প্রতিপক্ষ ভারত : থাই খাল নিয়ে চীনের পরিকল্পনা
চীনা নৌবাহিনী - প্রতীকী ছবি
ভারত মহাসাগরে (পড়ুন ভারত) প্রাধান্য বিস্তার করার ক্ষেত্রে চীনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো মালাক্কা প্রণালী। সিঙ্গাপুর ও সুমাত্রাকে বিভক্তকারী এই সংকীর্ণ সাগর লেনটি দিয়েই চীনের সমুদ্র বাণিজ্য পরিচালিত হয়, দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তার নৌবাহিনীকেও পাঠায় এই পথ দিয়ে।ভারতের সাথে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগর ও এর বাইরের এলাকায় চীনের কৌশলগত উচ্চাভিলাষ পূরণের জন্য সম্ভাব্য বৈরী শক্তিগুলোর মধ্যকার একটি সংকীর্ণ চোকপয়েন্টের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার জন্য যেকোনো কিছুই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর এমন প্রেক্ষাপটেই থাইল্যান্ডের ক্রা ইসতমাস খালের কথা আসে। অনেক দিন ধরেই এর কথা আসছে। স্থানটি মালয় উপদ্বীপের সবচেয়ে সরু অংশ। এটি ভারত মহাসাগরে যেতে চীনের জন্য দ্বিতীয় সাগর রুট খুলে দিতে পারে। এখান দিয়ে চীনা নৌবাহিনী দ্রুতগতিতে দক্ষিণ চীন সাগরে নবনির্মিত ঘাঁটিগুলো থেকে ভারত মহাসাগরে যেতে পারবে, তাদেরকে মালয়েশিয়ার দক্ষিণ অংশ দিয়ে ৭০০ মাইল ঘুরতে হবে না। ফলে চীনের জন্য থাইল্যান্ডের এই খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদে পরিণত হতে যাচ্ছে। খালটি খনন করতে চীনকে যদি থাইল্যান্ড ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে দেয়, তবে দেশটি মুক্তার মালাটি গাঁথা চিরদিনের জন্য শেষ করে ফেলতে পারে।
দীর্ঘ দিনের বিতর্কিত খালটি এখন থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। একটি পার্লামেন্টারি কমিটি চলতি মাসে প্রস্তাবটির ব্যাপারে সুপারিশ করতে যাচ্ছে। এমনকি ঐতিহাসিকভাবে সমালোচনামুখী ব্যাংকক পোস্টও খালটির অনুকূলে সম্পাদকীয় লিখেছে। থাইল্যান্ডে চীনা প্রভাবিত প্রকল্পগুলো সম্ভবত জনমত গঠনে সহায়তা করছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নামমাত্র মিত্রতা থাকলেও থাইল্যান্ড এখন প্রবলভাবে চীনের দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে থাই সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকারী সামরিক বাহিনকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বীকৃতির পর তারা বেইজিংমুখী হয়েছে।
ভারতকে ঘিরে ফেলার বেইজিংয়ের পরিকল্পনার সাথে চমৎকারভাবে খাপ খেয়ে যায় থাই খাল। চীনা নৌবাহিনী অব্যাহতভাবে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের দিকে ধেয়ে আসছে, জিবুতিতে একটি পূর্ব আফ্রিকান লজিস্টিকস চালু করেছে, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান এবং এমনকি রাশিয়ার নৌবাহিনীগুলোর সাথে যৌথ মহড়া চালাচ্ছে। পুরো অঞ্চলে চীনা-সমর্থনপুষ্ট প্রকল্পগুলোর প্রাচুর্য ঘিরে ফেলার ধারণাটিকেই ব্যাপকতা দিচ্ছে।
সাগরে চীনের মোকাবেলা করার জন্য ভারতও তৈরী হচ্ছে। আগস্টে হিন্দুস্তান টাইমস খবর দিয়েছে, ভারত আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডসে তার বিমান ও নৌ ঘাঁটিগুলোকে ব্যাপকভাবে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আর এসবের টার্গেট চীন। আন্দামান ও নিকোবরের লোকসংখ্যা ৫ কোটির সামান্য বেশি। কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপপুঞ্জ ভারত মহাসাগরকে মালাক্কা প্রণালী থেকে আলাদা করেছে। আর এই দ্বীপগুলোই প্রস্তাবিত থাই খালকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কাজটি করতে সক্ষম হতে পারে।