আমিরাতের রাজনৈতিক রোমাঞ্চ
আমিরাতের রাজনৈতিক রোমাঞ্চ - ছবি : সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ওভাল অফিসে ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ‘চবধপব অমৎববসবহঃ’ এর ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। উভয় দেশ এখন দূতাবাস খুলবে, দূত প্রেরণ করবে, শুরু হবে সফরের স্রোত। ইসরাইলের সাথে এর আগে মিসর ও জর্দান সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের অমসৃণ পথকে চলার উপযুক্ত করেছে। নতুন করে বাহরাইন আর ওমান লাইনে আছে। তুর্কি আনাদুলু বার্তা সংস্থার সংবাদে জানা যায়, নেতানিয়াহু গত দুই বছরে দু’বার গোপনে আমিরাত সফর করেছেন। এবার আগামী সপ্তাহে প্রকাশ্যেই ইসরাইলি অফিসাররা আমিরাত আসছেন। এ ডেলিগেশনের প্রধান হবেন ইসরাইলি ইনটেলিজেন্স ও ‘মোসাদ প্রধান’ ইউসি কোহেন। ইসরাইলের জন্মের পর থেকে আরবরা মার খাচ্ছে। মার খেয়ে খেয়ে ২০২০ সালে আমিরাতের সিনিয়র মেজর জেনারেল আবদুল্লাহ আল হাশমি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এই সম্পর্কের বিষয়ে বলেছেন, two countries are like brothers and the USA was like the ‘older brother’!
দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ঘোষণা প্রকাশ্যে হলেও আমিরাত ও ইসরাইল উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের গোপন-বন্ধন চলছে ১৯৯০ সাল থেকে। ইতিহাসের পাতা নাড়লেই বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পাবে। এর আগে এই কলামে, কিভাবে আমিরাত ইসরাইলি ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করছে, ওভাল অফিসে কত প্রভাব- এসব আলোচনা করেছিলাম এবং ‘আমিরাতের তোপে টিলারসনের বিদায়’ নামে পৃথকভাবে লিখেছিলাম।
ওই ঘটনার পরপরই পরকীয়া প্রেমের টানে শেখের বাড়ি ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন এক রানী, প্রিসেন্স হায় ও কয়েকজন রাজপরিবারের মহিলা। দুবাই ছাড়ার এই সংবাদ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। শেখ পরিবারের সদস্যকে হত্যার অভিযোগ, সকোত্রা দ্বীপ দখল, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় সেনা ও অস্ত্র পাঠানো, সুদানে ঘাঁটি করার চেষ্টা, মিসরের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া, মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো, পরমাণু স্থাপনার কাজ শুরু করা- এসব সংবাদ মাধ্যমে এসেছে আমিরাত সম্পর্কে। এসব কাজের আঞ্জাম দিতে গিয়ে আমিরাত মুসলিম বিশ্বের স্বার্থের পরিপন্থী অনেক ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করে বিজয়ীর বেশে দিন গুজরান করছে মর্মে অভিযোগ। এই সমঝোতা উপলক্ষে আমিরাতের বিন জায়েদ ও ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব টুইট বার্তা বিনিময় করেছেন সেগুলো দেখলে মনে হয় আরবদের কোনো শিরদাঁড়া নেই। যারা ছয় দশক ধরে আরবদের দিনরাত হত্যা করে আসছে তাদের সাথে মোক্ষম বন্ধুত্ব করার জন্য আরব নেতাদের একাংশ কেমন পাগলপারা তা দেখে অবাক হতে হয়।
ইসরাইল বলেছে, এরপর বাহরাইন সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে তার সাথে। বাহরাইনের খলিফা শাসকদের ছয় কর্মকর্তা তিন বছর আগে তেলআবিবে গিয়ে কী জামাই আদর পেয়েছেন এবং কী কী বাজার করেছেন সেগুলো মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছিল। তবে কী কী খেয়েছেন তা প্রকাশ পায়নি। এখন এই ‘যাওয়া-আসা’র মেলবন্ধন দিন-রাত চলতেই থাকবে বিনা বাধায়, বিনা কৈফিয়তে। বাহরাইনের রাজপরিবার মূলত সৌদি আরব ও আমিরাতের রাজনৈতিক তল্পীবাহক। এই দেশ এখন ইসরাইলের সাথে চুক্তি করবে না, তা ভাবাই যায় না। বাহরাইন, আমিরাত, সৌদি আরব, জর্দান ও মিসর- সাই সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আমিরাত ও ইরানের মাঝ বরাবর