাবে মালয়। খালটি উত্তরে মূল ভূখণ্ড ও দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের মধ্যকার প্রতীকী সীমান্তে পরিণত হতে পারে। এটি বিদ্রোহ দমনে থাই সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করবে না, তবে কয়েক শ’ বছর স্থায়ী একটি বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে। একবার খাল খনন করা হলে তা ভরাট করা অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং যদি কখনো থাইল্যান্ড দুই টুকরা হযে যায়, তবে থাই খালটি এই ভাঙনের জন্য দায়ী হতে পারে।

থাইল্যান্ড এ প্রসঙ্গে পানামার কথা মনে করতে পারে। দেশটি একসময় ছিল কলম্বিয়ার অংশ। ১৯০৩ সালে পানামা লোকজন বিদ্রোহ করলে মার্কিন নৌবাহিনী এগিযে এসে নতুন দেশটির স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ইসতমিয়অন ক্যানেল কমিশন হাজির হয় এবং ১৯১৪ সালে পানামা খালটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এরপর থেকেই পানামা হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রিত দেশ। ১৮৬৯ সালে চালু হওয়া সুয়েজ খাল ছিল ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ও ফরাসি সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এটি ছিল ভূরাজনৈতিক ফূটবল। এমনকি মিসর এখনো খালের অপর প্রান্তে থাকা সিনাই উপদ্বীপে ইসলামপন্থীদের বিদ্রোহ মোকাবেলা করে আসছে।

বর্তমানে থাইল্যান্ডের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা তুলনামূলক নিরাপদ। তবে থাই খালটি খনন করা হলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক ভূগোল নতুন করে নির্ধারিত হবে। এটি চীনকে স্থায়ীভাবে নিরাপত্তা অংশীদারে পরিণত করবে, পানামার মতো থাইল্যান্ডও দেশটিকে সহজে বিদায় করতে পারবে না।কম্বডিয়ার সিহানকুভিল ও মিয়ানমারের কিয়াকফুর বন্দরে পরিকল্পিত বিনিয়োগের মতো চীন থাই খালেও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তার মুক্তার মালাকে গেঁথে ফেলার জন্য।আর থাইল্যান্ডের কোনো বৈরী সরকার যদি কখনো এই মালা কেটে ফেলার হুমকি দেয় হবে, চীনের পক্ষে দক্ষিণের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করা অসুবিধাজনক হবে না। আর এর মাধ্যমে তারা খালটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারবে, নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত করার প্রয়োজনকে যৌক্তিক করতে পারবে। এখানও পানামার সৃষ্টির কথাটি এসে যায়।

খাল খননের বিপদের কারণে থাই পরিবহনমন্ত্রী সাকসায়াম চিদচুব সম্প্রতি খালের বদলে রেল ও মহাসড়ক লিঙ্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। আর ওই এলাকার দুই প্রান্তে দুটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখছেন। এটিকে স্থল সেতুতে পরিণত করতে চাচ্ছেন তিনি।

থাই খালটি যুক্তরাষ্ট্র, তার মিত্র কিংবা ভারতের জন্যও খুবই কম হুমকি হবে। কারণ ভারত আনায়াসে আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডের মাধ্যমে এই হুমকি প্রতিরোধ করতে পারবে। তবে মিয়ানমার ও কম্বডিয়ার মতো গরিব দেশগুলোর স্বাধীনতাকে আরো খর্ব করে ফেলতে পারে চীনা হস্তক্ষেপে। আর তা থাইল্যান্ডের জন্যই বিপদ ডেকে আনতে পারে। মালাক্কা প্রণালী সিঙ্গাপুরের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে এর উন্মুক্ত অর্থনীতির জন্য, যা বিদেশী হস্তক্ষেপ থেকে তুলনামূলকভাবে মুক্ত। চীনের জন্য ঝুঁকি নেয়ার আগে থাইল্যান্ডকে বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।

সূত্র : ফরেন পলিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us