নেতৃত্ব আসবে কার হাতে?
বিন জায়েদ - ছবি : সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি নেতারা সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের নিন্দা করার জন্য খুব কড়া ভাষা ব্যবহার করেছেন। ক্রোধের তরঙ্গ গভীরভাবে জ্বলে উঠেছে যে, তারা আবুধাবি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন। এই ক্ষোভ ২০০৭ সালের গাজার গৃহযুদ্ধের পর থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ ও হামাসকে যৌথ রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এখন হামাসের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুক্ত। গত সপ্তাহে, ফাতাহর সাধারণ সম্পাদক জিব্রিল রাজউব হামাস নেতা আরোরির সাথে একই প্ল্যাটফর্মে কথা বলেছেন।
নেতৃত্ব আসবে কার হাতে?
তুরস্ক আঞ্চলিক রাজনীতিতে সম্ভাব্য অগ্রগতি অনুভব করেছে। কারণ বিন জায়েদ কর্তৃক বিশ্বাসঘাতকতায় ফিলিস্তিনি জনগণের ক্ষোভ ও বিরক্তি অনেকাংশেই আরব জনগণের মধ্যেও বিস্তৃত হয়েছে। দোহার আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ পরিচালিত জরিপ অনুসারে, ২০১১ সালে ৮৪.৮৪% আরব ইসরাইলকে কোনো কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদানের বিরোধিতা করেছিল, ২০১৮ সালে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮.৭%।
একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের সৃষ্টি যা মধ্যযুগীয় অভিজাতদের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক নীতি ও জনগণের ক্ষমতায়নের ওপর ভিত্তি করে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন; তার প্রতিষ্ঠা ছিল এরদোগানের একটি স্বপ্নের প্রকল্প। এরদোগান মনে করেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত-ইসরাইল চুক্তি বালির উপরে নির্মিত এবং সুপ্ত দ্বন্দ্বের ভারে এটি চূর্ণ হয়ে যেতে বাধ্য।
ডেভিড হার্শ গত সপ্তাহে লিখেছিলেন, ‘যেখানে আগে ইসরাইলি নেতারা আরব বিশ্বে স্বৈরশাসনের অশান্তির প্রতিপক্ষ হওয়ার ভান করতে পারতেন, আমিরাতের সাথে এই চুক্তির পর সেটি আর পারবেন না। এখন ইহুদি রাষ্ট্রটি সম্পর্ক স্থাপন করেছে তার চার পাশের স্বৈরাচার এবং দমন-নিপীড়ক সরকারগুলোর সাথে। ... এটি কেবল ফিলিস্তিনেই নয়, আরব বিশ্বজুড়ে একটি নতুন জনপ্রিয় বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে দেবে। এই বিদ্রোহ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে থাকতে পারে।’
আমিরাতি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিতকারী পোস্টারগুলো সৌদি মিডিয়া ছাড়া পুরো আরব এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন আরব বিশ্বজুড়ে লেখক এবং বুদ্ধিজীবীরা।
তবে এ ব্যাপারে সৌদি ভূমিকা এখনো বেশ খানিকটা দ্বিধাগ্রস্তই রয়ে গেছে। গত শুক্রবার আতাশার্ক আল-আওসাতে প্রকাশিত একটি কলামে প্রভাবশালী সৌদি প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক চুক্তি করার আরব আমিরাতি সিদ্ধান্তকে রক্ষা করেছেন, কিন্তু বলেছেন যে, রিয়াদকে গত সপ্তাহে ঘোষণার আগে চুক্তি সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। প্রিন্স তুর্কি লিখেছেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়ে আমাদের অবাক করে দিয়েছেন। তবে তিনি আরো যোগ করেন যে আবুধাবির এমন সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ছিল, যা এটি তার জনগণের জন্য উপকারী বলে মনে করে।’ এই বক্তব্যেই সৌদি ডিলেমাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটা সময় আসবে যখন একটি পরিষ্কার অবস্থান নিতে হবে সৌদি আরবকে। তখন মুসলিম দুনিয়ার গতিপথটি অনেকখানি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়ে যাবে।
mrkmmb@gmail.com