কৌশলগত গুরুত্ববহ হরমুজ প্রণালী। এখানে ইরান বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইরানকে কাবু করার একটি উপায় হলো হরমুজের কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেয়া, এটি এত দিন পর্যন্ত কেউ পারেনি। এমনকি ব্রিটিশ রয়েল নেভিও পর্যুদস্ত হয়েছে, বছরখানেক আগে। সর্বশেষ চুক্তির ফলে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র হরমুজকে নিজ তত্ত্বাবধানে আনতে আমিরাতের ‘টেরিটরিয়াল’ সহায়তা লাভ করবে। এ জন্য চুক্তির পরপরই ইরান বলেছে, ইরান আমিরাতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। ঘোষণার দুই দিনের মাথায় ইরান আমিরাতের জাহাজ ও এর ক্রুদের ধরে নিয়ে যায়।
ইসরাইল ও আমিরাতের মধ্যে অনেক মিল। উভয় দেশ মিসরের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন; এই চারটি দেশ ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোচ্চার; আরব বিশ্বের বড় বড় ধনীরা ও সৌদি পরিবারগুলো মূলত বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের সময় বেড়াতে ও ছুটি কাটাতে দুবাই যায়। বিরাট মলগুলোতে পণ্য বিক্রির জন্য ইসরাইল দশক ধরে বিভিন্ন পন্থায় বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করেছে। এখন অবারিতভাবে ইসরাইলি পণ্য দুবাই, শারজাহসহ আমিরাতের বড় নগরগুলোকে উদ্ভাসিত করবে। চুক্তির আগে মহামারীর প্রকোপ শুরু হলে দুই দেশ বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা সম্পর্কিত চুক্তি করে সহযোগিতার ‘প্রস্তরময় সোপানকে মসৃণ করেছিল’। উভয় দেশ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কয়েক বছর ধরে গোপনে কাজ করে যাচ্ছে। এসব তথ্য এখন আস্তে আস্তে প্রকাশ হচ্ছে। ওয়াশিংটনে ওভাল অফিসে ঘোষণার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, এ চুক্তিতে আসার জন্য উভয় দেশ বছরের পর বছর পরিশ্রম করেছে।
আমিরাত আয়তন ও পরিমাপের দিক দিয়ে খুব ছোট দেশ। তার পরও দেশটি বিশ্বরাজনীতি এবং মুসলিম বিশ্বে চাল দিয়ে যাচ্ছে। যারা কিছু দিন আগে কাঠের মাছধরার নৌকা সাগরে ভাসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছে; আজ তেলের টাকার দাপটে বিশ্ব রাজনীতির কিছু অংশ কিনে খেলতে চাইছে তারা। মালি, লিবিয়া, ইয়েমেন, তুরস্ক, বলকান, মুসলিমবিরোধী সার্বিয়া, ভারত ও চীন- কোথায় নেই আমিরাত? বলতে গেলে নতুন দেশ, কয়েকটি আমিরাত নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত; এখনো পাঁচটি দশকও পূর্ণ করেনি জীবনকাল। অবস্থা দেখে মনে হয় আমিরাতের নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই, তা অন্যরা ছক বেঁধে দিয়েছে। নিজেদের অফুরন্ত সম্পদকে বিদেশীদের অ্যাজেন্ডা চরিতার্থ করার জন্য বিলিয়ে দিচ্ছে। তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কুলুসি আকার বলেছেন, ‘কয়েকটি দেশ রিমোটের সাহায্য দেশটি চালাচ্ছে নিজেদের স্বার্থচরিতার্থ করার জন্য।’ যখন নিজের ক্ষতি আঁচ করতে পারবে তখন ফিরে আসার সম্ভাবনা আর থাকবে না। আমরা এখনই দেখছি আমিরাত ‘জিওনিজমের হাতুড়ি’তে পরিণত হয়েছে। আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান এসব কিছুর মূল বলে অনেকে মনে করেন। তাই আমিরাতের বর্তমান কর্মকাণ্ড ‘ওয়ান ম্যান শো’র মতো।
সরকার অনবরত মৌলিকত্ব বাদ দিয়ে নকল ও আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করে চলেছে। ভ্যালি, লেক, মনমাতানো হোটেল, হাই এ্যান্ড দোকান ও মল। পশ্চিমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব। ফলে মাছের নৌকার দেশ থেকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত হলো, মাত্র ৪০ বছরের মধ্যে। কিন্তু সব আরব দেশে এমন পরিবর্তন আসেনি। ইয়েমেনে, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার আরবরা ধুঁকে ধুঁকে মরছে; ওদের জন্য দুবেলার খাবার, চিকিৎসা ও পানীয় জল এখন বিলাসিতা।
ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের মারছে, রক্তের সাগর বইছে অনেক দেশে। আমেরিকার সিআইএ ও ইসরাইলের মোসাদের প্রেসক্রিপশন অনুসারে এসব করায় প্রটোকল তৈরি করা হয়েছে। আমেরিকার সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট কন্ডোলিজা রাইস যেকোনো আরব জাগরণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২০০৬ সালে গোপন পরিকল্পনা করেছিলেন বলে প্রকাশ। আমেরিকার সরকারগুলো জিওনিস্ট প্রাধান্যকে আরব বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দরিদ্র আরব দেশগুলো তেলের প্রাচুর্যে এখন বিশ্ব অর্থনীতির এক বড় শক্তি। এসব দেশকে এককভাবে ছেড়ে দিলে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ জাতীয় কোনো চিন্তাভাবনার প্রকল্প কাজ করতে পারবে না। তাই তাদের লাগাম দেয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো একত্র হয়ে অনেক আগে ইসরাইলকে আরবদের বুকের ওপর বসিয়ে দেয়। ইসরাইল যত শক্তিশালী হবে, মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের কব্জি তত শক্ত হবে। এ জন্য, যেকোনো ঘটনায় কিছু চিহ্নিত দেশ বারবার ছুটে আসে; বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেন কখনো ইসলাম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হয়। কেননা ঈমানি শক্তির জোরের কাছে কোনো কিছুই দাঁড়াতে পারবে না- সেটি মুসলমানদের চেয়ে জিওনিস্ট লবির লোকজন বেশি বোঝে। এটারও ‘ওষুধ’ তারা জানে, হয় মুসলমান হয়ে যাও নতুবা ইসলামকে ‘শেষ’ করে দাও। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে এখন পশ্চিমা জিওনিস্ট লবি কাজ করছে আর সেই তরীতে এবার আরব আমিরাত বুঝি শামিল হলো।
কোনো কোনো আরব রাষ্ট্র বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ইসলামী জাগরণ ঠেকানোর জন্য। বাদশাহী রক্ষার জন্য তারা জনজাগরণে ভীত হয়ে পড়েছিল। সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছে বহুল আলোচিত মুসলিম ব্রাদারহুডকে। আবুধাবি ও রিয়াদ এই সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। আমিরাতের দিকে তাকালে দেখব, তারা কিভাবে তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চেয়েছে। সেখানে নিজের লোককে বসিয়ে দেয়ার জন্য সর্বকৌশল অবলম্বন করেছে আমিরাত। ঘানুশি তিউনিসিয়ায় ব্রাদারহুডের সবচেয়ে বড় নেতা। মিসরে মুরসিকে দমনের জন্য আবদেল ফাত্তাহ সিসিকে সব ধরনের সহায়তা করেছে আমিরাত। ইয়েমেনে ও আমিরাত সৌদি কোয়ালিশনে অংশগ্রহণ করেছে ২০১৫ সালে। আফ্রিকার সোমালিয়া ও জিবুতিতেও আমিরাত স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বাতিল করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। প্রত্যেকেরই নিজের সীমার মধ্যে বা বলয়ের মধ্যে থাকা উচিত। আমিরাত কি সে নীতিতে বিশ্বাসী নয়?
পূর্ব আফ্রিকায় আমিরাতের রাজনৈতিক কোনো অ্যাজেন্ডা না থাকলেও অনেক কাজ করে চলছে। যেমন- বন্দরচুক্তি, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, মিডিয়া বা টেলিভিশন সম্প্রচার ও সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা। ইথিওপিয়ায় আদ্দিস আবাবায় তাদের টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কাজ শেষ পর্যায়ে। জানা যায়, এটি পূর্ব আফ্রিকায় ‘হাব’ হিসেবে কাজ করবে। আমিরাত জোর চেষ্টা চালাচ্ছে ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য; পরে জিবুতিও এর সাথে যুক্ত হবে। আর এসব কাজে প্রচুর অর্থ ঢালতে হচ্ছে। আমিরাত তার ছোট্ট বলয় ছেড়ে কেন এত দূরে অর্থ ঢালছে, কার ও কিসের জন্য, সেটি কিছু হোমওয়ার্ক করলেই বোঝা যায়। সোমালিয়ায়ও শান্তি স্থাপনের কাজ করছে ও অর্থ ঢালছে আমিরাত। অর্থের অভাবে যে কাজটি ব্রিটিশরা করতে পারেনি সেটি সম্পন্ন করছে আমিরাত। এখন সোমালিয়ায় ব্রিটিশদের শান্তি প্রচেষ্টার ভূমিকা আমিরাতের কারণে নেই বললেই চলে।
