চার স্থানে ইসরাইলের ঘাঁটি?
চার স্থানে ইসরাইলের ঘাঁটি? - ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইলের সাথে আমিরাতের সম্পর্ক ও সহযোগিতার সীমানা ‘আকাশ পর্যন্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন একজন শীর্ষস্থানীয় ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত। চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করার আগেই দু’দেশের মধ্যে কোথায় কোথায় সহযোগিতা হবে তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেন বন্দরের কাছে আমিরাত-ইসরাইল যৌথ গোয়েন্দা ঘাঁটি করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্ততঃপক্ষে আরো তিনটি স্থানে ইসরাইল-আমিরাত যৌথ ঘাঁটি করার কথা বলা হচ্ছে। এর একটি হলো খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রণে থাকা লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের মিসরীয় সীমান্ত অঞ্চলে, একটি ইরাকের আমেরিকান ঘাঁটি এলাকায়, অপরটি হলো সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে। এডেনের ঘাঁটি থেকে এডেন বন্দর ও সন্নিহিত সমুদ্র অঞ্চল, সিরিয়ার কুর্দি এলাকার ঘাঁটির মাধ্যমে তুরস্কের ওপর এবং ইরাকের ঘাঁটি থেকে ইরানের ওপর নজরদারি করা হবে। সেইসাথে আমিরাতের সর্বত্রই ইসরাইলের উপস্থিতি নানা অবয়বে থাকবে।
নতুন উদ্যোগের অর্থ হবে, ইসরাইলকে আমিরাতের ওপর ভর করে পুরো মধ্যপ্রাচ্য এলাকায় তৎপরতা চালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। এটি চার পাশের দেশগুলোর জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
তুরস্কের পদক্ষেপ
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে সাম্প্রতিক শান্তিচুক্তির পর ‘আঞ্চলিক দাবা বোর্ডে’ তুরস্ক প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২২ আগস্ট রাষ্ট্রপতি এরদোগান ইস্তাম্বুলে হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া এবং উপ-নেতা সালেহ আল-আওরোরিসহ একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হাকান ফিদান এবং এরদোগানের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক ফাহেরেতিন আলতুন এবং রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিনের দুই প্রধান সহযোগী।
এ অনুষ্ঠানের প্রতীকী গুরুত্ব অনেক গভীর। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর হানিয়া ও অরোরিকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আর হামাসের সাথে তুরস্কের যোগসূত্র ইসরাইলের জন্য এক সঙ্কটজনক বিষয় এবং এটি উভয় দেশের মধ্যকার ঐতিহ্যগতভাবে সম্পর্ককে ব্রেকিং পয়েন্টে নিয়ে এসেছে। মার্কিন-পৃষ্ঠপোষকতায় আমিরাত এবং ইসরাইলের মধ্যে চুক্তির পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য, একটি নতুন আঞ্চলিক ব্যবস্থা তৈরি করা। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকাকে পুনরায় সজ্জিত করার প্রচেষ্টা শুরু হতে পারে।
এরদোগান অনুমান করেছেন যে, আমিরাত-ইসরাইল চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো তুরস্ক। তিনি তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দেখছে। তিনি সচেতন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তুরস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি গোষ্ঠীর সাথে জোটবদ্ধ এবং তাদের সহযোগিতা করবে তুরস্কের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে। তুরস্ক এবং আমিরাত লিবিয়ার দ্বন্দ্বে দুই বিপরীত পক্ষকে সমর্থন করছে।
হামাস নেতাদের সাথে বৈঠকের জন্য এরদোগানের সমালোচনা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আঙ্কারা তার জবাব দেয়। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াশিংটন কর্তৃক হামাসের বৈধতার প্রশ্ন তুলে উল্লেখ করে যে, ‘গাজায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে হামাস যা এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা।’
মার্কিন নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে, তুর্কি বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘এটি এমন একটি দেশ যে পিকেকেকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে অথচ তাদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তালিকার মধ্যে রয়েছে এরা। এমন একটি দেশের তৃতীয় কোনো দেশকে নিয়ে কিছু বলার অধিকার নেই।’
তুরস্ক অনেক স্বাধীন আঞ্চলিক পর্যবেক্ষক এবং পশ্চিমা বিশ্লেষকের মূল্যায়নের সাথে একমত যে, ফিলিস্তিনিরা সাত দশকব্যাপী তাদের রাজনৈতিক অধিকার ত্যাগ করে আত্মসমর্পণ করার মতো মেজাজে নেই। প্রকৃতপক্ষে, ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় প্রতিরোধে ক্লান্তির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ফিলিস্তিনি নেতারা সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের নিন্দা করার জন্য খুব কড়া ভাষা ব্যবহার করেছেন। ক্রোধের তরঙ্গ গভীরভাবে জ্বলে উঠেছে যে, তারা আবুধাবি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন। এই ক্ষোভ ২০০৭ সালের গাজার গৃহযুদ্ধের পর থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ ও হামাসকে যৌথ রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এখন হামাসের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুক্ত। গত সপ্তাহে, ফাতাহর সাধারণ সম্পাদক জিব্রিল রাজউব হামাস নেতা আরোরির সাথে একই প্ল্যাটফর্মে কথা বলেছেন।