চীনা বিমান মোতয়েনে ভিয়েতনাম ক্রুদ্ধ!
চীনা বিমান মোতয়েনে ভিয়েতনাম ক্রুদ্ধ! - ছবি : সংগৃহীত
চীনা নৌবাহিনী যখন চলতি সপ্তাহে চারটি সাগরীয় অঞ্চলে একইসাথে মহড়া চালাচ্ছে, তখন অনেকের মধ্যেই শক্তি প্রদর্শন সম্ভ্রম উদ্রেক করেছে, তবে কেউ কেউ কাকে উদ্দেশ্য করে এই আয়োজন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, উত্তর পীত সাগর ও বোহাই উপসাগরের মহড়াগুলো দেখে বিশেষজ্ঞরা প্রায় একমত যে এটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী তৎপরতার বেইজিংয়ের জবাব। ওয়াশিংটন সম্প্রতি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে, তাইওয়ান প্রণালীতে একটি ডেস্ট্রয়ার পাঠিয়েছে, ওই অঞ্চলে গোয়েন্দা বিমান ও বি-১বি বোমারু বিমান পাঠিয়েছে। এর পাশাপাশি চীনের সাথে ভূখণ্ডগত বিরোধে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষেও অবস্থান গ্রহণ করেছে।
সাংহাইয়ের ইস্ট চায়না নরম্যাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক যোশেফ গ্রেগরি মোহানি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে, বিশেষ করে তাইওয়ানকে নিয়ে সম্ভাব্য কোনো ঘটনা উস্কে দেয়ার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কার মুখে রয়েছে।
চীনের মহড়ায় যে জবাব দেয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট : যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ চায় না চীন। তবে কেউ যদি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়, যুদ্ধ করতে সক্ষম হয় তবে প্রয়োজনে কয়েকটি রনাঙ্গনে তা হতে পারে।
এই মহড়ার উদ্দেশ্য ওয়াশিংটন হতে পারে। তবে শক্তি প্রদর্শনী কাছাকাছি থাকা দেশগুলোর ওপর প্রভাব পড়বে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে করে বিশেষ করে ভিয়েতনাম ও ভারতের মধ্যে সামরিক অংশীদারিত্ব গড়ে ওঠতে পারে। আর এই অংশীদারিত্বের লক্ষ্য হতে পারে চীনকে মোকাবেলা করা, ঠিক যেভাবে ভারতকে মোকাবেলা করার জন্য গড়ে ওঠেছে চীন-পাকিস্তান জোট।
অভিন্ন স্বার্থ
দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ প্যারাসেল আইল্যান্ডসের অন্যতম উডি আইল্যান্ডে চীন অন্তত একটি এইচ-৬জে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে, এমন উপগ্রহ চিত্রে ভিয়েতনাম ক্রুদ্ধ হয়েছে।
এর জের ধরে ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। তাদের ভাষায় এই উপস্থিতি এই অঞ্চলের শান্তিকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।
গত শুক্রবার ভিয়েতনামি রাষ্ট্রদূত ফাম ষানহ চাউ ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সাথে বৈঠকের সময় ওই ছবিগুলো বেশ গুরুত্ব পেয়েছে বলেই মনে করা যেতে পারে। এই বৈঠকের জের ধরেই মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তার ভিয়েতনামি প্রতিপক্ষ ফাম বিন মিনের সাথে ভার্চুয়াল সভার পরিকল্পনা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স একাডেমির নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর কারলাইল বলেন, এই প্রথম চীন প্যারাসেলসে বোমারু বিমান মোতায়েন করল তা নয়। ২০১৮ সালেও তারা কয়েকটি এইচ-৬কে দূরপাল্লার বোমারু বিমান পাঠিয়েছিল।
কিন্তু এবার ভিয়েতনাম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, চীনা পদক্ষেপের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমর্থন যোগানোর চেষ্টা করছে দেশটি।
বিষয়টি নিয়ে ভারতের কাছে ছুটে যাওয়ার অর্থ হলো, ভিয়েতনাম কেবল ভারতের সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বই প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে না, সেইসাথে দক্ষিণ চীন সাগরে নৌচলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের অবস্থানের প্রতিও সমর্থন ব্যক্ত করছে অব্যাহতভাবে।
ভিয়েতনাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের লেকচারার হুন তাম স্যাঙ বলেন, ভারত ও ভিয়েতনাম এখন ভূকৌশলগত অভিন্ন অবস্থান সৃষ্টি করেছে। উভয় দেশই দক্ষিণ চীন সাগরকে চীনের পেছনের আঙিনা হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নয়।