এবার নতুন ক্ষেত্র হলো সুদান। কূটনৈতিক বলয় থেকে শোনা যাচ্ছে মিসর ও সুদানের মধ্যে ‘ঝামেলা’ মিটিয়ে দিতে আমিরাত কাজ করছে। দক্ষিণ সুদান আলাদা দেশ হওয়ার পর তেল খাতের রাজস্ব হারিয়েছে মূল সুদান। যুক্তরাষ্ট্র আমিরাতের সহায়তায় সুদানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে পারে। ‘টাকা দাও জিতে নাও’ নীতি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। সেটি এখন আফ্রিকাতেও ভালো কাজ করছে। ইসরাইল যেখানে কাজ করতে পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছে না, সেখানে আমিরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যার বোঝা ঢেলে দিচ্ছে আফ্রিকায়। এ মহাদেশে তুরস্কের মানবিক কর্মসূচি এবং চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রুখে দেয়ার মতো কোনো সফট বা হার্ড পলিসি আমিরাত-ইসরাইলের নেই।
আফ্রিকায় তুরস্ক-চীনের অ্যাজেন্ডা আমিরাত-ইসরাইলের কাজে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করে আমিরাতের জন্য একসময় বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফারমাজো তুরস্ক ও কাতারের সাথে বন্ধন ছিন্ন করতে নারাজ। তাই ওদেরকে আমিরাতের ‘লাইনে’ আনার প্রচেষ্টা যেকোনো সময় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সোমালিয়া ইথিওপিয়ার অধীনে ছিল ৪০ বছর। এখন সেটি মিটমাট করে মোগাদিসু বিমানবন্দর খুলে দেয়া হয়েছে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল করছে, গত ৪০ বছরে এই প্রথমবার। সমালোচকরা বলছেন, আফ্রিকায় বাণিজ্য করা আমিরাতের প্রথম উদ্দেশ্য। দুবাইয়ের মাধ্যমে অনেক আফ্রিকান দেশ বিশ্ব বাণিজ্যে অংশ নিয়ে থাকে। ইথিওপিয়া কম ট্যাক্সে দুবাই থেকে আমদানি করে, আমিরাত এই দেশটিকে হারাতে চায় না। কিন্তু তুরস্ক আমিরাতের এই বাণিজ্যে একটি বড় বাধা। তুরস্কের উন্নতমানের প্রডাক্ট আমিরাতের ঘুম নষ্ট করে দিয়েছে। আমিরাতের মিডিয়ার চেয়ে তুর্কি টেলিভিশন ও সিরিয়াল ঝড়ের গতিতে আফ্রিকায় ঢুকছে। আফ্রিকানরা এখন দুবাইয়ের পরিবর্তে ইস্তাম্বুল, বুশরা, কাপাদোসিয়া ও আনাতোলিয়ায় যাচ্ছে। তুর্কি মিডিয়া এই পর্যটন লালন করছে বলে তুর্কিদের অভিমত।
আগামীতে তুর্কি ড্রামা ও সিরিয়ালকে আমিরাতের অতিক্রম করার কোনো যোগ্যতা নেই। তবে পরিচালক-প্রযোজকসহ হলিউড কিনতে পারলে হয়তো বা ‘কিছু হবে’। আসলেই তা কি কখনো সম্ভব? চীনও ঢুকে পড়েছে আফ্রিকায়। চীনের কর্মসূচি বৃহৎ শক্তিগুলোর চেয়ে আলাদা হওয়ায় আমিরাত-ইসরাইল জোট তেমন সুবিধা করতে পারছে না। এ দিকে ইরানও উপসাগরীয় ও পূর্ব আফ্রিকায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমিরাত জোট সেটি বন্ধ করতে চায়। ইরান অনেক আগে থেকেই ‘শিয়া মতবাদ’ ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করছে, বিশেষ করে কেনিয়া ও তানজানিয়ায়। অনেক স্থানে সৌদি আরবের ‘ওয়াহাবিজম’ পেরে উঠছে না।
আন্তর্জাতিক পণ্ডিতরা মনে করছেন, আসলে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল-আমিরাত ইরানকে সাইজ করার সাথে সাথে তুরস্ককে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে শাণ দিচ্ছে। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, এই চুক্তি শুধু ইরানের প্রতি মেসেজ নয়। গারগাশ তুরস্কের ‘সাম্রাজ্যবাদী লোভ’ আর ‘আরবদের ব্যাপার’ নিয়ে মাথা ঘামানোর সমালোচনা করেছেন। ইসরাইল ও আমিরাত, মিসর, গ্রিস, সৌদি আরব ও ফ্রান্সকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের জন্য বিপদ দাঁড়িয়েছে। তুরস্ক বলেছে, তাদের সামরিক শক্তি এই সম্মিলিত বাহিনীকে মোকাবেলা করতে সক্ষম।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার