আমিরাতের নতুন টার্গেট সুদান!
আমিরাতের নতুন টার্গেট সুদান! - ছবি : সংগৃহীত
এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন ক্ষেত্র হলো সুদান। কূটনৈতিক বলয় থেকে শোনা যাচ্ছে মিসর ও সুদানের মধ্যে ‘ঝামেলা’ মিটিয়ে দিতে আমিরাত কাজ করছে। দক্ষিণ সুদান আলাদা দেশ হওয়ার পর তেল খাতের রাজস্ব হারিয়েছে মূল সুদান। যুক্তরাষ্ট্র আমিরাতের সহায়তায় সুদানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে পারে। ‘টাকা দাও জিতে নাও’ নীতি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। সেটি এখন আফ্রিকাতেও ভালো কাজ করছে। ইসরাইল যেখানে কাজ করতে পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছে না, সেখানে আমিরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যার বোঝা ঢেলে দিচ্ছে আফ্রিকায়। এ মহাদেশে তুরস্কের মানবিক কর্মসূচি এবং চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রুখে দেয়ার মতো কোনো সফট বা হার্ড পলিসি আমিরাত-ইসরাইলের নেই।
আফ্রিকায় তুরস্ক-চীনের অ্যাজেন্ডা আমিরাত-ইসরাইলের কাজে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করে আমিরাতের জন্য একসময় বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফারমাজো তুরস্ক ও কাতারের সাথে বন্ধন ছিন্ন করতে নারাজ। তাই ওদেরকে আমিরাতের ‘লাইনে’ আনার প্রচেষ্টা যেকোনো সময় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সোমালিয়া ইথিওপিয়ার অধীনে ছিল ৪০ বছর। এখন সেটি মিটমাট করে মোগাদিসু বিমানবন্দর খুলে দেয়া হয়েছে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল করছে, গত ৪০ বছরে এই প্রথমবার। সমালোচকরা বলছেন, আফ্রিকায় বাণিজ্য করা আমিরাতের প্রথম উদ্দেশ্য। দুবাইয়ের মাধ্যমে অনেক আফ্রিকান দেশ বিশ্ব বাণিজ্যে অংশ নিয়ে থাকে। ইথিওপিয়া কম ট্যাক্সে দুবাই থেকে আমদানি করে, আমিরাত এই দেশটিকে হারাতে চায় না। কিন্তু তুরস্ক আমিরাতের এই বাণিজ্যে একটি বড় বাধা। তুরস্কের উন্নতমানের প্রডাক্ট আমিরাতের ঘুম নষ্ট করে দিয়েছে। আমিরাতের মিডিয়ার চেয়ে তুর্কি টেলিভিশন ও সিরিয়াল ঝড়ের গতিতে আফ্রিকায় ঢুকছে। আফ্রিকানরা এখন দুবাইয়ের পরিবর্তে ইস্তাম্বুল, বুশরা, কাপাদোসিয়া ও আনাতোলিয়ায় যাচ্ছে। তুর্কি মিডিয়া এই পর্যটন লালন করছে বলে তুর্কিদের অভিমত।
আগামীতে তুর্কি ড্রামা ও সিরিয়ালকে আমিরাতের অতিক্রম করার কোনো যোগ্যতা নেই। তবে পরিচালক-প্রযোজকসহ হলিউড কিনতে পারলে হয়তো বা ‘কিছু হবে’। আসলেই তা কি কখনো সম্ভব? চীনও ঢুকে পড়েছে আফ্রিকায়। চীনের কর্মসূচি বৃহৎ শক্তিগুলোর চেয়ে আলাদা হওয়ায় আমিরাত-ইসরাইল জোট তেমন সুবিধা করতে পারছে না। এ দিকে ইরানও উপসাগরীয় ও পূর্ব আফ্রিকায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমিরাত জোট সেটি বন্ধ করতে চায়। ইরান অনেক আগে থেকেই ‘শিয়া মতবাদ’ ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করছে, বিশেষ করে কেনিয়া ও তানজানিয়ায়। অনেক স্থানে সৌদি আরবের ‘ওয়াহাবিজম’ পেরে উঠছে না।
আন্তর্জাতিক পণ্ডিতরা মনে করছেন, আসলে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল-আমিরাত ইরানকে সাইজ করার সাথে সাথে তুরস্ককে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে শাণ দিচ্ছে। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, এই চুক্তি শুধু ইরানের প্রতি মেসেজ নয়। গারগাশ তুরস্কের ‘সাম্রাজ্যবাদী লোভ’ আর ‘আরবদের ব্যাপার’ নিয়ে মাথা ঘামানোর সমালোচনা করেছেন। ইসরাইল ও আমিরাত, মিসর, গ্রিস, সৌদি আরব ও ফ্রান্সকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের জন্য বিপদ দাঁড়িয়েছে। তুরস্ক বলেছে, তাদের সামরিক শক্তি এই সম্মিলিত বাহিনীকে মোকাবেলা করতে সক্ষম।