কানাডা কী করে প্রো-ইসরাইল হয়ে উঠল?
কানাডার প্রধানমন্ত্রী - ছবি : সংগ্রহ
জাতিসঙ্ঘে কানাডার এই পিছিয়ে পড়ার পেছনে দেশটির তৃণমূল পর্যায়ের মানকাধিকার কর্মী ও এঙ্গলারের মতো বুদ্ধিজীবীদের প্রচারাভিযানের একটা বড় ধরনের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। এঙ্গলার বলেছেন, ‘সক্রিয় কর্মীগোষ্ঠীগুলো- যার অংশ আমিও ছিলাম- তুলে ধরেছে গত দুই দশকে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে কানাডিয়ান সরকারের ভোটদানের বিষয়টি। গত ২০ বছরে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের অনুকূলে আনা ১৬৬টি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে কানাডা। সবিশেষ লক্ষণীয়, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে এর একটি প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও ভোট দেয়নি।’- কানাডা সরকারকে এ সমীকরণটি উপলব্ধিতে রেখে আগামী দিনে পথ চলতে হবে।
কানাডা কী করে প্রো-ইসরাইল হয়ে উঠল?- এ প্রশ্নে এঙ্গলারের মন্তব্য হচ্ছে- ‘কানাডায় রয়েছে সুসংগঠিত প্রো-ইসরাইল লবি। এই লবি মিডিয়ার ওপর জোরালো প্রভাব ফেলতে সক্ষম। যেমন : প্রো-ইসরাইল গ্রুপ ‘অনেস্ট রিপোর্টিং কানাডা’ সেসব মিডিয়া সোর্সের সমালোচনায় হামলে পড়ে যেগুলো সামান্য পরিমাণে হলেও ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।’
তা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের ও কানাডার ওপর ইসরাইলি প্রভাবের ডিনামিকসটা পুরোপুরি ভিন্ন। এঙ্গলারের মতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যতিক্রমী হয়ে কানাডায় রাজনীতিবিদদের তহবিল সরবরাহের ব্যবহার অধিকতর সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই শেলডন অ্যাডেলসনের মতো এমন কেউ নেই, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। এর ফলে প্রণোদিত ট্রাম্প ফিলিস্তিন-বিরোধী অধিকতর চরম অবস্থান নেন। এই ডিনামিকসটি কানাডায় অনুপস্থিত। কিন্তু প্রাধান্য বিস্তারকারী মিডিয়া সব সময় জায়নবাদী আন্দোলনের প্রতি সহমর্মী।’
কানাডায় প্রো-ফিলিস্তিন মনোভাব বিগত দুই দশকে বিস্তার লাভ করেছে। এখানে গড়ে উঠেছে ফিলিস্তিন-সমর্থক বড় নেটওয়ার্ক। আছে সুসংগঠিত আন্দোলনও। এঙ্গলারের মতে, কিছুটা মাত্রায় হলেও জায়নবাদীদের চেয়ে ফিলিস্তিন সমর্থকরা প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। কিন্তু কানাডিয়ান মিডিয়া এখনো ইসরাইলের ক্ষমতার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানাতে অনিচ্ছুক।
পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের মতো কানাডায় ফিলিস্তিন-সমর্থক গোষ্ঠীগুলো ছোট আকারের, বিভিন্নধর্মী, তবে তৃণমূল পর্যায়ে খুবই সুসংগঠিত। এগুলো সুগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী, তবে ইসরাইল-সমর্থক গোষ্ঠীগুলো আরো বেশি সুসংগঠিত। সরকার ও মিডিয়ার ওপর ফিলিস্তিন-সমর্থকদের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, জরিপে বার বার প্রমাণ হয়েছে কানাডার জনগণ ক্রমবর্ধমান হারে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি অধিকতর সহমর্মী। অতি সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের কারণে কানাডিয়ানরা ইসরাইলকে বয়কটের পক্ষে। ২০১৭ সালের মার্চেও এক জরিপ মতে, কানাডিয়ানরা মনে করে : ‘বিডিএস ইজ রিজনেবল’। প্রো-ফিলিস্তিন সেন্টিমেন্ট কানাডার রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। ফিলিস্তিনের ৩০ শতাংশ ভূখণ্ড ইসরাইলের সাথে একীভূত করার প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছেন কানাডার ৫৭ জন পার্লামেন্ট সদস্য। লেবার ইউনিয়নগুলোতে একই ধরনের প্রভাব পড়ছে।
দেশে দেশে কানাডার মতোই জনতার সমর্থন ফিলিস্তিনের পক্ষে। অতএব বিশ্বজনতার চাপে জায়নবাদী ইসরাইল ও এর প্রতিপালকদের একদিন মাথা নত করতেই হবে। জনগণের স্বাধীনতার রক্তপতাকা স্থায়ীভাবে এক দিন ফিলিস্তিনের আকাশে উড়বেই। গুগলের মাতলামির সমুচিত জবাব দিয়ে বিশ্বমানচিত্রে ফিলিস্তিনের মানচিত্র স্থান করে নেবেই। আজ যারা অন্ধভাবে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, ফিলিস্তিন-বিরোধী ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নাড়ছে, এক দিন তাদের এই ঘোর কাটবেই। কারণ স্বাধীনতাকামী মানুষের কোনো পরাজয় নেই। ইতিহাস বারবার এ সত্যটিই সামনে নিয়ে এসেছে। ফিলিস্তিনের বেলায়ও তা ঘটতে বাধ্য।